ডিজে অনিকের ২০ সহযোগীর কাছে ৫০টি অবৈধ অস্ত্র! দেশের ২৫ সীমান্ত এলাকা থেকে অবাধে ঢুকছে অবৈধ ক্ষুদ্রাস্ত্র
বিপ্লব বিশ্বাস ও সুজন কৈরী: রাজধানীতে অন্তত ৪৫-৫০টি অবৈধ বিদেশি পিস্তল বিক্রি করেছে তারেক আহমেদ অনিক নামে এক ডিস্ক জকি (ডিজে)। মাদক ব্যবসা সামলানোর জন্য অস্ত্র সংগ্রহ করতে গিয়ে অবৈধ অস্ত্র ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন তিনি। অস্ত্র, চাঁদাবাজি, দেশি-বিদেশি মাদক, দেহ ব্যবসা, পানির ব্যবসা, নির্মাণ সামগ্রী সরবরাহে প্রভাব বিস্তার, বালুর গদি দখলসহ বিভিন্ন অপকর্ম চালিয়ে আসছিলেন অনিক। সম্প্রতি রাজধানীর বাড্ডা থেকে চারটি বিদেশি পিস্তলসহ পাঁচজনকে আটক করে র্যাব-১। এরপর ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে বের হয়ে আসে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য।
র্যাব-১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সোর্সের পরিচয়ে এলাকায় দীর্ঘ দিন নির্বিঘেœ অস্ত্র ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপকর্ম করে যাচ্ছিল অনিক। তিনি আরও জানান, অস্ত্র চালানের মূলহোতা পলাতক অনিক, পিতা আবু তাহের আহমেদ উত্তর বাড্ডার জিএম বাড়ির সচ্ছল পরিবারের সন্তান। সে ঢাকার মানারাত স্কুলের সাবেক ছাত্র এবং পেশায় ডিজে। এই পেশায় জড়ানোর সুবাদে সে মাদক ও বিভিন্ন
নারীর সান্নিধ্যে আসে। এমনকি মাদকাসক্ত হওয়ার পর এক সময় সে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। অল্প সময়ে সে ওই এলাকার মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করে। এজন্য তার অস্ত্রের প্রয়োজন দেখা দেয়। অবৈধ অস্ত্র সংগ্রহ করতে গিয়ে পরিচয় ঘটে অস্ত্র ব্যবসায়ীদের সঙ্গে। ধীরে ধীরে মাদক ব্যবসার পাশাপাশি অস্ত্র ব্যবসায়ও জড়িয়ে পড়ে অনিক। এ অস্ত্রগুলো রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকা থেকে সংগ্রহ করে ঢাকায় আনা হতো বলে জানানো হয়। পলাতক অনিকের ১৫ থেকে ২০ জন সহযোগী রয়েছে বলেও জানান এই র্যাব অধিনায়ক। আটকদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে জানানো হয়, এ পর্যন্ত অনিকের মাধ্যমে ৪৫ থেকে ৫০টি অবৈধ বিদেশি পিস্তল ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি হয়েছে। যার অধিকাংশের তালিকা হাতে এসেছে।
সূত্র জানায়, বনানী এলাকায় থানা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক পদের এক নেতা রাজনৈতিক নাম ব্যবহার করে অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার করে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাচ্ছে। তার দলের অপর সদস্য ভাতিজা জাকির, রবি ওরফে চাঁদা রফি, রিপন (দক্ষিণ পাড়া), রাশেদ, মাদক সম্রাজ্ঞী সুফিয়ার ছেলে শাহআলম ওরফে প্রিন্স এদের হাতে বিভিন্ন সময় অবৈধ অস্ত্র দিয়ে মহড়া দিতে দেখা গেছে। এছাড়া পুরান ঢাকা, মৌচাক, মালিবাগ ও মহাখালী এলাকার বেশকিছু সন্ত্রাসীর নাম পাওয়া গেছে যারা ডিজি অনীকের কাছ থেকে অস্ত্র কিনে থাকতে পারে। র্যাবের ধারণা এই অস্ত্র হয়তো ডিজে অনীকের কাছ থেকেই সংগ্রহ করেছে তারা। তাদের আটকে অভিযান চলছে বলেও র্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
গত ৪ ডিসেম্বর রাতে ডিজে অনীকের ৫ সহযোগীকে রাজধানীর বাড্ডা থেকে চারটি অবৈধ ক্ষুদ্রাস্ত্রসহ গ্রেফতার করে র্যাব। তারা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে রাজশাহী হয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে এসব ক্ষুদ্রাস্ত্র। সরবরাহের এ কাজে তারা মোটা অঙ্কের টাকাও পাচ্ছে। সম্প্রতি রাজধানীর ফুটপাত দখল উচ্ছেদ অভিযানে প্রকাশ্যে ক্ষুদ্রাস্ত্রের প্রদর্শনের দায়ে বহিষ্কৃত হন দুই ছাত্রলীগ নেতা।
অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সন্ত্রাসীদের পাশাপাশি রাজনৈতিক নেতার প্রশ্রয়ে দেশের অন্তত ২৫টি সীমান্ত রুটে দেশে ঢুকছে অবৈধ ক্ষুদ্রাস্ত্রের চালান। ২৫-৩০ হাজার টাকা মূল্যের এসব ক্ষুদ্রাস্ত্র বিক্রি হচ্ছে ৫০-৮০ হাজার টাকায়। ক্ষুদ্রাস্ত্রের এ ব্যবসায় জড়িত রাজধানীর অন্তত ১৫টি গ্রুপ। চোরাইপথে আগ্নেয়াস্ত্রের অধিকাংশ চালানই আসছে ভারত-পাকিস্তান থেকে। তাছাড়া চীনসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আসা আগ্নেয়াস্ত্র ভারতকে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করছে। গুলশান হামলায় ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্রও ভারত হয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছিল। সম্পাদনা: শাহানুজ্জামান টিটু