‘অসম্ভব’: একটি ভৌতিক শব্দ
সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী, ব্যবসায়ী, আওয়ামী লীগের সাবেক আন্তর্জাতিক সম্পাদক সৈয়দ আবুল হোসেন বেশ কয়েকটি বই লিখেছেন। সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে ‘আমার কথা’। এই বইয়ে তিনি নিজের চিন্তা, কর্মকা-, মূল্যবোধ, নানা অভিজ্ঞতা ও পরিকল্পনা সম্পর্কে লিখেছেন। এটি পড়লে তাকে যারা পুরোপুরি চিনেন না তাদের সুবিধা হবে। বইটি ‘আমাদের অর্থনীতি’ ধারাবাহিকভাবে ছাপছে। আজ পড়–নÑ ‘অসম্ভব’: একটি ভৌতিক শব্দ।
‘অসম্ভব’ বলে কোনো শব্দ আমি আমার অভিধানে রাখতে চাই না। ঠিক এমনই বলেছিলেন, নেপোলিয়ন : ঞযব ড়িৎফ রসঢ়ড়ংংরনষব রং হড়ঃ রহ সু ফরপঃরড়হধৎু.৮৩ তবে আমি নেপোলিয়ন নই, আমি আমার স্বকীয় বিদ্যমানতায় অন্য একজন মানুষ। শিশুবেলা থেকে আমি মনে করি ইচ্ছা থাকলে সবকিছুই জয় করা সম্ভব। যে ব্যক্তি কাজ করতে চায় না তার জন্য ‘অসম্ভব’ শব্দটি সৃষ্টি হয়েছে। অথবা যারা আমাদের সঙ্গে কাজ করতে চায় না, তাদের জন্য। আজকাল কেবল আমার নয়, বাংলাদেশের অনেকের মনোগত অভিধানে অসম্ভব শব্দটি খুঁজে পাওয়া যায় না। এ শব্দটি শুধু তাদের জন্য, যারা বড় স্বপ্ন দেখতে ভয় পায়। এটা শেকলের মতো, যা তাকে আটকে রাখে এবং তার প্রতিটি পদক্ষেপে বাধা প্রদান করে। এটা মানুষকে আটকে রাখতে পারে, যেমনিভাবে কারাগারে মানুষকে আটক রাখা হয়। যেখানে চলাচল করতে, প্রাণবন্ত জীবন এবং সফলতা অর্জনে তাকে বাধা প্রদান করে। যার কোনো ইচ্ছা নেই, প্রত্যাশা নেই। প্রকৃতপক্ষে, ঘড়ঃযরহম রং রসঢ়ড়ংংরনষব ঃড় ধ রিষষরহম যবধৎঃ.৮৪
আমি আমার স্বকীয় বিদ্যমানতায় অন্য একজন মানুষ। শিশুবেলা থেকে আমি মনে করি ইচ্ছা থাকলে সবকিছুই জয় করা সম্ভব। যে ব্যক্তি কাজ করতে চায় না তার জন্য ‘অসম্ভব’ শব্দটি সৃষ্টি হয়েছে। অথবা যারা আমাদের সঙ্গে কাজ করতে চায় না, তাদের জন্য। আজকাল কেবল আমার নয়, বাংলাদেশের অনেকের মনোগত অভিধানে অসম্ভব শব্দটি খুঁজে পাওয়া যায় না। এ শব্দটি শুধু তাদের জন্য, যারা বড় স্বপ্ন দেখতে ভয় পায়।
বাংলাদেশে প্রথম ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দ থেকে বেসরকারি উদ্যোগে পর্যটনশিল্পের সূচনা হয়। বেসরকারিভাবে প্রধানত চারটি বিষয় নিয়ে পর্যটন শিল্পের সফল সূচনা ঘটেছিল। এগুলো হলোÑ আতিথেয়তার জন্য হোটেল-রেস্টুরেন্ট, থাকার জন্য রিসোর্ট, থিমপার্ক ও যাতায়াতের জন্য পরিবহন-সুবিধা।৮৫ প্রতিবছর অভ্যন্তরীণ পর্যটকের সংখ্যা গড়ে ৫০ লাখ। ২০১২ খ্রিস্টাব্দে মোট জিডিপির ৪.৩ শতাংশ এসেছে পর্যটন খাত থেকে। টাকার অঙ্কে এটি প্রায় ৩৯ হাজার ৪৮০ কোটি টাকা। ২০১৩ খ্রিস্টাব্দে তা বেড়ে ৭.৫ শতাংশ হয়। ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ এর পরিমাণ গড়ে তা ৬.