পরিচালক সমিতিতে ৬৫ দিনে ৫৩টি ছবি নিবন্ধিত
ইমরুল শাহেদ: ৪ ডিসেম্বর সর্বশেষ পোস্টমাস্টার ৭১ পর্যন্ত গত অক্টোবর ও নভেম্বরে ৫৩টি ছবি পরিচালক সমিতির নথিভুক্ত হয়েছে। এসব ছবির কোনোটির কাজ শুরু হয়েছে। কোনোটির কাজ শেষ করে এসে নথিভুক্ত করা হয়েছে। অথবা কোনো কোনোটির কাজ শুরু হবে আগামী বছর। তবে নিয়ম হলো কোনো ছবির কাজ যদি নথিভুক্ত হওয়া থেকে এক বছরের মধ্যে শুরু না করা হয় তাহলে পরিচালক সমিতি নামটি অন্য কাউকে দিয়ে দিতে পারবে। ব্যতিক্রম শুধু কপিরাইটের ক্ষেত্রে। কেউ যদি নামটি কপিরাইট অ্যাক্টে নিবন্ধন করে নেন সে নামটির ক্ষেত্রে পরিচালক সমিতির কিছু করণীয় নেই। তবে পরিচালক সমিতির পরামর্শ হলো, প্রত্যেক নির্মাতারই উচিত কপিরাইট বোর্ড থেকে তাদের ছবিগুলোর নাম নিবন্ধন করে নেওয়া। পরিচালক সমিতির নির্বাহী কমিটির একজন সদস্য জানালেন, তারা আগামীতে কপিরাইট বোর্ডের সনদপত্র ছাড়া ছবির নাম সমিতির তালিকায় নথিভুক্ত নাও করতে পারেন। অনেকেই হঠাৎ করে একটি নাম ভালো লাগলো, সে নামটি অন্য একজন পরিচালক সমিতির নথিভুক্ত করে ফেলতে পারেন বা তার পছন্দের নামটি বেহাত হয়ে যেতে পারে- এমন সম্ভাবনা থেকেও ছবি নথিভুক্ত করে রাখেন। খরচও কম। ছবি প্রতি সাড়ে তিন হাজার টাকা।
প্রশ্ন হচ্ছে গত ৬৫ দিনে যে ৫৩টি ছবির নাম পরিচালক সমিতিতে নিবন্ধিত হয়েছে সে ছবিগুলোর ধরন কি? নামের তালিকা থেকে মনে হয় ছবিগুলো প্রায় একই ধরনের। এর মধ্যে একটি নাম শুধু ইস্যুভিত্তিক। রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে ছবি নির্মাণের জন্য ‘রোহিঙ্গা’ নাম দিয়ে একটি ছবির নাম নিবন্ধিত হয়েছে। তালিকায় কোনো ফোক ছবির নাম দেখা গেল না। এক সময়ে চলচ্চিত্রের প্রতিটি সংকটেই ফোক ছবি উত্তরণের সিঁড়ি হিসেবে কাজ করেছে। রূপবান বা বেদের মেয়ে জোসনার নাম সে অর্থেই উচ্চারিত হয়ে থাকে। তবে স্বাধীনতা উত্তর এদেশের চলচ্চিত্রের প্রথম রক্ষাকবচ হয়ে উঠে রংবাজ ছবিটি। নব্বইয়ের দশকে এসে চলচ্চিত্রকে রক্ষা করে চাঁদনী। এখন সে ধরনের কোনো সম্ভাবনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। পরিচালক সমিতির তালিকাভুক্ত ছবিগুলোর জন্য যেসব প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার হয়েছে, তার বেশির ভাগই চলচ্চিত্র ব্যবসায় নতুন। নিয়মিত প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান বলতে জাজ মাল্টিমিডিয়া ছাড়া আর কোনোটিই নয়। জাজ মাল্টিমিডিয়াও আরেকটি নতুন ব্যানারের নাম ব্যবহার করছে। নিবন্ধিত এসব ছবিগুলো আগামী দুই বা তিন বছরে মুক্তি পাবে। এগুলো কী পারবে চলচ্চিত্র শিল্পে বিরাজমান সংকট উত্তরণে সহায়তা করতে। পরিচালক সমিতির মহাসচিব মুশফিকুর রহমান গুলজার বলেন, ‘আমাদের জন্য এখন বড় সমস্যা হলো পরিবেশক ও প্রদর্শক। একজন প্রযোজক এক কোটি টাকা লগ্নী করে ২০ লাখ টাকাও ঘরে ফিরিয়ে নিতে পারেন না পরিবেশক ও প্রদর্শকদের কারণে। এ পরিস্থিতিতে কে আসবে লগ্নী করতে।’ তিনি বলেন, ‘ছবির বিষয়বস্তুও প্রায় এক রকম হচ্ছে এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। দর্শক ফর্মুলাভিত্তিক রিপিট বিষয়বস্তুর ছবি দেখবে কেন। চলচ্চিত্রে সংকট তৈরি হওয়ার এটাও একটা কারণ। এক্ষেত্রে আসলে আমাদের করণীয় কিছু নেই। আমরা চেয়েছিলাম নতুন যারা লগ্নীকারক আসছেন তাদেরকে একটা গাইড লাইন দিতে যাতে তারা পরিচালক, বিষয়বস্তু নির্বাচনে সচেতন হতে পারেন। কিন্তু তারা আমাদের কাছে আসেন না।’
প্রযোজকরা নিজ দায়িত্বে, নিজের মতো করে ছবি বানাচ্ছেন। তাতে চলচ্চিত্র শিল্প বাঁচলো কী বাঁচলো না তাতে তাদের কিছু আসে যায় না। প্রযোজক সমিতি নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ায়ও চলচ্চিত্র শিল্প অনেকটা লাগামহীন হয়ে পড়েছে। এখন এমন অনেক নির্মাতাই ছবি নির্মাণ করছেন যারা চলচ্চিত্রের ভাষা সম্পর্কেও ওয়াকেবহাল নন। তবে ছবির নির্মাণ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে বলা যায়। আগে হলে উল্লিখিত এই সময়ে ছবির সংখ্যা হতো এর দ্বিগুণ বা তারও বেশি। ছবির সংখ্যা কমে যাওয়ায় এবং ব্যবসায়িক মন্দা দেখা দেওয়ায় চলচ্চিত্রে বেকার সমস্যাও দেখা দিয়েছে ব্যাপকভাবে। অঙ্গুলীমেয় দুচারজন তারকা ছাড়া আর সবাই পেশার রূপান্তর বা অন্য কোনো বিকল্প কাজের দিকে ধাবিত হচ্ছে। সম্পাদনা: সুমন ইসলাম