হজরত মুহাম্মদ (সা.) আমাদের চেতনার বীজতলা
হুমায়ুন আইয়ুব: আমরা যারা ইসলাম ধর্মের অনুসারী তাদের চেতনার বীজতলা হজরত মুহাম্মদ (সা.)। ফিরে ফিরে ছুইয়ে আসি মদিনার মাটি। সংকটে-সমাধানে নবীজিই আমাদের প্রেরণার বাতিঘর। আমরা পরস্পর মানবতা, ঐক্য, মৈত্রী, সামাজিক সংহতি ও সম্প্রীতি পাঠ নিই নবীজির জীবন থেকেই। কুরআনুল কারিমের মহার্ঘ্য বাণীও আমাদের সংলাপে উৎসাহিত করে। আল্লাহ তায়ালা সূরা শুরার ৩৮ আয়াতে বলেন, ‘তাদের সব কাজকর্ম নিজেদের পারস্পরিক পরামর্শক্রমে সম্পন্ন হয়। পরামর্শ ও সংলাপের বিষয়ে শুধু উৎসাহ নয় কুরআনের নির্দেশ হলো, যেকোনো কাজে তোমরা পারস্পরিক সংলাপ-পরামর্শ কর, আল-ইমরান : ১৫৯। ঐক্য ও সংহতি প্রতিষ্ঠায় কুরআন বলে, অবশ্যই মুমিনরা পরস্পর ভাই। সুতরাং, তোমার ভাইয়ের মধ্যে শান্তি স্থাপন কর, যাতে তোমরা রহমত পেতে পার (হুজরাত-১০)।
নবী জীবনের বাঁকে বাঁকে বপন করা আছে সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি ও সংলাপের বীজ। অস্থিরতা, সংকট ও প্রয়োজনে তিনি বথা বলেছেন দলমত জাতি ধর্ম বর্ণ উপেক্ষা করে। নবীজি (সা.) ইয়াহুদি, খ্রিস্টান ও মুশরিকদের সঙ্গে বিভিন্ন সময় সংলাপ করেছেন। সংলাপ করেছেন ধর্ম রাষ্ট্র ও জনমানুষের শান্তি এবং নিরাপত্তার স্বার্থে। হুদায়বিয়ার সন্ধিও সংলাপ-সমঝোতার প্রধান উপমা। হুদায়বিয়ার সন্ধিতে বিরোধীদের চাপিয়ে দেওয়া সব শর্ত মেনে নিয়েছেন নবীজি (সা.)। সব মেনে হজরত আলী (রা.) কে নির্দেশ দিলেন চুক্তিনামা গ্রন্থনার। হজরত আলী লিখতে গেলেন, চুক্তির শুরুতে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ লিখতেই জ্বলে ওঠলেন মুশরিক নেতা সুহাইল। থামিয়ে দিলেন হজরত আলীকে। সংঘাতের সৃষ্টি হলো। সমঝোতার দুয়ারে নেমে এলো কালো মেঘ। নবীজি বিসমিল্লাহ ছাড়াই চুক্তি সম্পন্নের জন্য বললেন। এবার নবীজির স্বাক্ষরের পালা। হজরত আলী লিখে দিলেন, এই চুক্তি আল্লাহর রাসুল মুহাম্মদ (সা.)-এর পক্ষে। ক্ষেপে ওঠলেন মুশরিক নেতা সুহাইল। চিৎকার শুরু করলেন। বললেন, আল্লাহর রাসুল মুহাম্মদ-এর নাম মুছে দাও। শুধু আবদুল্লাহর ছেলে মুহাম্মদ লেখা হবে।
মুহাম্মদকে আল্লাহর রাসুল মানলে তোমাদের সঙ্গে আমাদের এতো যুদ্ধ-বিগ্রহ কেন? হজরত আলী কলম রেখে দিলেন। না ওদের সঙ্গে আর হবে না। হজরত আলী বললেন, আমার প্রিয় নবীর নাম কেটে দিতে পারব না। পাহাড়সম প্রীতি বুকে নিয়ে নবীজি এগিয়ে এলেন। হজরত আলী (রা.) কে বললেন, ওগো আলী, আমাকে ‘আল্লাহর রাসুল মুহাম্মদ’ কোথায় লেখা হয়েছে, দেখিয়ে দাও। আমিই ‘আল্লাহর রাসুল মুহাম্মদ’ কেটে দিব। তাই হলো।
অবাক পৃথিবী। সংলাপ ও সম্প্রীতির এর চেয়ে বড় উপমা আর কোথায় মিলবে। বুকভরা দৃঢ়তাই কেবল পারে সংলাপ ও সম্প্রীতির উদাহরণ সৃষ্টি করতে।
এছাড়াও কাবা ঘরে পাথর প্রতিস্থাপনে সংঘাত হলে কুরাইশদের সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে সমাধান করেছেন। নবুয়ত লাভের পর নিয়মিত বিভিন্ন ব্যক্তি, পরিবার ও গোত্রের সঙ্গে নবীজির সংলাপ অব্যাহত ছিল। পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম লিখিত মদিনার সনদও বিরোধীদের সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে রচিত হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে নবীজির পত্রালাপ ও দূত প্রেরণও সংলাপ-সমঝোতার সাক্ষ্য বহন করে।