৮ শতাংশে দাঁড়াবে। যা টাকার অঙ্কে প্রায় ৮১ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। ২০১২ খ্রিস্টাব্দে পর্যটন খাত থেকে যে পরিমাণ টাকা এসেছে, এর অর্ধেকেরও অধিক প্রায় ১৯ হাজার ৩০০ কোটি টাকা এসেছে অভ্যন্তরীণ পর্যটন খাত থেকে। এটি মোট জিডিপির ২.১ শতাংশ। শুধু ২০১২ খ্রিস্টাব্দে পর্যটন খাতের সঙ্গে জড়িত ছিল ১২ লাখ ৮১ হাজার ৫০০ কর্মকর্তা-কর্মচারী, যা মোট চাকরি খাতের ১.৮ শতাংশ। এটি ২০১৩ খ্রিস্টাব্দে ৪.৪ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পায়। এ বছর পর্যটন খাতে ১.৩ মিলিয়ন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়। ২০১৪ খ্রিস্টাব্দে এ খাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ বেড়েছে ৪ শতাংশ। ২০১৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে শুরু করে ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত প্রতি বছর গড়ে ২.৭ শতাংশ বৃদ্ধির সম্ভাবনা আছে। এই হিসাবে ২০২৪ সালে মোট কর্মসংস্থানের মধ্যে পর্যটন খাতের অবদান দাঁড়াবে ১ দশমিক ৯ শতাংশ।৮৬
অন্যদিকে, ২০১৬ খ্রিস্টাব্দে ১০ লাখ পর্যটক বাংলাদেশে আসবে বলে ধারণা করা যায়।৮৭ অথচ আমরা ট্যুরিজমের উন্নয়নের জন্য বলতে গেলে কিছুই করিনি। বর্তমানে পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত বাংলাদেশে। এটি আমাদের প্রকৃতি প্রদত্ত এক মহা সম্পদ। অনেকে বলে থাকেন, আমাদের এ অঞ্চলে নাকি উত্তেজনা বিরাজ করছে। তাই এখানে ব্যবসায়ের পরিবেশ নেই এবং ব্যবসায় নাকি সম্ভব নয়। কিন্তু তা যথার্থ নয়। আমাদের দেশে ব্যবসায়ের অনুকূল পরিবেশ রয়েছে। বর্তমানে আমরা দক্ষিণ এশিয়ার পর্যটন শিল্পের মধ্যে বড় ব্যবসায়ের ও বৈশি^ক অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। এটা আগামী দিনে আরও বাড়বে।
বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে নীতিগতভাবে ও উন্নয়নের চিন্তা-চেতনার দিক থেকে একত্র করা অসম্ভব। বর্তমানে এই ব্যাপারে অনেক উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ভিসা ছাড়া ভ্রমণ, অভিন্ন মুদ্রা চালু করারও চেষ্টা চলছে। ভারতও এই ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এসে চুক্তি করে গেলেন মহাযোগাযোগ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার। সব মিলে আমরা প্রমাণ করব, জোটভুক্ত থাকলে অসাধারণ ও আশ্চর্যজনক সফলতা অর্জন করা সম্ভব। এই অঞ্চলের শক্তি বাড়ানোর জন্য সবাইকে এক হতে হবে। সবাই মিলে যদি আর্থনীতিক উন্নয়নের ওপর জোর দেওয়া যায়, তাহলে এটা হবে পশ্চিমা দেশের জন্য একটি বড় প্রেশার।
অসম্ভব শব্দটি তাদের জন্য, যারা বড় স্বপ্ন দেখতে ভয় পায়। এটা শেকলের মতো, যা তাকে আটকে রাখে এবং তার প্রতিটি পদক্ষেপে বাধা প্রদান করে। এটা মানুষকে আটকে রাখতে পারে, যেমনিভাবে কারাগারে মানুষকে আটক রাখা হয়।
