অর্ধযুগে সবচেয়ে কম রেমিট্যান্স নভেম্বরে
শারমিন আজাদ: ২০১১ সালের নভেম্বরে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ৯০ কোটি ৮৮ লাখ মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছিলেন। এর ঠিক ছয় বছর পর এবছর নভেম্বর মাসে প্রবাসী আয় এসেছে ৯৫ কোটি ১৪ লাখ ডলার। গত ছয় বছরের মধ্যে কোনো একক মাসে প্রবাসী আয়ের এটাই সর্বনিম্ন রেকর্ড। বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগের প্রতিবেদনে দেখা যায় ২০১০-১১ অর্থবছরে প্রবাসী আয় এসেছিলো ১ হাজার ৪৯৩ কোটি ডলার। ছয় বছরে অর্থাৎ ২০১৫-১৬ অর্থবছরে রেমিট্যান্স আসে ১ হাজার ৪৯৩ কোটি ডলার। সে হিসাবে ছয় বছরে রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধি হয় ৩২৮ কোটি ডলার বা ২৮ শতাংশ। এ অর্থবছরে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে গিয়েছিলো। অন্যদিকে, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছিল ১ হাজার ৫৩২ কোটি ডলার। অর্থাৎ চার বছরে প্রবাসী আয় বেড়েছে প্রায় ৩২ শতাংশ।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, প্রতি অর্থবছরে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়লেও গত অর্থবছরে এসে আড়াই শতাংশ কমে যায়। যা চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরেও অব্যাহত রয়েছে। অর্থবছরের প্রথম মাস তথা জুলাইতে ১০০ কোটি ৫৫ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স আসে যা গত প্রায় ৩ বছরের মধ্যে ছিল সর্বনিম্ন। এরপর আগস্ট মাসে ১১৮ কোটি ৩৬ লাখ, সেপ্টেম্বরে ১০৫ কোটি ৬৬ লাখ এবং অক্টোবরে ১০১ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স দেশে আসে। আর নভেম্বরে এসেছে মাত্র ৯৫ কোটি ১৪ লাখ ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে ৫২১ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। অথচ আগের অর্থবছরে একই সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ৬১৮ কোটি ডলার। সে হিসেবে অর্থবছরের ৫ মাসেই প্রবাসী আয় কমেছে ৯৭ কোটি ডলার বা ১৬ শতাংশ। গত অর্থবছরেও আগের অর্থবছরের তুলনায় অনেক কম রেমিট্যান্স এসেছিল। সেই কম পরিমাণের রেমিট্যান্সের চেয়েও আরও কম রেমিট্যান্স এসেছে এ অর্থবছরে।
রেমিট্যান্স প্রবাহের ধারাবাহিক পতনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা উদ্বিগ্ন। সম্প্রতি কয়েক দফা ব্যাংকগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেও কোনো অগ্রগতি হচ্ছে না। এমনকি মোবাইল ব্যাংকিং সেবা প্রদানকারী শীর্ষ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও বৈঠক হয়েছে। বিকাশ নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে হুন্ডিওয়ালারা যাতে কোনোভাবেই টাকা পাঠাতে না পারে সে ব্যাপারে কড়া নির্দেশও দেয়া হয়েছে। ব্য্ংাক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ক্ষুদ্র অঙ্কের রেমিট্যান্স এখন আর ব্যাংকিং চ্যানেলে আসছে না। কোনো মাধ্যমে অবৈধ পথে অর্থ পরিশোধ করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেছেন, সবকিছু যে বাড়তেই থাকবে এমন কোনো কথা নেই। প্রাকৃতিক নিয়মেই বাড়ন্ত রেমিট্যান্সে এখন নিম্নমুখী প্রবাহ। এছাড়া হয়তো রেমিট্যান্স বাড়তে বাড়তে এমন পর্যায়ে গেছে যে, এখন আর বাড়তে পারছে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তবে যে কারণটি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন তিনি, তা হলো, মধ্যপ্রাচ্যে কর্মী ছাঁটাই। কিছুদিন আগে মধ্যপ্রাচ্যে তেলের দাম কমতির দিকে থাকায় কর্মসংস্থান কমেছে বলে জানিয়েছেন তিনি। খন্দকার ইব্রাহিম বলেন, শ্রমিক ছাঁটাইয়ের কারণেই রেমিট্যান্স কম আসছে। তিনি আরও বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে কর্মসংস্থান বাড়লে আবার এ প্রবাহ স্বাভাবিক হয়ে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।