গণসংযোগে ব্যস্ত আইভী-সাখাওয়াত আচরণ বিধি দেখতে ২৭ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট
হাসান আরিফ, নারায়ণগঞ্জ থেকে ফিরে: নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন (এনসিসি) নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ এবং লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে ২৭টি ওয়ার্ডে ২৭ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে। এসব ম্যাজিস্ট্রেট আচরণ বিধির উপর নজর রাখছেন। নির্বাচনি এলাকার আইনশৃঙ্খলার বিষয়ে আগামীকাল নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সভাকক্ষে নির্বাচন কমিশনার প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিবেন বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. নুরুজ্জামান তালুকদার বলেছেন, প্রার্থীদের আচরণ বিধি লঙ্ঘন না করার আহ্বান জানানো হয়েছে। নির্বাচনি মাঠে নিয়োগকৃত ম্যাজিস্ট্রেটরা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিবেন। নিরাপত্তা রক্ষায় পর্যায়ক্রমে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করা হবে বলেও তিনি জানান।
এদিকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী ৮ নম্বর ওয়ার্ড থেকে প্রচারণা শুরু করেছেন। এ সময় তার সঙ্গে দলীয় নেতাকর্মীদের দেখা যায়নি। আর বিএনপি মনোননীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান শহরের বিভিন্ন এলাকায় প্রচারণা করেছেন। এ সময় তার সঙ্গে কেন্দ্রীয় এবং জেলা নেতারা ছিলেন।
এদিকে অবশেষে আইভীর পাশে দাঁড়িয়েছেন বহুল আলোচিত মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন। আনোয়ার হোসেনকে আনোয়ার কাকা বলেই কাছে টেনে নিয়েছেন আইভী। শুধু তাই নয়, আইভীর পাশে দাঁড়াতে গিয়ে আওয়ামী লীগের অপর পক্ষের নেতাদের হাতে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হয়েছিলেন তিনি। গত নির্বাচনে আইভীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান ছিলেন এই আনোয়ার। সেই আনোয়ার হোসেন এবারের নির্বাচনে আইভীর পাশে এসে দাঁড়ালেন অবশেষে।
গত নির্বাচনের পর একসময় আনোয়ার হোসেন শামীম ওসমান বলয়ে এসে আইভীর বিরুদ্ধে বক্তব্য দিতে থাকেন। আইভী তাকে অবমূল্যায়ন করেছেন বলেও অভিযোগ তুলেছিলেন তিনি। একই সঙ্গে বিএনপি জামায়াতের প্রতি আইভীর প্রীতি রয়েছে বলেও বক্তব্য দিয়েছিলেন এই আনোয়ার হোসেন। যদিও এক সময় আনোয়ার হোসেন লাঞ্ছিত হয়েছিলেন তখন মেয়র আইভীই ছিলেন আনোয়ার হোসেনের পক্ষে।
নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী গতকাল সিটি কর্পোরেশনের ৬ ও ৮নং ওয়ার্ডে গণসংযোগ করেছেন। এই সময় এলাকার ভোটাররা আইভীকে ভোট দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। সকাল ৯টা থেকে শুরু হয় তার গণসংযোগ।
আইভী সিটি কর্পোরেশনের ৮নং ওয়ার্ডের পাঠানটুলী, গোদনাইল, এনায়েতনগর, প্রধানবাজার, আইলপাড়া, চৌধুরীবাড়ি, তাঁতখানা এলাকা গণসংযোগ করেন। এছাড়া তিনি ৬নং ওয়ার্ডেও কিছু সময় গণসংযোগ করেন।
ভোর থেকেই প্রচারণা শুরু করেন বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খান। আগামী ২২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনকে সামনে রেখে সাখাওয়াতের প্রচারণায় কেন্দ্রীয় নেতারাও যোগ দেন। হারানো গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনার জন্যই বিএনপি নাসিক নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে বলেন সাখাওয়াত। তিনি আরও বলেন, আইভী যে নৌকায় উঠেছেন সেই নৌকাকে বাংলার মানুষ চায় না।
মঙ্গলবার ভোর ৬টার পর থেকেই সাখাওয়াত হোসেন খান শহরের খানপুর হাসপাতাল রোড, চাষাঢ়া, খানপুর রেললাইন এলাকায় গণসংযোগ করেন। পরে সাড়ে ৮টায় যান শহরের ডিআইটি বাণিজ্যিক এলাকায়। ওই সময়ে এলাকার দোকানপাট বন্ধ থাকলেও পথচারীদের সঙ্গে কথা বলেন সাখাওয়াত।
সকাল ১১টায় শহরের ডিআইটি বাণিজ্যিক এলাকায় জেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে থেকে জেলা ও কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে আনুষ্ঠানিক প্রচারণায় বের হন সাখাওয়াত। বঙ্গবন্ধু সড়কের ২নং রেলগেট, গ্রীন্ডলেজ ব্যাংক মোড়, চাষাঢ়া হয়ে আবারও দলীয় কার্যালয়ে গিয়ে শেষ হয় প্রচারণা।
ওই সময়ে সাখাওয়াত বলেন, বিগত একতরফা ও অবৈধ নির্বাচনি পরিবেশের প্রেক্ষাপটে নারায়ণগঞ্জবাসী আজ শঙ্কিত তারা আদৌ নিরাপত্তার সঙ্গে ভোট দিতে পারবে কিনা? সন্ত্রাস-গুম-হত্যা ও গণতন্ত্র হরণে ক্ষুব্ধ নারায়ণগঞ্জবাসীর মনে আজ পরিবর্তনের জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) জনগণের শক্তিতে বিশ্বাসী। নির্বাচন নিরপেক্ষ অবাধ ও সুষ্ঠু হলে জনগণের ভোট শক্তির জোরেই ধানের শীষে বিপুল ভোটে জয়যুক্ত হবে।
তিনি বলেন, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে নারায়ণগঞ্জবাসীর মধ্যে ঐক্য সৃষ্টির মাধ্যমে সন্ত্রাস-গুম-মাদক নির্মূল করে নারায়ণগঞ্জকে কলঙ্কমুক্ত করা হবে। ফ্লাইওভারসহ সব সরু রাস্তা প্রশস্তকরণের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জ শহর থেকে যানজট দূর করা হবে। শীতলক্ষ্যা ব্রিজ তৈরি করে দুই পারের বিভক্তি মেটানো হবে। অযৌক্তিকভাবে চাপানো অসহনীয় সব ধরনের ট্যাক্স সহনীয় করা হবে। সামাজিক উন্নয়নে হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ, স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হবে।
মঙ্গলবার সাখাওয়াতের সঙ্গে প্রচারণায় অংশ নেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমূর আলম খন্দকার, সেক্রেটারি কাজী মনিরুজ্জামান, নগর বিএনপির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম, সেক্রেটারি এটিএম কামাল, সাবেক তিনজন এমপি গিয়াসউদ্দিন, আবুল কালাম, আতাউর রহমান খান আঙ্গুর প্রমুখ।