প্রার্থীদের আমলনামা দেখে ভোট দিন দলীয় প্রতীক স্থানীয় নির্বাচনে গুরুত্ব হারিয়েছে : সুজন
হাসান আরিফ, নারায়ণগঞ্জ থেকে ফিরে: নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন (এনসিসি) নির্বাচনে দলীয় প্রতীক নিয়ে আসায় স্থানীয় নির্বাচন গুরুত্ব হারিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। তারপরও সুজন চায়- ভোটাররা প্রার্থীদের আমলনামা দেখে ভোট প্রদান করুক। নির্বাচনে রাজনীতিকরণ করায় এখন ভোটাররা মার্কা নিয়ে কথা বলছে। যেখানে স্থানীয় উন্নয়ন নিয়ে কথা বলার কথাছিল। গতকাল নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাব মিলনায়তনে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনের প্রতিপ্রাদ্য বিষয় ছিলÑ নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোট প্রদানের ক্ষেত্রে সৎ, যোগ্য ও জনকল্যাণে নিবেদিত ব্যক্তিকে নির্বাচিত করতে ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানানো।
সুজনের সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দীলিপ সরকার। এসময় উপস্থিত ছিলেন সুজনের কেন্দ্রীয় সহযোগী সমন্বয়ক সানজিদা হক, জেলা সভাপতি আবদুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক ধীমান সাহা জুয়েল, সহ-সাধারণ সম্পাদক এস এম এইচ টিটু, আঞ্চলিক সমন্বয়ক মশিকুল ইসলাম শিমুল। এর আগে এসব দাবিতে তারা নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেন। লিখিত বক্তব্যে এনসিসি নির্বাচনে সৎ, যোগ্য ও জনকল্যাণে নিবেদিত ব্যক্তিকে নির্বাচিত করার আহ্বান জানিয়েছে সুজন। একই সঙ্গে অর্থ,
প্ররোচনা ও আবেগের বশবর্তী হয়ে সন্ত্রাসী, মাদক ব্যবসায়ী ও দুর্নীতিতে জড়িত ব্যক্তিকে ভোট না দেওয়ারও আহ্বান জানানো হয়। একই সঙ্গে নির্বাচন কমিশনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য বলা হয়েছে। এজন্য সেনাবাহিনী মোতায়নের প্রয়োজন হলে তাও কমিশনকে বিবেচনায় নিতে বলা হয়েছে। লিখিত বক্তব্যে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র, সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর ও সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থীদের হলফনামায় তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, আয়ের উৎস, ঋণখেলাপি ও মামলায় জড়িত থাকার বিষয়টি বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। এসময় প্রার্থীদের নির্বাচনি আচরণবিধি মেনে চলা, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রতিও তারা দাবি জানান।
আগামী ১৭ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়ায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিশিষ্ট নাগরিকদের উপস্থিতিতে মেয়র প্রার্থীদের নিয়ে জনগণের মুখোমুখি অনুষ্ঠান করবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানায় সুজন। এতে সাধারণ নাগরিকরা মেয়র প্রার্থীদের প্রশ্ন করতে পারবেন।
সুজনের দেয়া তথ্যে দেখা যায়, বার্ষিক আয়ের ঘরে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী ১১ লাখ ৩৪ হাজার টাকা আর বিএনপির প্রার্থী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খাঁন ৮ লাখ ৬৯ হাজার ১০০ টাকা উল্লেখ করেছেন। কর প্রদানসংক্রান্ত তথ্যে দেখা যাচ্ছে- আইভী বেশি টাকা আয় করেও ২৩ হাজার ৪০০ টাকা কর প্রদান করছেন। সাখাওয়াত হোসেন আইভী থেকে কম আয় করেও ২৮ হাজার ৩৬০ টাকা প্রদান করছেন।
এ বিষয়ে সাংবাদিকরা দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সুজন সমন্বয়ক দিলীপ কুমার সরকার বলেন, এখানে প্রার্থী আইভীর রেয়াত নেয়ার (মওকুফ) মতো কোনো বিষয় থাকতে পারে। হলফনামায় যা পেয়েছি তা উল্লেখ করা হয়েছে।
সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় মেয়র প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী হলফনামায় ‘অসামঞ্জস্য’ তথ্য দিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দীলিপ কুমার সরকার। সংবাদ সম্মেলনে সুজনের লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, “মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী তার হলফনামায় পেশার ঘরে ‘চিকিৎসক’ উল্লেখ করলেও তার আয়ের উৎস হচ্ছে জনপ্রতিনিধি হিসেবে প্রাপ্ত বেতন-ভাতা।” বিষয়টি তথ্য গোপন বা অসত্য তথ্য প্রদানের মধ্যে পড়ে কি না গণমাধ্যমকর্মীদের এমন প্রশ্নের জবাবে সুজনের পক্ষ থেকে সরাসরি কোনো উত্তর না দিলেও বিষয়টি ‘সামঞ্জস্যপূর্ণ’ নয় বা ‘অসামঞ্জস্য’ বলে উল্লেখ করা হয়। তবে বিষয়টি দেখার দায়িত্ব সুজনের নয় নির্বাচন কমিশনেরÑ এমন মন্তব্য করেন নেতৃবৃন্দ। সম্পাদনা: আলাউদ্দিন