আশরাফ চৌধুরী রাজু, সিলেট: সিলেটে রাগীব আলী ও তার ছেলের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে। গতকাল সিলেটের মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে এক সঙ্গে দুটি মামলার বিচার শুরু হয়। গতকাল সকালে প্রতারণা ও জালিয়াতি এবং স্বাক্ষর জালিয়াতি এ দুটি মামলায় আদালতে হাজির করা হয় সিলেটের ধর্নাঢ্য রাগীব আলী ও তার ছেলে আব্দুল হাইকে। কড়া নিরাপত্তায় তাদের আদালতে তোলা হয়। এর মধ্যে প্রতারণা ও জালিয়াতি মামলায় তাদের উপস্থিতিতেই চার্জ গঠনের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। আদালতে রাগীব আলীর পক্ষের আইনজীবীরা এ মামলায় অব্যাহতি চেয়ে রাগীব আলী ও তার ছেলে আব্দুল হাইর পক্ষে আবেদন করেন। শুনানি পর তাদের আবেদন খারিজ করে দিয়ে চার্জ গঠনের মাধ্যমে মামলার বিচার শুরু করা হয়। এদিকে, স্বাক্ষর জালিয়াতির ঘটনায় দায়ের করা মামলা আগেই নেওয়া হয়েছিল ১৪ আসামির মধ্যে ৬ জনের সাক্ষ্য। কিন্তু ওই সময় আদালতে উপস্থিত না থাকায় রাগীব আলীর পুত্র আব্দুল হাইয়ের আইনজীবীরা তাদের উপস্থিতিতে সাক্ষীদের জেরার জন্য ১৫ নভেম্বর আবেদন করেন। আদালত তার এই আবেদন আমলে নিয়ে গতকাল সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করেছিলেন। ফলে রাগীব আলী ও তার ছেলে আব্দুল হাইয়ের উপস্থিতিতে আদালতে ৬ সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। একই সঙ্গে আদালতে মামলার অন্যতম সাক্ষী সিনিয়র সহকারী সচিব এমদাদুল হক ও তৎকালীন জেলা প্রশাসক ফয়সল আলমের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়।
এদিকে, সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে রাগীব আলীসহ অন্য আসামিদের সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। আদালত থেকে বেরিয়ে এসে সিলেটের অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট মাহফুজুর রহমান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, দুটি মামলায়ই রাগীব আলীর বিরুদ্ধে বিচার শুরু হয়েছে। এর মধ্যে একটি মামলায় ১৪ জনের মধ্যে ১১ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। এতে করে আদালতে ন্যায় বিচার পাওয়া যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। গত ১০ জুলাই আদালতে দুটি মামলার অভিযোগপত্র দেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সারোয়ার জাহান। গত ১০ আগস্ট তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে আদালত। ওইদিনই বিকালে পরিবার নিয়ে ভারত পালিয়ে যান রাগীব আলী। পরে ২৪ নভেম্বর ভারতে গ্রেফতারের পর রাগীব আলীকে দেশে এনে কারাগারে পাঠানো হয়। এছাড়া ১২ নভেম্বর ভারত থেকে বাংলাদেশে ফেরার পথে রাগীব আলীর ছেলে আব্দুল হাইকে গ্রেফতার করে জকিগঞ্জ ইমিগ্রেশন পুলিশ। ৪২২ দশমিক ৯৬ একর জায়গায় গড়ে ওঠা তারাপুর চা-বাগান পুরোটাই দেবোত্তর সম্পত্তি। ১৯৯০ সালে ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্মারক জালিয়াতি ও ভুয়া সেবায়েত সাজিয়ে বাগানটির দখল নেন রাগীব আলী। গত ১৯ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে হাইকোর্টের আপিল বিভাগের এক বেঞ্চ তারাপুর চা-বাগান দখল করে গড়ে ওঠা সব স্থাপনা ছয় মাসের মধ্যে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেন। রায় বাস্তবায়ন করতে সিলেটের জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়। ১৫ মে চা-বাগানের বিভিন্ন স্থাপনা ছাড়া ৩২৩ একর ভূমি সেবায়েত পঙ্কজ কুমার গুপ্তকে বুঝিয়ে দেয় জেলা প্রশাসন। সম্পাদনা: সুমন ইসলাম