পুলিশের সম্পৃক্ততা মেলেনি, ধরা পড়েনি সোর্স দেলোয়ার আগুনে চা বিক্রেতা বাবুলের মৃত্যু চলতি মাসেই চার্জশিট দাখিল
ইসমাঈল হুসাইন ইমু: রাজধানীর শাহআলীর গুদারাঘাট এলাকায় চুলার আগুনে পুড়ে চায়ের দোকানদার বাবুল মাতুব্বরের মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশের সম্পৃক্ততা মেলেনি। এ মামলার চার্জশিট চলতি মাসেই দাখিল করা হবে বলে তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
জানা যায়, গত ৩ ফেব্রুয়ারির ওই ঘটনার পর পুলিশের বিরুদ্ধে বাবুলের শরীরে আগুন দেওয়ার অভিযোগ উঠলেও তদন্তে তাদের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ কারণে ওই পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ঘটনার মূল হোতা পুলিশের সোর্স দেলোয়ার হোসেনকে এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
এদিকে এ ঘটনায় গ্রেফতারকৃত মাদক ব্যবসায়ী পারুলী বেগম জামিনে মুক্ত হয়ে বাবুলের ছেলে-মেয়েদের সমঝোতার জন্য চাপ দিচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পারুলী বেগমের বিরুদ্ধে হত্যায় প্ররোচনার মামলা হওয়ায় তাকে ঘটনার পরপরই গ্রেফতার করা হয়। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উপ-কমিশনার সাজ্জাদুর রহমান পরিবর্তন বলেন, বাবুলের মৃত্যুর ঘটনাটিতে পুলিশ সদস্যদের কোনো দায় না থাকলেও দায়িত্বে অবহেলা ছিল। এ কারণে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি মামলার তদন্তও শেষ পর্যায়ে। চলতি মাসেই এই মামলার চার্জশিট দেওয়া হবে। সেখানে দুইজনকে আসামি করা হচ্ছে। এরমধ্যে প্রধান আসামি দেলোয়ারকে গ্রেফতারে রাজবাড়ী, ফরিদপুর ও সাতক্ষীরাসহ বিভিন্নস্থানে অভিযান চালানো হয়েছে। তবে তাকে পাওয়া যায়নি। এখনও তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
তিনি বলেন, ঘটনাটির নিবিড় তদন্ত করে পুলিশের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সত্যতা মেলেনি। তবে মূল অভিযুক্ত দেলোয়ার পুলিশের সোর্স হওয়ায় সাধারণ মানুষের অনেকে তাকে পুলিশ সদস্য বলেই মনে করত। এ কারণে কিছুটা বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে। প্রকৃত অপরাধীদের বিরুদ্ধে শিগগিরই চার্জশিট দেওয়া হবে।
তদন্ত সংশ্লিষ্টদের দাবি, গুদারাঘাট এলাকার মাদক ব্যবসায়ী পারুলী বেগমের অধীনে কিছুদিন মাদক বিক্রি করেছেন বাবুল মাতুব্বর। পরে তিনি এককভাবে মাদক বিক্রি করতেন। এ নিয়ে পারুলীর সঙ্গে তার বিরোধ ছিল। তাই পারুলী পুলিশের সোর্স দেলোয়ারকে দিয়ে বাবুলকে এলাকাছাড়া করতে চাইছিলেন। এজন্য সম্ভবত তিনি কিছু টাকাও দিয়েছিলেন।
এরপর দেলোয়ার ঘটনার দিন বাবুলের দোকানে যায়। বাকবিত-ার একপর্যায়ে ধাক্কাধাক্কির সময় কেরোসিনের স্টোভ উল্টে বাবুলের শরীরে আগুন ধরে যায়। তখন কাছেই দায়িত্ব পালন করছিল পুলিশের একটি টহল দল। তারা ঘটনাস্থলে যায়। কিন্তু তখন স্থানীয় লোকজন পুলিশের ওপর প্রচ- ক্ষেপে যায়। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন ওই পুলিশ সদস্যরা।
সূত্র জানায়, দগ্ধ বাবুলকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার দায়িত্বটিও পালন করেনি পুলিশ। অথচ এ দায়িত্ব ছিল ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের। তদন্তে এটুকুই তাদের গাফিলতি থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ কারণে সংশ্লিষ্ট পাঁচ পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়। তারা হলেন- এসআই মোমিনুর রহমান খান, শ্রীধাম চন্দ্র হাওলাদার ও নিয়াজ উদ্দিন মেল্লা, এএসআই দেবেন্দ্র নাথ ও কনস্টেবল জসিম উদ্দিন।
এরপর ৪ ফেব্রুয়ারি শাহআলী থানার তখনকার ওসি একেএম শাহিন মন্ডলকেও প্রত্যাহার করা হয়। পরে তাদের সবাইকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। বিভাগীয় মামলার পর তাদের ‘গুরুদ-’ দেওয়া হয় বলে জানায় পুলিশ। তবে বাবুলের মৃত্যুর ঘটনায় মূলত দেলোয়ার ও পারুলের অপরাধের প্রমাণ মিলেছে। তাই তাদের চার্জশিটে আসামি করা হবে। মামলার বাকি আসামিদের অপরাধের প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি।
এদিকে বাবুল দগ্ধ হওয়ার পর ৩ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতে তড়িঘড়ি করে একটি মামলা নেয় শাহ আলী থানা পুলিশ। মৃতের মেয়ে রোকসানা আকতার মামলার বাদী হলেও তার ইচ্ছা অনুযায়ী এজাহার লেখা হয়নি বলে অভিযোগ ওঠে।
বাবুলের স্বজনরা তখন দাবি করেছিলেন, তারা পুলিশ সদস্যদের আসামি করতে চাইলে থানায় কর্তব্যরতরা সেসব নাম বাদ দিয়ে মামলা নথিভুক্ত করেন।
বাবুলের ছেলে রাজু আহমেদ বলেন, দেলোয়ারকে পুলিশ ভেবে তারা পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন। কিন্তু পরে জানতে পেরেছেন সে আসলে পুলিশের সোর্স। মূলত তার কারণেই দগ্ধ হয়ে মারা যান বাবুল। তিনি একসময় পারুলীর কর্মচারী হিসেবে কাজ করলেও পরে তা ছেড়ে দিয়েছিলেন। সম্পাদনা : শাহানুজ্জামান টিটু