গণরায় মেনে নেবেন আইভী, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চান সাখাওয়াত
হাসান আরিফ, নারায়ণগঞ্জ থেকে ফিরে: নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (এনসিসি) নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দের প্রথম দিনেই মিছিলের নগরীতে পরিণত হয়েছে প্রাচ্যের ডান্ডিখ্যাত নারায়ণগঞ্জ। কাউন্সিলররা ছোট ছোট মিছিল নিয়ে নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। প্রতীক পেয়েই আওয়ামী লীগ প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী মিছিল করেছেন। আর বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান দলীয় কার্যালয়ে দলীয় নেতাদের করণীয় বুঝিয়ে দিয়েছেন। তবে মিছিলের কারণে শহরে ব্যাপক যানজট দেখা দিয়েছিল। এতে নগরবাসী কিছুটা ভোগান্তিতে পড়েছিল।
এদিকে প্রতীক বরাদ্দের সময় সাখাওয়াত হোসেন খানের সঙ্গে দলীয় নেতা-কর্মীরা থাকলেও, সেলিনা হায়াৎ আইভীর সঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগ আর যুবলীগের সভাপতি ছাড়া অন্যকোন নেতা-কর্মীরা ছিল না। এমন কি শামীম ওসমানের কোনো কর্মীকেও দেখা যায়নি আইভীর সঙ্গে।
এদিকে নির্বাচনে দলীয় প্রতীক নৌকা হাতে পেয়ে প্রতীক বরাদ্দ পাবার পর সেলিনা হায়াৎ আইভী মিছিল সহকারে মাসদাইর পর্যন্ত যান। এসময় আইভী প্রতীকসহ খোলা গাড়িতে ছিলেন। মিছিল শেষে নগরীর মাসদাইরে শায়িত বাবা প্রয়াত পৌর পিতা আলী আহাম্মদ চুনকা এবং স্বাধীনতা পদক প্রাপ্ত সামসুজ্জোহার কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। সেখানে ফাতেহা পাঠ করেন।
আওয়ামী লীগ প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেছেন, যিনি আমার হাতে নৌকা প্রতীক তুলে দিয়েছেন তিনি নারায়ণগঞ্জবাসীর হৃদয়ের স্পন্দন শুনতে পেরেছিলেন। তাই তিনি এই প্রতীক আমার হাতে তুলে দিয়েছেন। এজন্য আল্লাহর দরবারে, প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার কাছে নিজের পক্ষ থেকে নারায়ণগঞ্জবাসীর পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। নারায়ণগঞ্জের মানুষ দলমত নির্বিশেষে সবাই মিলে নৌকা প্রতীককে জয়যুক্ত করে নারায়ণগঞ্জের উন্নয়নে আমাকে পুনরায় সুযোগ দেবে।
তিনি আরও বলেন, নারায়ণগঞ্জবাসীর জন্যই নৌকা প্রতীক আজ আমার হাতে। শুধু নারায়ণগঞ্জবাসীই নয়, সারা বাংলাদেশের মানুষ আজ আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। আমি নৌকার জন্য নারায়ণগঞ্জবাসীর জন্য সর্বোপরি আমার জন্য সবার কাছে দোয়া চাই।
প্রতীক বরাদ্দ নেওয়ার সময় তার সঙ্গে ছিলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাই, ব্যবসায়ী আবদুর রাশেদ রাশু, আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলম, জেলা যুবলীগের সভাপতি আবদুল কাদির এবং প্রবীণ আইনজীবী আসাদুজ্জামান। তবে গতকালও মহানগর আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকে তার সঙ্গে প্রতীক বরাদ্দ আনার সময় দেখা যায়নি।
এ নির্বাচনে ভোটারদের কাছে কি সেøøাগান নিয়ে যাবেন এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আইভী বলেন ‘নয় শঙ্কা, নয় ভয়, শহর হবে শান্তিময়’ এই সেøøাগান নিয়ে ভোটারদের কাছে যাবেন। নারায়ণগঞ্জকে শান্তিময় করে তুলতে নারায়ণগঞ্জবাসীকে তিনি নৌকা প্রতীকে তাকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি ভোটারদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা সমবেত হোন, নৌকায় উঠুন এবং সেøøাগান তুলুন-নারায়ণগঞ্জে সন্ত্রাসীদের কোনো স্থান নেই।
নির্বাচনে আপনার ব্যক্তি ইমেজ প্রধান হবে, নাকি নৌকার জনপ্রিয়তা কাজে লাগবে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আইভী বলেন, আমি কি নৌকার বাইরে? এখানে ব্যক্তি ইমেজের প্রশ্ন আসছে কেন? ব্যক্তিটা কে, ব্যক্তিটা কি নৌকার বাইরে। আইভী নৌকার বাইরে নয়, নৌকাও আইভীর বাইরে নয়। জনগণ, নৌকা এবং আইভী কেউ কারো থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। কোনো দিন ছিলও না।
নৌকার প্রার্থী হিসেবে ভোট প্রভাবিত করার চেষ্টা করবেন কি, গণরায় মেনে নেবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে আইভী বলেন, অবশ্যই গণরায় মেনে নেব। গণরায় যেটাই হয় মেনে নেব।
তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনের মধ্যে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জেই প্রথম দলীয় প্রতীকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। স্থানীয় নির্বাচন আর দলীয় নির্বাচন এক নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ব্যক্তি ইমেজ একটি বড় বিষয়। এখানে কোনো পরিবর্তন মানে জাতীয় পর্যায়ে কোনো পরিবর্তন নয়। এখানের ফলাফলে ক্ষমতার পরিবর্তন হবে না, ব্যক্তির পরিবর্তন হবে। তাই প্রতীক এখানে কোনো প্রভাব ফেলবে না। জাতীয় রাজনীতির কোনো প্রভাব এখানে পড়বে না বলেই মনে করেন আওয়ামী লীগের এই প্রার্থী।
তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ২২ ডিসেম্বরের নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জের আপামর জনসাধারণ দলের নেতা-কর্মী এবং দলের বাইরের সবাই তাকে ভোট দেবেন।
তিনি দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে ঐক্যের ডাক দিয়ে বলেন, আসুন একসঙ্গে কাজ করে নৌকাকে জয়যুক্ত করি।
বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান দলীয় প্রতীক হাতে পেয়ে বলেছেন, নারায়ণগঞ্জে অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে গণমাধ্যমের সহযোগিতা কামনা করি। কারণ গণমাধ্যম এতটাই শক্তিশালী যে, নিরাপত্তা বাহিনীর চেয়েও বড় নিরাপত্তা বাহিনী হলো বাংলাদেশের মিডিয়া। গণমাধ্যম কর্মীরা যদি যথাযথ ভূমিকা রাখেন তাহলে সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার নিশ্চিত হবে এই নির্বাচনে।
সাখাওয়াত বলেন, এ নির্বাচনের ফলাফলে সরকার বা ক্ষমতার পরিবর্তন হবে না। তবে জনগণের ভোটের যে গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করা হয়েছে তা পুনরুদ্ধারের জন্য আমরা নির্বাচনে নেমেছি। জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতেই আমরা কার্যক্রম চালাবো। নির্বাচনকে সামনে রেখে ধানের শীষের প্রতি গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। যেখানেই যাচ্ছি মানুষ একটি কথাই বলছে সেটি হলো-আমরা ভোট কেন্দ্রে যেতে পারবো তো, নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবো তো?
সাখাওয়াত বলেন, ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে মানুষ আজ জাগ্রত হয়েছে। যদি সাধারণ ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে গিয়ে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার সুযোগ পায় তাহলে আমরা অবশ্যই জয়ী হবো। কারণ মানুষ পরিবর্তনের পক্ষে।
নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে কী প্রত্যাশা করেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি আগেও বলেছি, এখনও বলছি আমি একটি লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড চাই। কিন্তু সেই ফিল্ড আমি এখনও পাইনি। তবে আমরা সরকার ও নির্বাচন কমিশনের উপর আস্থা রাখতে চাই। এজন্য যা যা করার তা সরকার এবং নির্বাচন কমিশন করবে বলে আশা করছি। আমরা বিশ্বাস করি সরকার এবং নির্বাচন কমিশন এই নির্বাচনের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার, ভোটের অধিকারটি ফিরিয়ে দেবে।
তিনি বলেন, আপনারা দেখছেন সরকার দলীয় প্রার্থীর পক্ষে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মিছিল নিয়ে প্রতীক নিতে এসেছে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী হিসেবে তারা এটি পারেন না। এটি নির্বাচন আচরণ বিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। তারপরেও নির্বাচন কমিশন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
এসব ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনে কোনো অভিযোগ করেছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে সাখাওয়াত বলেন, আমি যদি এত অভিযোগ করি তাহলে তা আমাকেই প্রমাণ করতে হবে। তাহলে আমি ভোটারদের কাছে যাব কখন? গত ৫-৭ দিন যাবৎই সরকার দলীয় প্রার্থী নির্বাচন আচরণ বিধির তোয়াক্কাই করছেন না। অথচ এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে সব মেয়র প্রার্থীকে আচরণ বিধি মেনে চলতে একই রকম চিঠি দিয়েছেন। তবে আমরা নির্বাচন কমিশনকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে চাই কোথায় কিভাবে আচরণ বিধি লঙ্ঘিত হয়েছে।
প্রতীক নেওয়ার সময় সাখাওয়াত হোসেন খানের সঙ্গে ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক সাংসদ অ্যাডভোকেট আবুল কালাম, ৪ আসনের সাবেক সাংসদ মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, নগর বিএনপির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম, সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামাল, বিএনপি নেতা নুরুল ইসলাম সরদার, অধ্যাপক মনির হোসেন, আবদুল হাই রাজু, আবু আল ইউসুফ খান টিপু প্রমুখ। সম্পাদন: সুমন ইসলাম