শেষ ভালোর আশায় কঠোর নির্দেশ ইসির
দেলওয়ার হোসাইন: আগামী ২২ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করাই বর্তমান নির্বাচন কমিশনের শেষ চ্যালেঞ্জ। তাই অতীতের সব বদনাম ঘুচিয়ে এ নির্বাচন সুষ্ঠু করার মধ্যদিয়ে জনগণের আস্থা ফিরে পাবার আশায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিনিধিদের কঠোর নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
গতকাল শনিবার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ইসির বৈঠকে এ নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। বৈঠকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বলেন, নির্বাচনে হাজার হাজার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী থাকতে মুষ্টিমেয় সন্ত্রাসী কিভাবে জাল ভোট ও ব্যালট পেপার ছিনতাই করে। সন্ত্রাসীদের কঠোর হস্তে দমন করতে হবে। ভোটের আগের রাতে যেন কোনোভাবেই ভোট দিতে না পারে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অনিয়ম হলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না বলেও জানান সিইসি।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আইন-শৃঙ্খলার সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে শনিবার শেরেবাংলনগরে এনইসি মিলনায়তনে বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, আনসার-ভিডিপি, কোস্টগার্ড, গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধি, রিটার্নিং কর্মকর্তা, জেলা ও স্থানীয় পুলিশ, প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা ও সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিনিধিও উপস্থিত ছিলেন।
ইসি কর্মকর্তারা বলেন, এ নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য বৈঠকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিনিধিদের কঠোর নির্দেশ দিয়েছে ইসি। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে প্রত্যেকের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের কথাও বলা হয়েছে। শেষ পর্যায়ের এ নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সব ধরনের পরিকল্পনা নিয়েছে কমিশন।
বৈঠকে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. জাবেদ আলী বলেন, এ নির্বাচন সুষ্ঠু করতে যা যা প্রয়োজন তাই করতে হবে। কোনো ধরনের অনিয়ম বরদাস্ত করা হবে না।
নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজ বলেন, ভোট শেষে সাধারণ মানুষ যেন বলে ভোট সুষ্ঠু হয়েছে। সবার কাছে এ নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে সবাইকে কাজ করতে হবে। কোনো ধরনের অনিয়ম হলে সঙ্গে সঙ্গে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নারায়ণগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মঈনুল হক বৈঠকে বলেন, নারায়ণগঞ্জে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিকের চেয়ে সুন্দর রয়েছে। আশা করি ভবিষ্যতে তা আরও উন্নত হবে। এখন পর্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি। সন্ত্রাসী ও মাস্তানদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে। আশা করি এ নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হবে।
এ বিষয়ে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন এ প্রতিবেদককে বলেন, নারায়ণগঞ্জ নির্বাচন এমনিতেই উত্তপ্ত বিষয়। নির্বাচন কমিশন যদি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে চায়, তাহলে আগে থেকে তাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। যদি নারায়ণগঞ্জ সিটিতে সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারে তাহলে বর্তমান কমিশন অন্তত একটা ভালো কিছু হাতে নিয়ে যেতে পারবে। আর যদি নির্বাচনটি বিতর্কিত হয়ে যায় তাহলে তো বলার কিছু নেই। এম সাখাওয়াত হোসেন, ২০১১ সালে আমরা যখন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন করেছিলাম তখন সেনা মোতায়েন নিয়ে সরকারের সঙ্গে নানারকম টানাপড়েন হয়েছিল। যেহেতু সেই নির্বাচনটা আমরা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছিলাম আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এবং নির্বাচন কমিশনের সদস্যদের দ্বারা। সে কারণে নির্বাচনে যে ধরনের সহিংসতা হবার কথা ছিল সেরকমটি হয়নি। ২০১১ সালের মতো এত সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন আগে কখনও হয়নি। সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হলে বর্তমান কমিশনকে ফলোআপ প্ল্যানিং করতে হবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ সব নির্বাচন কমিশনারকে এ নির্বাচনের সঙ্গে সংযুক্ত হতে হবে। তারা যদি মনে করে রিটার্নিং অফিসার এবং তাদের লোক দিয়েই নির্বাচন সুষ্ঠু হয়ে যাবে। তাহলে কখনই নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। এখন তাদের শেষ সময়। বর্তমান নির্বাচন কমিশন কেমন ছিল, তারা কি করেছে ইতিহাসই বলবে। নির্বাচন কমিশনের জন্য এই নির্বাচন একটা চ্যালেঞ্জ। তাই সুষ্ঠু নির্বাচন করতে রিটার্নিং অফিসারকে তাদের পুরো সমর্থন দিতে হবে।