প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানে ত্রুটির তদন্ত রিপোর্ট নিয়ে মুখ খুলতে চাইছেন না কেউ
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী: বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের রাঙ্গা প্রভাত উড়োজাহাজে ত্রুটি সংক্রান্ত তদন্ত রিপোর্ট জমা হয়েছে। ওই রিপোর্টের ব্যাপারে বিমানের ও মন্ত্রণালয়ের কাউকে গণমাধ্যমে কথা না বলার জন্য বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে এই তদন্ত রিপোর্ট নিয়ে নানামুখী কথাও আসছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট কেউ কেউ এবং জিজ্ঞাসাবাদেও সংশ্লিষ্টরা তদন্ত কমিটিকে জানিয়েছেন একটি নাট ঢিলে হলেও উড়োজাহাজ চালিয়ে নিতে কোনো সমস্যা হতো না। অন্য একটি ইঞ্জিন দিয়েও চালিয়ে গন্তব্যে যাওয়া সম্ভব ছিলো।
তদন্তে জানা গেছে, উড়োজাহাজে ইঞ্জিন অয়েলের ওখানে দুটি পাইপ থাকে। এর একটি কালো ও একটি লাল। লাল পাইপটিতে ত্রুটি ধরা পড়ে। সেখানে নাট ঢিলা ছিলো। ওই উড়োজাহাজের অয়েল সেন্সর লাইনে কাজ করা হয়েছিলো কয়েকদিন আগে। তবে ওই কাজ করার পর সেটি যথাযথভাবে পরীক্ষা করে ফেরত নেওয়া হয়েছিলো কিনা তার রিপোর্ট খতিয়ে দেখা হবে। সূত্র জানায়, প্রশ্ন উঠেছে যাদের দায়িত্ব ছিলো ওই উড়োজাহাজের সবকিছু পরীক্ষা করে সেটি ফ্লিটে দেওয়া। কিন্তু সেই পরীক্ষা করা যথাযথ হয়নি। যদি হতো তাহলে এমনটি হতো না। কিন্তু পরীক্ষা হয়েছে বলে দায়িত্ব পালনকারীরা বলেছেন তারা সব চেক করেছেন। পরীক্ষার সময় কোনো ত্রুটি ছিলো না। তদন্ত কমিটি বের করার চেষ্টা করছেন, কেন তারা এমনটি বলছেন। তারা কি দায়িত্বে গাফলতির বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চাইছেন। তাদের কারণে ত্রুটি না হলে পরে কি কেউ এটা করে থাকতে পারে? সেই ক্ষেত্রে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে একটি উড়োজাহাজ ফিট বলে ক্লিয়ারেন্স দেওয়ার পর সেখানে কে বা কারা গিয়েছিলো, যারা ওই উড়োজাহাজের নাট ঢিলে করেছে। আর সেটা করে থাকলে কারো চোখে ধরা পড়লো না।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মানবসৃষ্ট অথবা হিউম্যান এরর এর কারণে এই ঘটনা ঘটেছে। এই পর্যন্ত যতখানি তদন্ত হয়েছে সেখানে মানুষের সৃষ্ট সমস্যা বলে দাবি করা হয়েছে। আর ওই ত্রুটি বড় ধরনের ত্রুটি নয় সেটাও বলা হয়েছে বলে জানা গেছে। এটা আরও বলা হয়েছে, মূলত রক্ষণাবেক্ষণ এবং যাদের দায়িত্ব ছিলো ওই উড়োজাহজটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা তাদেরও গাফলতি রয়েছে।
সূত্র জানায়, রাঙ্গা প্রভাতে বড় ধরনের ত্রুটি ছিলো না। এই কারণে বড় ধরনের যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়নি। তবে যতটুকু হয়েছে সেটাও মানুষের তৈরি। আপনা আপনি হয়নি। ঘটনার সময় উড়োজাহাজে জ্বালানি সংকট ছিলো না বা জ্বালানির কারণে সমস্যা হয়নি। এই সমস্যা হয়েছিলো মূলত ইঞ্জিন অয়েল বা লুব্রিক্যান্টের ট্যাংকের নাট ঢিলা হয়ে গিয়েছিল। সেখানে একটি নাট ঢিলে ছিলো। ওই নাটটি পরে টাইট দেওয়া হয়েছে। তা টাইট দেওয়ার পর ত্রুটি সারানো সম্ভব হয়। ওই উড়োজাহাজে কয়েদিন আগে কাজ করা হয়েছিলো। তখন ইঞ্জিন অয়েলের ট্যাংকের পাশের অয়েল-অয়েল হিট এক্সচেঞ্জার যাকে বলা হয় অয়েল প্রেসার সেন্সর। সেখানে কাজ করা হয়েছিলো।
