কামরুল আহসান: ভারতের অসমিয়া সম্প্রদায়ের সঙ্গে বাংলাদেশি অভিবাসীদের সমতার প্রয়োজন রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আসামের রেলমন্ত্রী রাজেন গোহাইন। তিনি বলেন, আসামের উন্নয়নের পিছনে তাদেরও ভূমিকা রয়েছে।
আসামের ৩ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে ৩৫ ভাগ মুসলিম। এই মুসলিমদের বহিরাগত অভিবাসী বলে অভিহিত করা হয়। এর সঙ্গে আছে বিপুল সংখ্যক বাংলাভাষী নিম্ন শ্রেণীর হিন্দু। যাদের ১৯৭১ সালের পর বাংলাদেশি অভিবাসী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। মুসলমানদের নাগরিকত্ব নিয়ে প্রথম বিতর্ক শুরু ১৯৬০ সালের পর থেকে। ১৯৭৯ সাল থেকে ‘অল আসাম স্টুডেন্টস ইউনিয়ন’ নামে ছাত্রদের একটি সংগঠন অভিবাসী বাঙালি হিন্দু ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে আসছে। ওই আন্দোলন সহিংসতায় রূপ নিয়েছিল। এ আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ছিল অবৈধ অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশিদের আসাম থেকে বহিষ্কার করা।
১৯৮৫ সালে এই আন্দোলনের ফলে আসাম স্টুডেন্ট ইউনিয়নের ও ভারত সরকারের সঙ্গে এক চুক্তি সম্পাদিত হয়। এ চুক্তি মোতাবেক যারা ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পর্যন্ত অর্থাৎ ২৬ মার্চের আগ পর্যন্ত আসামে বসবাসরত ছিলেন, তারা ভারতের নাগরিক হিসেবে গণ্য হবেন। অন্য বহিরাগতদের অবশ্যই আসাম ছেড়ে চলে যেতে হবে। এ চুক্তিকে সবাই মেনে নেয়। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজিব গান্ধী এ চুক্তি সম্পাদনের পৃষ্ঠপোষকতা করেন এবং পার্লামেন্টে এ চুক্তিটি পাস করিয়ে নিয়ে আইনে রূপান্তর করেন। এর পর থেকেই অভিবাসীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযোগ ও প্রয়োজনে প্রায় জোর করেই আসাম থেকে বের করে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। এই অভিবাসী মুসলমান ও হিন্দুদের প্রায়ই অত্যাচারের শিকার হতে হয়। একমাত্র ভোটের সময়ই তাদের ব্যবহার করা হয় অধিক ভোটগ্রহণের প্রত্যাশায়। অসমিয়া সম্প্রদায়ের কয়েকটি সংগঠন রীতিমতো প্রতিনিয়তই আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে অভিবাসীদের আসাম থেকে বহিষ্কার করার জন্য। তাদের এই আন্দোলন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নয়, বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে আসা অবৈধ অধিবাসীদের বিরুদ্ধে।
রাজেন গোহাইনের যখন এ সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে একটি সুষ্ঠু পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলছেন তখন তার বিরুদ্ধেই প্রতিবাদ তুলেছে অসমিয়া সম্প্রদায়ের কয়েকটি সংগঠন। অনেকে তার কুশপুত্তলিকা দাহ করেছে। রাজেন গোহাইন নিজেও অসমিয়া। ‘অল আসাম স্টুডেন্টস ইউনিয়ন’-এর সভাপতি নিতুল বুরাগোহাইন বলেছেন, ‘তিনি যা বলেছেন তা অত্যন্ত লজ্জাজনক এবং এটা কখনোই হবে না। এর জন্য তার ক্ষমা চাওয়া উচিত’। সম্পাদনা: এম রবিউল্লাহ
সূত্র: নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস অবলম্বনে