একদিনে ৫৬৭০ বার অসমীয় পত্রিকায় লেখা হয়েছে ‘বাংলাদেশ’
মাছুম বিল্লাহ, গুয়াহাটি থেকে ফিরে: বাংলাদেশ ছাড়া বিশ্বের অন্য কোথাও এত বেশি ‘বাংলাদেশ’ শব্দের ব্যবহার হয় কিনা জানা নেই। তবে আমাদের প্রতিবেশী রাজ্য ভারতের আসামে উচ্চারিত হয় ‘বাংলাদেশ’ ও ‘বাংলাদেশি’। আমাদের অর্থনীতির একটি জরিপে দেখা গেছে, অসমীয় ভাষার পত্রিকায়গুলোতে একদিনে অন্তত ৫৬৭০ বার বাংলাদেশ বা বাংলাদেশি শব্দ লেখা হয়।
গত ২৬ নভেম্বর গুয়াহাটি থেকে প্রকাশিত অসমীয় ভাষার ৯টি দৈনিক পত্রিকা ঘেঁটে এ শব্দ সংখ্যা জানা যায়। পত্রিকাগুলো অসমীয় প্রতিদিন, জন্মভূমি, নিয়মীয়া বার্তা, অসমীয়া খবর, জনসাধারণ, গণঅধিকার, নিয়মীয়া খবর, অগ্রদূত, আজির অসম। তবে আসামে বাংলাদেশ বা বাংলাদেশি শব্দ নেতিবাচক অর্থে ব্যবহার করা হয়। শুধু আসামের সংবাদ মাধ্যমগুলোতেই নয়, অসমীয় টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতেও বাংলাদেশি ও বাংলাদেশ শব্দ বেশি উচ্চারিত হয়ে থাকে। আসামের টেলিভিশন চ্যানেল প্রতিদিন টাইম, নিউজ লাইভ, প্রাগ নিউজ, নিউজ অসম১৮, ডিওয়াই৩৬৫, আসাম টকসহ অন্যান্য টেলিভিশন চ্যানেল বাংলাদেশি ও বাংলাদেশ নিয়ে নেতিবাচক সংবাদ প্রচার করে বেশি। আসামে গত ১০ দিন অবস্থানের সময় এ বিষয়টি পরিলক্ষিত হয়েছে।
আসামের সিনিয়র সাংবাদিক প্রণব আচার্য্যে আমাদের অর্থনীতিকে জানান, ‘অসমীয় জাতীয়তাবাদীরা বাংলাদেশ বা ‘বাংলাদেশি’ শব্দকে গালি হিসেবে ব্যবহার করে। এর কারণ, অসমীয়দের ধারণা- একাত্তরের পর থেকে এক কোটিরও বেশি ‘বাংলাদেশি’ আসামে অবৈধ অনুপ্রবেশ করেছে। এতে অসমীয়রা সংখ্যালঘু হয়ে যাচ্ছে।’
বাঙালি এই সাংবাদিক জানান, ‘আসামের আঞ্চলিক দল অসম গণপরিষদ ও সদৌ অসম ছাত্র সংস্থা- আসুসহ কয়েকটি অসমীয় জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক দল ‘বাংলাদেশি’ ইস্যু নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছে। তারা এই আন্দোলনকে এমন পর্যায়ে নিয়ে গেছে যে, অসমীয়রা কারো প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ বা কাউকে হেয় করতে ‘বাংলাদেশি’ শব্দটা ব্যবহার করে।’
অসমীয় দৈনিকগুলোতে কেন এত বাংলাদেশ ও বাংলাদেশি শব্দ ব্যবহৃত হয়-এমন প্রশ্নের জবাবে প্রণব আচার্য্যে জানান, ‘বাংলাদেশি’ ইস্যুটা জিইয়ে রাখতে বেশি ভূমিকা রাখছে অসমীয় পত্রিকাগুলো। তারা অসমীয় জাতীয়তাবাদী দলগুলোর কোনো কর্মসূচি থাকলে তা ফলাও করে প্রকাশ করে। এছাড়াও সারাবছরই পত্রিকাগুলো এ ইস্যুতে কলাম, প্রবন্ধ লিখে থাকে।’
এ বিষয়ে আসামের শীর্ষ দৈনিক ‘অসমীয় প্রতিদিন’-এর সম্পাদক নিত্য বরা আমাদের অর্থনীতিকে জানান, ‘দেশ ভাগের পর থেকে আসামে অসংখ্য ‘বাংলাদেশি’ অনুপ্রবেশ করেছে। এতে আসামের জনবিন্ন্যাস নষ্ট হচ্ছে। এ কারণে অসমীয় ভূমিপুত্ররা এখন সংখ্যালঘু হয়ে গেছে। ‘বাংলাদেশি’রা আসামের ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সরকারি গুরুত্বপূর্ণ পদ ‘দখল’ করে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছে। বাংলা ভাষাভাষীদের কারণে অসমীয় ভাষা ও সংস্কৃতি হুমকির মুখে। এটা তো অসমীয়রা মানতে পারে না। এ জন্য তারা আন্দোলন করছে। এবং ‘বাংলাদেশি’ সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন তারা চালিয়ে যাবে।’
তিনি জানান, অসমীয় জাতীয়তাবাদের এ আন্দোলনে অসমীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো একাত্ব। এ কারণে আমরা (সংবাদ মাধ্যম) অসমীয়দের সচেতন করতে ভূমিকা রাখছি।’
আসামের আরেক শীর্ষ দৈনিক ‘অসমীয় খবর’-এর সম্পাদক শঙ্কর আমাদের অর্থনীতিকে জানান, ‘অবৈধ বাংলাদেশি’ ইস্যুতে আন্দোলন করতে গিয়ে ১৯৮৫ সালে ৮৫৫ জন অসমীয়া যুবক শহিদ হয়েছে। এ ইস্যু অসমীয় জাতীয়তাবাদের মূল ভিত্তি হিসেবে দেখা হয়। সুতারাং এটি নিয়ে অসমীয়রা আন্দোলন করবে এবং অসমীয় পত্রিকাগুলো তা ফলাও করে ছাপবে। সম্পাদনা : শাহানুজ্জামান টিটু