সংসদে প্রধানমন্ত্রী বাস্তব কারণেই বাল্যবিবাহ আইনে বিশেষ বিধান
উম্মুল ওয়ারা সুইটি: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাস্তবতা বিবেচনা করেই বাল্যবিবাহ আইনটি করা হয়েছে। এই নিয়ে ঘাবড়ানোর বা চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। আমাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিবেচনায় নিতে হবে। প্রস্তাবিত বাল্যবিবাহ আইনে বাস্তবসম্মত চিন্তা থেকেই বিশেষ বিধান রাখা হয়েছে। গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদে সংসদ সদস্য ফখরুল ইমামের এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। আইনটি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আইনটিতে আমরা ‘তবে’ ব্যবহার করলাম কেন, তা নিয়ে যারা বড় বড় কথা বলছেন, তারা গ্রামের বাস্তব অবস্থাটা জানেন না। যারা আজ এ নিয়ে কথা বলছেন, তারা কোনো দিন গ্রামে বাস করেননি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্রামের সমাজব্যবস্থা সম্পর্কে তাদের বিন্দুমাত্র ধারণা নেই। গ্রামীণ পরিবেশের সঙ্গে তারা সম্পৃক্ত নন। গ্রামের পারিবারিক মূল সমস্যা সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণা নেই। দিনের পর দিন গ্রামে যদি কেউ বসবাস করে, তাহলেই সেই গ্রামগুলোর পারিবারিক ও সামাজিক অবস্থা জানতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা বাল্যবিবাহ আইন নিয়ে খুব উচ্চস্বরে কথা বলছেন, তারা এই বাস্তবতার কথা চিন্তা করছেন না। সমাজের প্রতি দায়-দায়িত্ব তাদের খুবই কম। কারণ তারা দুটো এনজিও করে পয়সা কামান। কিন্তু দায়িত্বটা নেন না। তবে আমি যতদিন সরকারে আছি, মনে করি এটি আমার দায়িত্ব। সমাজের এই সন্তানটাকে একটি স্থান করে দেওয়া। তার জন্য এই বিশেষ বিধান করে দিয়েছি। কারণ এটি অত্যন্ত বাস্তবসম্মত চিন্তা। রাজধানীর চেহারা দেখে গ্রামের সামাজিক অবস্থা জানা যায় না।
বিশেষ বিধান রাখার কারণ ব্যাখ্যা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা আঠারো বছর বয়স পর্যন্ত বিয়ের বয়স নির্ধারণ করে দিয়েছি। কিন্তু একটি মেয়ে যদি যেকোনো কারণে ১২/১৩ বা ১৫/১৬ বছরের সময়ে গর্ভবতী হয়ে যায়, তাকে গর্ভপাত করানো গেল না। তাহলে যে শিশুটির জন্ম নেবে, তার অবস্থা কী হবে? তাকে কি সমাজ গ্রহণ করবে? তাকে কি বৈধ বলে কেউ মেনে নেবে? নেবে না। তাহলে এ বাচ্চাটির ভবিষ্যৎ কী হবে? এ রকম যদি কোনো ঘটনা ঘটে, তাহলে কী হবে? হ্যাঁ যদি গর্ভপাতের বিষয়টি আইনে থাকে তাহলে সমস্যা নেই। গর্ভপাত করিয়ে নেবে। আর যদি না হয়, তাহলে যে মেয়েটি সন্তান জন্ম দিল তার ভবিষ্যৎ কী? আর সন্তানটির ভবিষ্যৎ কী হবে? এ ধরনের কোনো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটলে সেখানে যদি মা-বাবার মত নিয়ে আদালতের অনুমতি নিয়ে যদি বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে মেয়েটি বেঁচে গেল, তার বাচ্চাটিও বৈধতা পেল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইউরোপের অনেক দেশে বিয়ের বয়স ১৪ থেকে ১৬ বছর রয়েছে । এ সব দেশে অল্প বয়স্ক মায়ের সংখ্যা অসংখ্য। সেখানে এটি একটি সামাজিক ব্যাধির মতো ছড়িয়ে পড়েছে। ১২/১৩ বছরের বাচ্চা মেয়েরা মা হয়ে যায়। তারা গর্ভপাত করাতে চায় না। কিন্তু বাচ্চাটা হওয়ার পর ২/৩ বছর লালনপালন করে ওই মেয়ে বাচ্চাটিকে তার মায়ের কাছে ফেলে রেখে চলে যায়। ওই দেশে কিন্তু ওই বাচ্চাটিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি করাতে গেলে সন্তানটি বৈধ না অবৈধ সেই প্রশ্ন কেউ করবে না। তার বাবা-মা কে, তাও জানতে চাইবে না। সম্পাদনা: সুমন ইসলাম