কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কাছে প্রত্যাশা
সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী, ব্যবসায়ী, আওয়ামী লীগের সাবেক আন্তর্জাতিক সম্পাদক সৈয়দ আবুল হোসেন বেশ কয়েকটি বই লিখেছেন। সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে ‘আমার কথা’। এই বইয়ে তিনি নিজের চিন্তা, কর্মকা-, মূল্যবোধ, নানা অভিজ্ঞতা ও পরিকল্পনা সম্পর্কে লিখেছেন। এটি পড়লে তাকে যারা পুরোপুরি চিনেন না তাদের সুবিধা হবে। বইটি ‘আমাদের অর্থনীতি’ ধারাবাহিকভাবে ছাপছে। আজ পড়–নÑ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কাছে প্রত্যাশা।
একজন ভালো কর্মকর্তার কাছে তার কাজ ও দেশ নিজের চেয়ে প্রিয় এবং যে অফিসার এ বোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে কাজ করেনÑ তিনি আর অফিসার থাকেন না, বিলীন হয়ে যান অনিবার্য দেশপ্রেমের বিশাল পরিম-লে। আমার অফিসে যাঁরা আমার সঙ্গে কাজ করেন তাঁরা আমাকে জিজ্ঞেস করেনÑ আমাদের কাছ থেকে আপনি কী প্রত্যাশা করেন?
আমার উত্তর : একটি অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ হচ্ছে ওই অফিসের উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি। তারা আমাদের সত্যিকারের সম্পদ। তারা কাজ করলেই উন্নয়ন হবে, কিন্তু কাজ না করলে প্রতিষ্ঠান লোকসানের মুখোমুখি হবে। তেমনি সরকারি কাজের বেলায়ও একই নিয়ম। সরকারি কাজের উন্নয়নে, আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য বাস্তবায়নে এবং জনগণের প্রত্যাশা পূরণে তাদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। মহান উদ্দেশ্য সাধনের জন্য প্রয়োজন হয় একটি মহৎ দলের। মহৎ দল ছাড়া কোনো মহৎ কাজ সম্পন্ন হয় না।
সরকারি উন্নয়ন সম্ভব হয় তার কর্মীবাহিনীর উন্নয়নের মাধ্যমে। সৃজনশীল কর্মচারীদের লালন-পালন করলে, পুরো সরকারই সৃজনশীল হয়ে ওঠে। কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ প্রতিষ্ঠানের রক্তস্বরূপ। রক্ত যদি ভালো না হয়, তাহলে পুরো শরীর অকেজো হয়ে যায়। যখন নতুন নতুন প্রযুক্তি ও কলাকৌশল প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মচারীরা দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত হয়, তখন পুরো সরকার আধুনিক ও কার্যকর সরকারে পরিণত হয়। সরকারের প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে কর্মীবাহিনী। সরকার তাদের উন্নয়নে কাজ করে এবং তাদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে, যাতে তারা দক্ষ হয়ে ওঠে, সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটিয়ে নিজেদের শ্রেষ্ঠ অবদানটা রাখতে পারে। এককথায় বলা যায়, কর্মকর্তা-কর্মচারী যেই হোক না কেন, প্রশিক্ষণের কোনো বিকল্প নেই। প্রশিক্ষণ শারীরিক কসরতের মতো প্রতিষ্ঠানকে অধিক কর্মক্ষম করে তোলে।
মহান উদ্দেশ্য সাধনের জন্য প্রয়োজন হয় একটি মহৎ দলের। মহৎ দল ছাড়া কোনো মহৎ কাজ সম্পন্ন হয় না।
আমার মনে হয়, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্তরের কর্মকর্তাদের জন্য একটি লিডারশিপ প্রোগ্রাম আয়োজন করা দরকার। আমাদের সেরা কর্মচারীদের পুরস্কৃত করা দরকার। অনেক ক্ষেত্রে তা করা হয়। পুরস্কার প্রদান ও উদ্দীপনা দানের ক্ষেত্র আরও বাড়াতে হবে। প্রতিযোগিতামূলক কর্মকা-ের মাধ্যমে কর্মচারীদের সর্বোচ্চ দক্ষতা বের করে আনতে হবে। আমরা জ্যেষ্ঠতা এবং কর্মদক্ষতার ওপর ভিত্তি করে কর্মচারীদের পদোন্নতি ও নিয়োগ দিয়ে থাকি। তবে পদোন্নতির ক্ষেত্রে কর্মদক্ষতা ও কর্মসম্পাদনকেই প্রাধান্য দেওয়া উচিত। চুল পাকলে অভিজ্ঞতা হবে, এমন ধারণা সবক্ষেত্রে ঠিক নয়।