হিন্দু-মুসলিম দুই স্ত্রীর টানাটানি আড়াই বছর ধরে মর্গে স্বামীর লাশ নেপথ্যে শত কোটি টাকার সম্পদ
ইসমাঈল হুসাইন ইমু: হিন্দু-মুসলিম পরিবারের দ্বন্দ্বে প্রায় আড়াই বছর ধরে এক ব্যক্তির লাশ ঢামেক মর্গে পড়ে আছে। নিহতের নাম খোকন নন্দী ওরফে খোকন চৌধুরী। তার লাশের দাবিদার দুই স্ত্রী। একজন মুসলিম অন্যজন হিন্দু। ঢামেক মর্গ সূত্র জানিয়েছে, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কোনো নির্দেশনা না থাকায় লাশ মর্গে রাখা হয়েছে। নির্দেশনা পেলেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
জানা যায়, ২০১৪ সালের ১৪ জুন খোকন চৌধুরী গুরুতর অসুস্থ হন। পরে তার দ্বিতীয় স্ত্রী দাবিদার হাবিবা আক্তার খানম ওরফে বাবলি বারডেম হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন। এরপর সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই বছর ২৬ জুন সকাল সাড়ে ৯টায় তিনি মারা যান। পরে হাসপাতাল থেকে তার সঙ্গে থাকা দ্বিতীয় স্ত্রী বাবলি স্বামীর লাশ নিয়ে দাফনের উদ্যোগ নেন। কিন্তু খোকন নন্দী ওরফে খোকন চৌধুরীর প্রথম স্ত্রী মিরা নন্দী এবং তার দু’সন্তান বাবলু নন্দী ও চন্দনা বাধা দেন। তারা দাবি করেন মৃত খোকন নন্দীর লাশ তারা নিয়ে হিন্দুধর্ম মতে সৎকার করবেন। দু’পক্ষের এমন বিরোধের কারণে শেষ পর্যন্ত বিষয়টি থানা পুলিশ থেকে আদালত পর্যন্ত গড়ায়। গত ২৬ সেপ্টেম্বর এ বিষয়ে আদালতের শুনানির দিন ধার্য ছিল। ওইদিন জামাল উদ্দিন আহম্মেদ নামে চট্টগ্রামের একজন বিভাগীয় সচিব সাক্ষী দিতে আসেন। কিন্তু বাদী পক্ষের নানা টালবাহানা ও বিরোধিতার কারণে আদালত তার সাক্ষী গ্রহণ করেননি বলে জানিয়েছেন তার দ্বিতীয় স্ত্রী। এরপর গত ১২ নভেম্বর জেলা জজকোর্টে সাক্ষী নেওয়ার দিন ছিল। কিন্তু সে দিনও তার সাক্ষী নেওয়া হয়নি। পরে গত ১৫ নভেম্বর শুনানি হয়। এখন মামলাটি দ্বিতীয় জেলা জজ আদালতে পাঠানো হয়েছে হাবিবা খানম জানিয়েছেন।
হাবিবা খানম বাবলী বলেন, খোকন নন্দী মুসলমান হয়ে খোকন চৌধুরী নাম রেখেছিলেন। মুসলমান হওয়ার পক্ষে তার কাছে যথেষ্ট দালিলিক ও স্থানীয়ভাবেও প্রমাণ রয়েছে। ১৯৮৪ সালের ২ জুলাই খোকনের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। এর আগে হাবিবুর রহমান নামে প্রথম শ্রেণির একজন ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে এফিডেভিট করে খোকন নন্দী ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।
খোকন চৌধুরীর ছেলে বাবলু জানান, তার বাবার লাশের শেষকৃত্য না হওয়ায় তাদের পরিবারের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে। লাশ নিয়ে মামলা চলছে। মামলা মামলার মতোই চলবে। সামাজিক ও পারিবারিকভাবে আমরা সমস্যায় পড়েছি। তবে এখন বিষয়টি আমার উপরও কিছুটা নির্ভর করছে। তিনি আরও বলেন, তার বাবা যেন স্বর্গ লাভ করেন এজন্য গ্রামের বাড়িতে শ্রাদ্ধ্যানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
খোকন নন্দীর ফার্মগেটের ক্যাপিটাল মার্কেটের প্রধান সিকিউরিটি গার্ড শামছু মিয়া জানান, মার্কেটের সবাই জানেন, তিনি হিন্দু ধর্মেই ছিলেন। তবে একজন শিক্ষিকা তার স্ত্রী দাবি করেন। এ নিয়ে বেশকিছু দিন আগের মার্কেটে এক বিচার ডাকা হয়। ওই বিচারে তার দ্বিতীয় স্ত্রী দাবিদার তার পক্ষে কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি। পরে অপমাণিত হয়ে মার্কেট থেকে চলে গেছেন বলে জানান তিনি। সম্পাদনা: সুমন ইসলাম