জঙ্গি কর্মকা-ের তদন্তে ব্যস্ত পুলিশ নজর এড়াচ্ছে রাজধানীর ছিঁচকে সন্ত্রাসীরা
বিপ্লব বিশ্বাস: জঙ্গি কর্মকা-ের তদন্তে ব্যস্ত থাকার কারণে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর নজর এড়াচ্ছে রাজধানীর ছিঁচকে সন্ত্রাসীরা। এ সব সন্ত্রাসীর বেপরোয়া চলাফেরা ও অপরাধমূলক কর্মকা-ের ফলে নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হচ্ছে সমাজে। দিনে দিনে এ সব সন্ত্রাসীর সংখ্যা বেড়েছে, পাল্টেছে সন্ত্রাসের ধরন।
অভিযোগে প্রকাশ, এ সন্ত্রাসীরা রাজনৈতিক দলের নাম ব্যবহার করে চাঁদাবাজি, জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায়সহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধ করে যাচ্ছে। রাজধানীতে এরকম দুশতাধিক ছিঁচকে সন্ত্রাসীর তথ্য রয়েছে পুলিশের হাতে।
সম্প্রতি বনানী এলাকায় ক্ষমতাসীন দলের একটি অঙ্গ সংগঠনের নেতার নেতৃত্বে গড়ে উঠেছে বিশাল এক সন্ত্রাসী বাহিনী। এই বাহিনী দলের নাম ভাঙ্গিয়ে অত্র এলাকায় চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছে। গত ১৫ নভেম্বর রাতে নয়ন নামে এক ব্যবসায়ীকে আটকে নিজ কার্যালয়ে মারধর করে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে মোটা অংকের চাঁদা আদায় করে। পরে তারাই আবার হাসপাতালের সামনে ফেলে আসে। এ ছাড়া তার কিছুদিন আগে এক রিকশা চালককে গুলি করে টাকা ছিনিয়ে নেয় এই সোহেল। ওই নেতার সহযোগীরা হলেন, ভাতিজা জাকির, রবি ওরফে চাঁদা রফি, রিপন (দক্ষিণ পাড়া), রাশেদ, মাদক সম্রাজ্ঞী সুফিয়ার ছেলে শাহআলম ওরফে প্রিন্স। এদের কাছে বিপুল অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রও রয়েছে। পুলিশের নখদর্পণে থাকলেও ক্ষমতাসীন দলের নেতা হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছে না বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
এ ছাড়া নতুন করে আলোচিত নামগুলো হচ্ছে, জামিল, নিয়াজ, মোরশেদ, গাজী সুমন, মামুন, কালা মামুন, মামুন জোয়ার্দার, টুন্ডা মামুন, টুন্ডা আক্তার, টুন্ডা কাসেম, মামা আকরাম, হানিফ, মেহের, জাবেদ, পাটা রাসেল, ফারুক, আমির, পলাশ, শুভ, কমল, সজীব, জাকির, আলো, মুক্তার, হিন্দু রনি, রানা, জুয়েল, পাভেল, সোহেল, বুদ্ধু লিটন, দাদা লিটন, মগা লিটন, ডাকাত কাশেম, পাঞ্চিং সিরাজ, হানিফ, আন্দা বাবু, আরজু, ইনছান, বড় মালেক, ছোট মালেক, সাজু, বিদ্যুৎ, আলী, মালেক, রহমান, তুষার, মুন্না, আরিফ, বিকি, মিঠু, রানা, সাঈদ, রানা, আমান, নাহিদ, তারিক, বকুল, তুহিন, বসন্ত শ্যামল, বিল্লাল, শামসু, বিদ্যুৎ, নওশাদ, বুদ্দিন, ফয়সাল, মনির ও কবরস্থানের আনোয়ার। এলাকাবাসী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী জামিল, নিয়াজ, মোরশেদ ও গাজী সুমনসহ একটি অংশ কাজ করে শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদাতের হয়ে। শাহাদাত আটটি হত্যাসহ ১৬ মামলা মাথায় নিয়ে পালিয়ে গিয়ে ভারতে আত্মগোপন করে আছেন।
সম্প্রতি মিরপুরে রিয়াজ উদ্দিন (ছদ্মনাম) নামে এক ব্যবসায়ীর কাছে শাহাদাতের হয়ে সাড়ে ৯ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। না হলে প্রাণে মারার হুমকি দেওয়া হয়। তাৎক্ষণিকভাবে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে বাকি টাকার জন্য সময় নেন রিয়াজ উদ্দিন। পরে র্যাবকে ঘটনা জানিয়ে সহযোগিতা চান। র্যাবের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে সেই চাঁদার অর্থ আনতে গিয়ে ধরা পরে ইয়ামিন সরকার ওরফে মন্টি, সেন্টু মিয়া, বাবু আহমেদ, ওরফে সুমন, সোলাইমান কাদের ওরফে পাভেল ও মাসুদ রানা ওরফে রানা নামে শাহাদাতের ছয় সহযোগী।
শ্যামপুরের আরেক অংশ নিয়ন্ত্রণ করছে বিদেশে পালিয়ে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীর মদতপুষ্ট আরিফ, বিকি, মিঠু, রানা, সাঈদ, তারিকসহ বেশ কয়েকজন। এদের বেশিরভাগই আবার মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। পুরান ঢাকার আরেক ত্রাসের নাম ছিল ডাকাত শহীদ। পুরান ঢাকাসহ গোপীবাগ, স্বামীবাগ, ওয়ারী ও করাতিটোলাসহ যাত্রাবাড়ী এলাকায়ও বেশ প্রভাব ছিল ডাকাত শহীদের। র্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত হয় শহীদ। বর্তমানে মামুন, কালা মামুন, মামা আকরাম, হানিফ, মেহের, জাবেদ, মামুন জোয়ার্দার, টুন্ডা মামুন,পাটা রাসেল, ফারুক, আমির, পলাশ, শুভ, কমল, সজীব, জাকির, আলো, মুক্তার, হিন্দু রনি, রানা, জুয়েল, পাভেল, সোহেল, দাদা লিটন, মগা লিটন, ডাকাত কাশেম, পাঞ্চিং সিরাজ, বুদ্ধু লিটন ও হানিফ চালাচ্ছে সন্ত্রাসী কর্মকা-। আর ক্রসফায়ারে নিহত হয় জেল ফেরত মতিন ওরফে ডাকাত মতিন। তারা সবাই ডাকাত শহীদের অনুসারী। নিহত হওয়ার আগে মতিন আলাদা বাহিনী গড়ে তোলেন। তার মৃত্যুর পর গ্রুপ সামলাচ্ছেন, শ্যুটার ময়না, বাবু ওরফে ফয়সাল বাবু, লিটন ওরফে হকার্স লিটন, রনি ওরফে ভাগিনা রনি, রিপন, মল্লিক ও জামান। যাত্রাবাড়ী ও ডেমরা এলাকার নিয়ন্ত্রণে আছে মাতুয়াইলের বকুল, কবরস্থানের আনোয়ার, তুহিন, সায়েদাবাদের বসন্ত শ্যামল, বিল্লাল, টুন্ডা আক্তার, টুন্ডা কাসেমসহ বেশকিছু তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী। এর মধ্যে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালকেন্দ্রিক কিছু সন্ত্রাসী আছে যারা মালিকদের জিম্মি করে বিভিন্ন রুটের বাস থেকে চাঁদাবাজি করে। এর মধ্যে অন্যতম হযরত আলী। তার বিরুদ্ধে ২০টির মতো মামলা আছে।
এদিকে ৪ ডিসেম্বর র্যাবের অভিযানে ৪টি বিদেশি পিস্তলসহ আটক হয় বাড্ডার ত্রাস ডিস্ক জকি অনিকের ৫ সহযোগী। র্যাব জানায়, অনিকের মাধ্যমে অন্তত ৫০টি বিদেশি পিস্তল বিক্রি হয়েছে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায়। সে সরকারি দলের ব্যানারে প্রশাসনের ছত্রছায়ায় বাড্ডা ও আশপাশের এলাকায় অস্ত্র, মাদক ও দেহব্যবসা, বালুর গদি, ভবনের নির্মাণ সামগ্রী সাপ্লাইসহ নানা অপরাধ কর্মকা- চালাত। অভিযানের সময় অনিক পালিয়ে যায়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য বিভাগের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার আব্দুল বাতেন বলেন, দেশে এখন নতুন কোনো শীর্ষ সন্ত্রাসী নেই। এখন যারা সন্ত্রাসী কর্মকা- করে তারা ভিন্ন কৌশলে রাজনৈতিক ব্যানার ও ব্যবসার আড়ালে চলে গেছেন। এরা সকলেই ছিঁচকে সন্ত্রাসী। মাঝে মধ্যে যাদের নামে ফোনে চাঁদাবাজির অভিযোগ পাওয়া যায় তার অধিকাংশই ভুয়া। এর অধিকাংশই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নাম ভাঙ্গিয়ে এক প্রকার প্রতারণা। আমরা থেমে নেই। অভিযোগমূলে তাদের বিভিন্ন সময় গ্রেফতার করা হচ্ছে।