এরশাদ সব করেছিলেন ‘সংবিধানের স্বার্থে’
বিডিনিউজ: গণতন্ত্র হরণকারী হিসেবে চিহ্নিত এইচ এম এরশাদ পালন করেছেন সংবিধান সংরক্ষণ দিবস এবং তাতে দাবি করেছেন, অসাংবিধানিক কোনো কাজ তিনি করেননি। উচ্চ আদালতের রায়ের বাইরে গিয়ে মঙ্গলবার নিজের ক্ষমতা হারানোর দিন ৪ ডিসেম্বর পালনের সভায় এই দাবি করেন সাবেক এই সামরিক শাসক।
১৯৮২ সালে সেনা প্রধান হিসেবে ক্ষমতা দখলকারী এরশাদ নয় বছর পর ১৯৯০ সালের ডিসেম্বরে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে গণআন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন। সামরিক শাসকের পতনের ওই দিনটি বাংলাদেশের
রাজনৈতিক দলগুলো স্বৈরাচার পতন দিবস, গণতন্ত্র দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। এরশাদের দল দিনটি পালন করে ভিন্ন আঙ্গিকে, ‘সংবিধান সংরক্ষণ দিবস’ হিসেবে। ১৯৯০-এর গণআন্দোলনের মুখে ৪ ডিসেম্বর ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি। তার দুদিন পর ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিলেন বিচারপতি মো. শাহাবুদ্দিনের অস্থায়ী সরকারের কাছে।
জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আব্দুস সাত্তারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করেছিলেন তৎকালীন সেনাপ্রধান এরশাদ; যা অবৈধ বলে পরে হাইকোর্টের রায় আসে। গুলশানের একটি কনভেনশন সেন্টারে জাতীয় পার্টি আয়োজিত অনুষ্ঠানে এরশাদ বলেন, লোকে বলে আমি অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতায় ছিলাম। এটা সত্য নয়। রাষ্ট্রপতি আব্দুস সাত্তার সাহেব রাষ্ট্র পরিচালনার কাজে ইচ্ছুক ছিলেন না। তাই তিনি আমাকে ক্ষমতা দেন নাই, দিয়েছিলেন সামরিক বাহিনীকে। ওই সময় আমি সিনিয়র ছিলাম, সামরিক বাহিনীর প্রধান ছিলাম। সেই হিসেবে তিনি আমার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিলেন। মনে রাখতে হবে, ক্ষমতা দখল এবং ক্ষমতা হস্তান্তর এক নয়।
এরপর নিজের পতনের বিষয়ে এরশাদ বলেন, সংবিধান না থাকলে গণতন্ত্র থাকে না, গণতন্ত্র না থাকলে সংবিধান থাকে না। আমি জোর করে ক্ষমতায় থাকতে চাইনি। সংবিধান ও গণতন্ত্রের স্বার্থে আমাকে আসতে হয়েছিল। যারা আমার পদত্যাগ দাবি করেছিলেন- কীভাবে পদত্যাগ করব, কার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করব, তার কোনো রূপরেখা তারা দেননি। আমিই বিচারপতি শাহাবুদ্দিনকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি করেছিলাম, তাকে শপথও করিয়েছিলাম আমি। তারপর তার কাছে সাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিলাম।
এরপরে বিচারপতি শাহাবুদ্দিনকে নিয়ে বিষোদগার করেন এরশাদ। তিনি বেইমানি করেছিলেন। আমাকে জেলে দিয়েছিলেন, দলের কর্মী-সমর্থকদের হয়রানি করেছিলেন। আমাদের নির্বাচন করতে দিতে চাননি। বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ দূত এরশাদ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ারও সমালোচনা করেন। পত্রিকায় দেখলাম একজন বলেছেন- বাকশাল আর স্বৈরাচার মিলে দেশকে ধ্বংস করছে। আপনি ক্ষমতায় গিয়ে ১৫ জন কৃষককে মেরেছিলেন। কানসাটে মানুষ মেরেছেন, তারা বিদ্যুৎ চেয়েছিল। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে ২৯ জন মানুষ মেরে ফেলেছেন। এখন বলছেন স্বৈরাচার আর বাকশাল দেশ ধ্বংস করছে! লজ্জা করে না? আগামী ১ জানুয়ারি ঢাকায় দলের সমাবেশ সফল করতে নেতাকর্মীদের সক্রিয় হওয়ার তাগিদ দেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান। মনে রেখ, আমরা জনগণের হৃদয়ে আছি। মানুষ পরিবর্তন চায় এবং সেই পরিবর্তন আমরা তাদের দিতে পারি, কিন্তু জনগণের কাছে তোমাদের যেতে হবে। সামনের মহাসমাবেশ আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা পরীক্ষা।
অনুষ্ঠানে দলের কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের, মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, সভাপতিম-লীর সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ, জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, এস এম ফয়সল চিশতী, দেলোয়ার হোসেন, চেয়ারম্যানের রাজনৈতিক ও প্রেস সচিব সুনীল শুভরায়ও ছিলেন। সম্পাদনা: হাসান আরিফ