বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ
ফৌজদারি কার্যবিধি ব্যাপকভাবে সংশোধন করে বিচার বিভাগ পৃথক করে তা ১ নভেম্বর ২০০৭ হতে কার্যকর করা হয়েছে। তার আগে প্রশাসন ক্যাডারের ম্যাজিস্ট্রেটগণ প্রশাসনিক কাজে অধিক সময় দেয়ার কারণে অনেক ফৌজদারি মামলা যথাসময়ে নিষ্পত্তি হতো না। ১ নভেম্বর ২০০৭ হতে বিজ্ঞ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটগণ সার্বক্ষণিকভাবে বিচার কাজে নিয়োজিত। তারপরও মামলা নিষ্পন্নের হার কম কেন এই প্রশ্নের উত্তর তেমন কঠিন নয়। কিন্তু কমিশন বিদ্যমান আইনের আলোকে ফৌজদারি মামলার বিচার ত্বরান্বিতকরণের পথের দিকে না তাকিয়ে বিচার প্রার্থীকে বিকল্প পথ দেখানোর প্রয়াস নিয়েছে। কমিশন বলেছে যে, এত মামলা বিচারের মাধ্যমে নিষ্পন্ন না করে পক্ষদের মধ্যে আপোস মীমাংসা করলে মামলার জট কমে যাবে। একথা সত্য যে অধিকসংখ্যক বিরোধ বা অপরাধের আপোস মীমাংসা হলে অনিষ্পন্ন মামলার স্তূপ ছোট হয়ে আসবে। কিন্তু এটাও ভুলে গেলে চলবে না এদেশের মানুষ যথেষ্ট জেদী এবং চতুর। তাই আইনের প্রয়োগের উপর নজরদারি করাই অধিকতর ফলদায়ক হবে। তা করার জন্য প্রাসঙ্গিক সকল আইন মন দিয়ে পড়তে হবে এবং মনে রাখতে হবে। সেজন্যই সাক্ষ্য আইন ১৮৭২-এর ধারা ৫৭-তে বিধান করা হয়েছে যে, দেশের সকল আইনের বিধান বিচারকদের বিচারিক অবগতিতে রাখতে হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাস্টিস বার্নার্ড বোটিন ট্রায়াল জজ নামক বইয়ে লিখেছেন যে, বিজ্ঞ বলে সম্বোধিত বিচারক সকল আইনের বিধান সম্পর্কে ওয়াকিবহাল না থাকলে তদ্রুপ সম্বোধনে তিনি মনে মনে লজ্জা বোধ করবেন। সংক্ষেপে বলা যায় যে, বিজ্ঞ বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটদের যথাযথভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হলে ফৌজদারি আদালতসমূহ নিয়মিত পরিদর্শন করা হলে এবং সেই আদালতসমূহের কর্মসম্পাদন নিয়মিত পরিবীক্ষণ করা হলে আশা করা যায় যে, অচিরেই অনিষ্পন্ন ফৌজদারি মামলার সংখ্যা কমে আসবে।
আইন কমিশন আইনের প্রস্তাবনায়ও উল্লেখ করা হয়েছে যে, বিভিন্ন আদালতে বহুসংখ্যক মামলা দীর্ঘদিন বিচারাধীন থাকার প্রেক্ষিতে এই আইন করা হয়েছে। তাই বিষয়টি কমিশনের অবদানের দাবি রাখে।
লেখক : নির্বাচন কমিশনার এবং প্রাক্তন সদস্য, আইন কমিশন।