সূত্র জানায়, একজন পাইলট তদন্ত কমিটিকে বলেছেন, বিমানে যে ত্রুটি দেখা দিয়েছিলো সেটা বেশি বড় নয়। ত্রুটিটা ছোট। উড়োজাহাজে ত্রুটি দেখা দেওয়ার পর বিষয়টি প্রধানকে জানানো হয়। তার কাছে উড়োজাহাজটি জরুরি অবতরণ করে মেরামতের জন্য বলা হয়। ওই সময়ে সেটি আশখাবাতে ত্রুটি সারানো হয়।
সূত্র জানায়, তিনটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। ওই কমিটির যাদেরকে প্রধান করা হয়েছে তারা অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয় হওয়ার কারণে এনিয়ে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত মুখ খুলতে চাইছেন না।
তদন্ত কমিটি স্পষ্ট করে বলেনি, কেন এটা করা হয়েছে। কারা করেছে। সেখানে ইচ্ছায় কিংবা অনিচছায় কেউ করতে পারে এমনও কথা বলা হয়েছে। আবার এমনও বলা হয়েছে প্রয়োজনে কিংবা অপ্রয়োজনেও সেটা করা হয়ে থাকতে পারে। কিন্তু ওই কাজটি যখনই হয়েছে এরপর যাদের দায়িত্ব ছিলো তারা হয়তো সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেনি। কারণ ওই সময়ে তারা বিষয়টি দেখলে এই ধরনের সমস্যা নাও হতে পারতো। কিন্তু যাদের ওই উড়োজাহাজটির পূর্ণাঙ্গ ফিট বলে বুঝে নেওয়ার পর তা পরীক্ষা না হওয়ার কারণেও সমস্যা হতে পারে।
তদন্ত কমিটি জানতে পেরেছে যে, ওই উড়োজাহাজে নাটটি আগেই ঢিলে হতে পারে। কিন্তু একটি নাট ঠিক করার পর যে উড়োজাহাজটি ঠিক করা হলো তাহলে ওই উড়োজাহাজটি তুর্কমেনিস্তানের আশখাবাতে অবতরণ করে।
এদিকে, প্রধানমন্ত্রীর বিমানের ত্রুটি বিষয়ে তার নিরাপত্তা সংশ্লিষ্টরাও খতিয়ে দেখছেন। কি হয়েছিলো। যদিও বিমান মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেছেন, সংশ্লিষ্ট কয়েকজনের দায়িত্বে গাফলতি হয়েছে। এই জন্য ছয়জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, বিমানের ত্রুটির তদন্ত কমিটির রিপোর্ট জমা হলেও ওই রিপোর্টের ব্যাপারে খুব বেশি জানাজানি হোক তা চাইছে না। কারণ বিমানের বহরে নতুন উড়োজাহাজ এসেছে। ওই উড়োজাহাজ যোগ হওয়ার পর বিমানের সিডিউল বিপর্যয় অনেকটা কমে গেছে। এখন নতুন উড়োজাহাজ বিমানে যোগ হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানে ত্রুটি ধরা পড়েছে এই ধরনের খবরে বিমানের ইমেজ নষ্ট হতে পারে এবং যাত্রীও হঠাৎ করেই কমে যেতে পারে।
প্রধানমন্ত্রীও বিমানের স্বার্থের বিষয়টি দেখছেন। এটা একটা যান্ত্রিক দুর্যোগ ছিল, আর কিছু না বলেছেন। আরও বলেছেন, তবে অ্যাক্সিডেন্ট যান্ত্রিক ত্রুটিতেও হতে পারে, আবার মনুষ্যসৃষ্ট কারণেও হতে পারে। তবে আগামী দিনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বহরের যারা দায়িত্বে আছেন তারা আরও সতর্কতা অবলম্বন করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছেন।
সূত্র জানায়, বিমানের ত্রুটির বিষয়ে সন্দেহের তীর বিমানের প্রশাসন ও অনেকের দিকেই রয়েছে। এই পর্যায়ে তদন্ত রিপোর্ট জমা হলেও এর বিভিন্ন দিক নিয়ে এখনও চলছে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ।