নূসরাত জাহান: আড়াই বছর আগে যাত্রীবোঝাই এমএইচ৩৭০ বিমানটি মালয়েশিয়া থেকে চীনে যাচ্ছিল। উড্ডয়নের আধঘণ্টা পর মাঝ আকাশ থেকে হঠাৎই রাডারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় বিমানটির। এরপর থেকেই নিখোঁজ। আর তার হদিস মেলেনি। বিমানের ২৩৯ জন যাত্রী ও ক্রুর ভাগ্যে কী হয়েছে তা-ও জানা যায়নি। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গায় সমুদ্রে ভেসে থাকা জিনিসপত্র দেখে নিখোঁজ বিমানের ধ্বংসাবশেষ বলে ভেবেছিলেন উদ্ধারকারীরা। এর মধ্যে কিছু ধ্বংসাবশেষও উদ্ধার করা হয়েছে। তবে বিমান নিখোঁজ রহস্যের কোনো কিনারা হয়নি আজও। ২০১৪ সালের ৮ মার্চ কুয়ালালামপুর থেকে বেইজিং যাওয়ার পথে নিখোঁজ হয় এমএইচ৩৭০। বোয়িং ৭৭৭ বিমানটি নিখোঁজের পরে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে চলেছে তল্লাশি। এত দীর্ঘ সময় ধরে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে কোনো বিমানের খোঁজেই তল্লাশি চলেনি আগে কখনো।
বিমানের কোনো সন্ধান না পাওয়ায় বিশেষজ্ঞরা এর অনুসন্ধানের কাজ বন্ধ করে দেয়। তবে একদল মানুষ এখনো বিমানটির সন্ধান চালিয়ে যাচ্ছেন। বিমানটির সঙ্গে আসলে কী হয়েছিল সেই রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সেটা কোনো বিশেষজ্ঞ দল নয়। নিখোঁজ বিমানের সঙ্গে স্বজন নিখোঁজ হওয়া ৮ জন। তারা একত্রিত হয়ে অর্থ সংগ্রহ করে ‘আধুনিক যুগের ইন্ডিয়ানা জোন্স’ খ্যাত ব্লানি এলান গেবসনকে বিমান রহস্য উদঘাটকের দায়িত্ব দিয়েছেন। তিনি মাদাগাস্কারের দুর্গম এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন বিমানের ধ্বংসাবশেষ উদ্ধারের জন্য। এরইমধ্যে তিনি বেশকিছু অংশ উদ্ধারও করেছেন।
গ্রেস সুবাথিরাই-এর মা ছিলেন নিখোঁজ বিমানে। মাদাগাস্কারের বিভিন্ন সমুদ্র সৈকতে সম্প্রতি কুড়িয়ে পাওয়া এমএইচ৩৭০ বিমানের কিছু ধ্বংসাবশেষের ছবি তিনি ফেসবুকে পোস্ট করে লিখেছেন, ‘রাইকা সৈকতে সম্প্রতি এমএইচ৩৭০ বিমানের ধ্বংসাবশেষের একটি অংশ উদ্ধার করা হয়েছে। আমাদের মধ্যে এই প্রথম কেউ ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করল। এটা পাওয়ার পর মনের মধ্যে একই সঙ্গে দুঃখ, বেদনা, সংশয় ও আশার সৃষ্টি হয়েছে।’
স্বজনহারা এই ৮ জনের আশা তাদের প্রয়াস হয়তো বিমান নিখোঁজ রহস্যের কিনারা করতে পারে। গ্রেস বলেন, তারা সৈকতের কাছেই ধ্বংসাবশেষ পেয়েছে। এটা সমুদ্রের খুব গভীরে ছিল না। তবে কেন উদ্ধারকারীরা কোনো ধ্বংসাবশেষ পেলেন না তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন এই স্বজনহারারা। তবে মাদাগাস্কারের সমুদ্র সৈকতের বেশিরভাগ মানুষই এমএইচ৩৭০ বিমানের নিখোঁজ হওয়ার খবর জানে না। এ নিয়ে গ্রেস বলেন, ‘মাত্র একজন স্থানীয় বাসিন্দা বিমানের খবরটি জানেন। তাদের হয়তো অনেকেই বিমান কখনও চোখেও দেখেনি। কিন্তু তারা আমার স্বজন হারানোর দুঃখ ঠিকই বুঝতে পেরেছেন।’ সূত্র: বিবিসি। এফএ। সম্পাদনা: হাসিবুল ফারুক চৌধুরী