উম্মুল ওয়ারা সুইটি: অপরাধী বুক চিতিয়ে ঘুরে বেড়ায়। আর নির্যাতিত হওয়ার পর সেই মেয়েটি হয়ে যায় একদম একা। যেন এক ভিন গ্রহের মানুষ। প্রথমে সে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়, তারপর পরিবারের কাছ থেকে।
এভাবে নির্যাতিত মেয়ে যখন পরিবারের গলগ্রহ হয়ে পড়ে তখন সবচেয়ে কাছের যে বাবা-মা তারাও যেন অচেনা মানুষ হয়ে যান। অন্য সন্তানদের কথা বিবেচনা করে নির্যাতিত মেয়েটিকে দূরে ঠেলে দেন। আত্মহত্যা করতেই যেন সব ইঙ্গিত দেন।
এভাবেই বাবা-মার পর হয়ে যাওয়ার কথা জানালেন সীতাকু-ের আলী আজমের ১৯ বছরের মেয়ে জান্নাতুল ফেরদাউস। এখন থেকে ৪ বছর আগে পাশের বাড়ির চাচা সম্পর্কের একজনের যৌন হয়রানির শিকার হন। তখন জান্নাতের বয়স ছিল ১৫ বছর। স্থানীয় একটি মাদ্রায় পড়তো ক্লাস সেভেনে। চাচি তার বাপের বাড়ি বেড়াতে যান। আর তখন একদিন চাচা জান্নাতকে বলেন, তোর চাচি তো নাই আমারে একটু তরকারি রান্না করে দে। নিজের বাবার মতোই দেখতো সেই চাচার ঘরে যায় মাকে বলে।
কিন্তু ওই চাচার উদ্দেশ্য খারাপ ছিল। জান্নাত তার ঘরে ঢুকলে চাচা দরজা বন্ধ করে তাকে খারাপ প্রস্তাব দেয়। জান্নাত বিরোধিতা করে এবং দরজা খুলে বেরিয়ে যেতে চায়। এসময় চাচা জোর করে। বিষয়টি ধস্তাধস্তির পর্যায়ে যায়। এক সময় জান্নাত চিৎকার করবে বলে হুমকি দেয়। তখন ওই চাচা দরজা খুলে দেয়। যদিও ততক্ষণে হিশপিশ শব্দে আরও কয়েকজন বিষয়টি জানতে পারে। জান্নাত ওই ঘর থেকে দৌড়ে বেরিয়ে আসে। পাড়ার লোকজন জড়ো হয়ে সালিস বসায়।
সবাই বুঝতে পারে এ ঘটনার জন্য জান্নাত মোটেও দায়ী নয়। কিন্তু সবার প্রশ্নÑ মেয়েটি কেন ওই ঘরের ভেতর থাকা অবস্থায় চিৎকার করেনি। আর ওই চাচা বলেন, জান্নাতই তাকে উল্টো খারাপ কিছুর প্রতি ইঙ্গিত করে।
এভাবেই ঘটনাটি নিয়ে সামাজিক অস্থিরতায় ভুগতে থাকে জান্নাত। মাদ্রাসায় যাওয়া বন্ধ হয়। তারপর ঘরবন্দি। একসময় বাবা-মাও ঘটনার জন্য মেয়েকে দায়ী করতে থাকেন। একবছর পর বিষয়টি এমন হয়- যেন সব দোষ মেয়েটির। তার কারণে তার বড় দুই বোনের বিয়ে হচ্ছে না। মা বলেন, তুই মরে গেলেও আমাদের আজ এ অবস্থায় পড়তে হতো না। এভাবে দিনের পর দিন পরিবার থেকে তাকে অপমানজনক কথা বলতে থাকে।
গত রোববার খিলগাঁও রেলগেইটে দেখা হয় জান্নাতের সঙ্গে। ঢাকায় তিনি বাসাবাড়িতে কাজ করেন। জানালেন, নিজের জীবনের কথা। থাকেন মেরাইদ্যা। তার জীবনে এখন কোনো আপনজন বলে কেউ নেই। সম্পাদনা: সুমন ইসলাম