বিনামূল্যের আইনি সহায়তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দরিদ্র শ্রেণি, আয় সীমা বাড়ানোর দাবি
এস এম নূর মোহাম্মদ: আলম গ্রামের বাড়ি নীলফামারি। তিন সন্তানসহ পাঁচজনের সংসার। থাকেন রাজধানীর একটি বস্তিতে। সংসার চলে রিকশা চালিয়ে। দিনে আয় ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা। তবে মাস শেষে কখনো ধার করতে হয়, আবার কখনো সমান সমান। বলতে গেলে টানাটানি লেগেই থাকে।
রমিজ, দুই সন্তানসহ চারজনের সংসার। রাজধানীতে রিকশা চালান। থাকেন রিকশার গ্যারেজে। পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা থাকেন রংপুরের গ্রামের বাড়িতে। রিকশা চালিয়ে আয় দিনে ৪০০ থেকে ৮০০ টাকা। কোনোরকমে সংসার চলে।
মোতালেব, সিএনজি চালক। দুই সন্তানসহ চারজনের সংসার। থাকেন ঢাকার ভাড়া বাসায়। দৈনিক আয় গড়ে ৬০০ থেকে ১০০ টাকা। তবে সংসারের খরচ মিটিয়ে মাস শেষে টানাটানি। এভাবেই চলছে হাজার হাজার মানুষের জীবন। যাদের মাসিক আয় ১৫ হাজার টাকা বা তার একটু বেশি। যাদেরকে দরিদ্র বলতেই হবে। কিন্তু এরা সমাজের ভাল পর্যায়ে না থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে সরকারের বিনামূল্যের আইনি সহায়তা থেকে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিনামূল্যে সরকারের আইনি সহায়তা পাবার ক্ষেত্রে জেলা পর্যায়ে ব্যক্তির বাৎসরিক ১ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় ধরা হয়েছে। আর সুপ্রিম কোর্টে এ আয় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত। অথচ একজন রিকশা চালকও দৈনিক ৫০০ টাকা হিসেবে বছরে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা আয় করেন। যদিও মাস শেষে তার হাতে অবশিষ্ট বলে কিছু থাকে না। বাংলাদেশের সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, সব নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী।
কিন্তু সরকারের আয় সীমা নির্দিষ্ট থাকার কারণে বিনামূল্যে আইনি সহায়তা পাচ্ছেন না অনেক হতদরিদ্ররাও। আবার এদের নিজেদেরও সামর্থ্য নেই আইনগতভাবে কোনো সমস্যা মোকাবিলা করার। আর বর্তমানে ব্যক্তিপর্যায়ে কর মুক্ত আয়সীমা ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা ধরা হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের অভিমত বিনামূল্যে আইনি সহায়তা পাবার ক্ষেত্রে ব্যক্তির আয়সীমা আরও বাড়ানো দরকার। এটা অন্তত করমুক্ত আয়সীমা পর্যন্ত করা যেতে পারে।
সুপ্রিম কোর্টের লিগ্যাল এইড কর্মকর্তা রিপন পল স্ক্রু এ প্রতিবেদককে বলেন, আয়সীমা নির্দিষ্ট হওয়ার কারণে প্রায় শতাধিক আবেদন ফেরত দিতে হয়েছে। যাদের মধ্যে অনেকের মামলা গ্রহণ করার মতো ছিল। এছাড়া বিষয়টি নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটিতেও আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। গত ১৫ মে কমিটির অষ্টম বৈঠকে বিষয়টি আলোচনার জন্য ছিল। বৈঠক শেষে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থায় চিঠিও পাঠানো হয়েছে। যা জাতীয় পরিচালনাবোর্ডে উপস্থাপনের কথা রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জাতীয় আইনগত সংস্থার উপপরিচালক আল-আমিন মাতব্বর এ প্রতিবেদককে বলেন, আমরা সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড থেকে চিঠি পেয়েছি। আমরাও বিষয়টি অনুধাবন করছি। তবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিবে বোর্ড। আইনমন্ত্রী সময় নির্দিষ্ট করে দিলে আশা করি আগামী বোর্ড মিটিংয়ে এ নিয়ে আলোচনা হবে।
এদিকে সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির সদস্য তিতাস হিল্লোল রেমা এ প্রতিবেদককে বলেন, আমাদের কমিটির বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আয়সীমা যাতে বাড়ানো হয় সে জন্য আমরা এরই মধ্যে চিঠি পাঠিয়েছি। আমরা চাই যাতে কোনো সীমা না থাকে। এতে করে সেবার পরিমাণ আরও বাড়ানো যাবে। সম্পাদনা : উম্মুল ওয়ারা সুইটি