ঢামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অদূরদর্শীতা কোনো কাজে আসছে না ৫০ লাখ টাকার লিংক করিডোর
রিকু আমির: ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের একটি লিংক করিডোর অচল হয়ে পড়ে আছে। অভিযোগ আছে- ঢামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অদূরদর্শীতার কারণেই প্রায় ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে রোগী পরিবহনের সুবিধায় নির্মিত লিংক করিডোরটি ফেলনা বস্তুতে পরিণত হয়েছে। সরেজমিনে দেখা যায়, বার্ন ইউনিটের তৃতীয় তলা থেকে ঢামেক হাসপাতালের মূল ভবনের তৃতীয় তলা পর্যন্ত সংযোগ স্থাপন করা হয়েছিল এ করিডোরের মাধ্যমে। বর্তমানে বার্ন ইউনিটের অংশে থাকা লিংক করিডোরের একটি পথে থাকা কলাপসিবল গেট তালাবদ্ধ। দ্বিতীয় পথ, ঢামেক অপারেশন কমপ্লেক্সে গিয়ে মিশেছে, যা বর্তমানে পুরু দেওয়াল-জানালা দেওয়ায় স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে পড়েছে। রোগীর চিকিৎসার সুবিধার্থে ১৪ জোড়া পিলার, দামি ছাউনি দিয়ে পাকা করে আনুমানিক ছয় বছর বয়সী নির্মিত এ করিডোরের বার্ন ইউনিটের কলাপসিবল গেটের অংশে কিছু পরিত্যক্ত আসবাবপত্র রাখা দেখা গেছে। ঢামেকের মূল ভবন থেকে বার্ন ইউনিটে কৃত্রিম অক্সিজেনের সংযোগের ভারও বইছে এটি। জায়গা দখলের সঙ্গে ওইসব বিষয় ছাড়া আর কোনো কাজে আসছে না লিংক করিডরটি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঢামেক হাসপাতালের সাবেক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শহীদুল হক মল্লিকের আমলে (২০১০ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১২ সালের ১০ জানুয়ারি) এটি নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয় বার্ন ইউনিটের তৎকালীন সমন্বয়কারী অধ্যাপক ডা. সামন্ত লাল সেনের পরামর্শে। ঢামেক মূলভবনের যে অংশে পুরু পাকা দেওয়াল-জানালা দিয়ে পথ বন্ধ, নির্মাণের সময় সে অংশ ছিল ফাঁকা সরুপথ। এ পথের দুপাশে ছিল অপারেশন থিয়েটার। এ করিডোর ও অপারেশন থিয়েটারের জন্য এখানে লিফট বসানোর পরিকল্পনা ছিল। শহীদুল হক মল্লিকের পর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোস্তাফিজুর রহমানের আমলে অপারেশনের পরিসর বৃদ্ধি করা হয়। এখানে নির্মাণ করা হয় অপারেশন থিয়েটার কমপ্লেক্স। করিডোর চালু থাকলে কমপ্লেক্সের ভিতর দিয়েই বার্ন ইউনিটের রোগীদের চলাচল করতে হবে বলে তখন থেকেই প্রাণ হারায় এ করিডোর। এরপর আর কোনো উদ্যোগও নেয়া হয়নি এটি চালুর।
সূত্র জানায়, প্রথমে প্রস্তাবনা ছিল- করিডোরটি দোতলা সমান উঁচু করার। কিন্তু কেউ কেউ এর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বলেছিলেন- দোতলা সমান হলে বেশি নিচু হয়ে যাবে, এতে করে কোনো অতিগুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে এখানে কোনো উঁচু পরিবহন চলাফেরায় বাধাগ্রস্ত হবে। এর ভিত্তিতেই তৃতীয় তলা বরাবর নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছক গণপূর্ত অধিদফতরের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র রোববার দৈনিক আমাদের অর্থনীতিকে জানান, অচল লিংক করিডোরসহ ঢামেকের একটি লিংক করিডোরসহ আরও একটি করিডোর স্থাপনাসহ খরচ করা হয়েছে আড়াই কোটি টাকারও বেশি। পাকাপাকি হিসাব নয়, ধারণা করে তিনি বলেন, অচল করিডোরটি নির্মাণে খরচ হয়েছিল প্রায় ৫০ লাখ টাকা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের কয়েকজন কর্মকর্তার যুক্তি- যেহেতু লিংক করিডোরটি বানানো হয়েই গিয়েছিল অপারেশন থিয়েটার কমপ্লেক্সের পরিসর বৃদ্ধির আগে, সেহেতু সে অনুযায়ীই অপারেশন থিয়েটার কমপ্লেক্স নির্মাণ করা যেতে পারত। অথবা হাসপাতালের মূল ভবনের যে অংশে লিংক করিডোর যুক্ত করা হয়েছে, নির্মাণের সময়ই সে অংশ অন্যদিকে যুক্ত করা উচিৎ ছিল। হাসপাতাল প্রশাসনের অদূরদর্শীতাই এটি অচলের জন্য দায়ী।
অধ্যাপক ডা. সামন্ত লাল সেন রোববার সকালে দৈনিক আমাদের অর্থনীতিকে বলেন, জটিল পোড়া রোগীদের ক্ষেত্রে অনেক সময় গাইনি, অর্থ্রােপেডিক্স, চক্ষু, নিউরো সার্জারিসহ বিভিন্ন বিভাগের শরণাপন্ন হতে হয় যখন তখন। তাছাড়া বার্ন ইউনিটের রোগীদের খাবার-দাবার পরিচ্ছন্ন পরিবেশ দিয়ে পরিবহনের প্রয়োজনীয়তাও ছিল। এসব কারণেই বার্ন ইউনিট থেকে এ করিডোর নির্মাণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল।
ঢামেক হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. খাজা আবদুল গফুর রোববার বিকালে দৈনিক আমাদের অর্থনীতিকে বলেন, অনেক কিছুই সময়ের প্রয়োজনে করা হয়, প্রয়োজন ফুরালে সেটার কোনো মূল্য থাকে না। সেসময় এটা দরকার ছিল বলেই করা হয়েছিল। এটা চালু থাকলে তো ওটি কমপ্লেক্সের ভিতর দিয়ে যাতায়াতের পথ তৈরি করে দেওয়া হবে। এটা তো কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
লিংক করিডোর কাজে লাগানোর বিষয়ে বর্তমানে শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের উপদেষ্টার দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক ডা. সামন্ত লাল সেনের পরামর্শে- এটার যে অংশ হাসপাতালের মূল ভবনে গিয়ে মিশেছে, সে অংশ ডাইভারশন করলেই ব্যবহার উপযুক্ত হয়ে উঠবে। তবে সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) খাজা আবদুল গফুর বলেন, এটার যে পজিশন, তাতে করে কাজে লাগানো যাবে না। তার যুক্তি- আগে ক্রমবর্ধমান রোগীদের অপারেশনের চাহিদা পূরণ, তারপর লিংক করিডোর। সম্পাদনা: সুমন ইসলাম