আপাতদৃষ্টিতে অসম্ভব মনে হলেও আমাদের শক্তি ও সম্ভাবনার মাত্রা নির্ণয় সম্ভব হবে না। কেননা আমাদের নিজেদের ওপর এবং আমাদের সক্ষমতার ওপর প্রচ- বিশ^াস ও আস্থা আছে। ‘অসম্ভব’ শব্দটি আমাদের জীবনের ওপর চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। এই শব্দটির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয় যে, তুমি দুর্বল এবং তোমার চারপাশে যারা আছে তারাও দুর্বল। আমরা তা নই, এটি প্রমাণ হয়েছে এবং হচ্ছে। সত্য হচ্ছে- মানুষের শক্তি অথবা দুর্বলতার বিষয় নয়, বরং সত্য হচ্ছে একজন ব্যক্তির ইচ্ছা অথবা অনিচ্ছার বিষয়। আমার মনে পড়ছে অঁফৎবু ঐবঢ়নঁৎহ-এর সে অমিয় বাণী : ঘড়ঃযরহম রং রসঢ়ড়ংংরনষব, ঃযব ড়িৎফ রঃংবষভ ংধুং ‘ও’স ঢ়ড়ংংরনষব!৮৮
কোন্ ব্যক্তি ‘অসম্ভব’ শব্দটি আবিষ্কার করেছে, তার কোনো তথ্য আমার কাছে নেই। তবে এটা পরিষ্কার, কেউ একজন খুঁজছিল এমন এক জীবনের, যে-জীবনে থাকবে শুধু আরাম, ঘুম এবং কর্মহীনতা। এ শব্দটিতে আমাদের কখনও বিশ^াস ছিল না। আজ আমি এমন কিছু শব্দ শুনেছি তা হলো, হে ‘অসম্ভব’ তুমি আমাদের সম্ভবনার আওতা থেকে দূর হয়ে যাও। দূর হয়ে যাও বহুদূরে।
যেখানে ঐকান্তিক ইচ্ছা ও বিশ^াস থাকে, সেখানে অসম্ভব বলে কোনো জিনিস থাকতে পারবে না। জীবনে অসম্ভব বলে কিছু নেই। অসম্ভব ধারনাটি মানুষের জন্য কলঙ্কজনক। এটি যত দূরে ছুড়ে দেওয়া যায় ততই মঙ্গল।
জীবনে তিনটি অবাস্তব বা কাল্পনিক জিনিস রয়েছে। প্রথমত, কল্পনার পাখি- এটি এমন এক পাখি, যে কখনও মাটিতে নামে না, সব সময় উড়ে বেড়ায়। যখন সে আকাশে ডিম পাড়ে, সে ডিম মাটিতে পড়ার আগেই বাচ্চা ফুটে উড়তে থাকে। দ্বিতীয়ত, রাক্ষস- যা আমরা কখনও দেখি না। এটাও একটি অবাস্তব বা কাল্পনিক গল্প। এবং তৃতীয়ত, বিশ^স্ত বন্ধু। মনে রাখুন, এটা আমার কোনো কথা নয় এবং বহু মানুষ অন্য আরও কয়েকটি অবাস্তব বা অসম্ভব বিষয় এর সঙ্গে যোগ করেছে, তাদের প্রত্যেকের চিন্তা ও ধারণা অনুযায়ী। পরিশেষে, আমি বলতে চাই, যেখানে ঐকান্তিক ইচ্ছা ও বিশ^াস থাকে, সেখানে অসম্ভব বলে কোনো জিনিস থাকতে পারে না। জীবনে অসম্ভব বলে কিছু নেই। ‘অসম্ভব’ ধারণাটা মানুষের জন্য কলঙ্কজনক। এটি যত দূরে ছুঁড়ে দেওয়া যায় ততই মঙ্গল।
আমি মনে করি, ‘অসম্ভব’ ভূতের কার্যকলাপের মতো কাল্পনিক ও ভৌতিক একটি প্রত্যয়। ভয়, অনিচ্ছা, নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি, অনীহা, মানসিক রোগ, অস্থিরতা কিংবা অলসতা হতে ‘অসম্ভব’ শব্দের উৎপত্তি। ভূতের যেমন প্রকৃত কোনো অস্তিত্ব নেই, তেমনি ‘অসম্ভব’ শব্দেরও কোনো বাস্তব অস্তিত্ব নেই। কেবল অজ্ঞতাই ভূতের মতো ‘অসম্ভব’ শব্দকে ধারণ করে রাখে। ভয়কে জয় করে এগিয়ে যান, দেখবেন ‘অসম্ভব’ ভূতের মতোই মিলিয়ে যাচ্ছে বাস্তবতায়। কর্ম, অধ্যবসায়, নিষ্ঠা আর আন্তরিকতার কাছে সব ‘অসম্ভব’ ছুটে আসে সম্ভবের বিমূর্ত সৌরভ হয়ে।
[ আগামীকাল পড়–নÑ ব্যবসায়ীদের বিশ্বসমাবেশ ]