আলেপ্পোর যুদ্ধবন্দি শিশু বানার যুদ্ধবিরোধী প্রচারণা
কামরুল আহসান: মেয়েটির নাম বানা আলাবেদ। বয়স মাত্র ৭। ফোকলা দাঁতের হাসিমুখটি নজর কেড়েছে বিশ্বমিডিয়ার। সিএনএন তাকে নিয়ে প্রচার করেছে একটি বিশেষ প্রতিবেদন। নিউইয়র্ক টাইমসে তাকে নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি সংবাদ। বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ উদগ্রীব হয়ে থাকে তার একটি খবরের জন্য। সে ভালো আছে তো? বেঁচে আছে তো! কিন্তু, কেন তার প্রতি এই আগ্রহ? ২০১১ সালে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই বানা ও তার পরিবার গৃহবন্দি। তাদের বাড়ি পূর্ব অলেপ্পোর আল-বাবে। গত সেপ্টেম্বরের ২৬ তারিখ তার মা ফাতেমাহ আলাবেদ তার নামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে একটি একাউন্ড খুলেন। তারপর বানা টুইটারের মাধ্যমে বিশ্ববাসীর কাছে প্রচার করতে থাকে যুদ্ধবিরোধী আর্তনাদ। বানা লিখে, ‘আমাদের কাছে খাদ্য নেই, পানি নেই। প্রতিদিন আমাদের বাড়ির চারপাশে বোমা ফাটছে। যে কোনো মুহূর্তে আমরা মারা যেতে পারি।’
মোবাইলের মাধ্যমে প্রতিদিন সে টুইটারে ছোট ছোট পোস্ট দেয়, ছবি দেয়। তাকে পোস্ট দিতে সাহায্য করে তার মা ফাতেমাহ আলাবেদ। সিরিয়ান একটি শিশু কীভাবে ইংরেজিতে এতো সুন্দর করে লিখতে পারে এ নিয়েও সন্দেহ পোষণ করেছে অনেকেই। কেউ বলেছেন, বানা নামে আসলে কেউ নেই। কিন্তু, ফাতেমাহ আলাবেদ মেয়ে বানাকে নিয়ে অনলাইনের মাধ্যমে সিএনএন-এর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করেছেন। সিএনএনকে বলেছে, ‘আমরা এখনো এখানে আছি। আমরা কোনো প্রপাগান্ডার প্রচার করছি না। আমরা বাস্তব মানুষ। আমরা প্রতি মুহূর্তেই বেঁচে থাকার জন্য যুদ্ধ করছি। আমরা আলেপ্পোর প্রকৃত মানুষ।’
ফাতেমাহ আলাবেদ আলেপ্পোর একটি স্কুলে ইংরেজি শিক্ষক। সিএনএন-এর সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তিনি আরও বলেন, ‘বানা একটু একটু ইংরেজি পড়তে পারে। সেও বড় হয়ে একজন ইংরেজি শিক্ষক হতে চায়।
পূর্বে বানা টুইটারে তার ব্যক্তিগত তথ্যে জানিয়েছে, সে হ্যারি পটার খুব পছন্দ করে। টুইটারে অনেকের প্রশ্নের উত্তরও সে দেয়। ডিসেম্বরের প্রথম দিকে আলেপ্পোতে সরকারি বাহিনীর অনুপ্রবেশের ফলে বিদ্রোহী বাহিনী ও আইএস বাহিনী পিছু হটে যায়। তখন ৪ ডিসেম্বর থেকে ৬ ডিসেম্বর, এই দুদিনের জন্য তাদের টুইটার একাউন্টটি বন্ধ ছিল। এবং তাদের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। তখন সবাই চিন্তিত হয়ে পড়ে তাদের নিয়ে। বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে অসংখ্য মানুষ তাদের ব্যক্তিগত যোগাযোগ মাধ্যমে বানা ও তার পরিবারকে নিয়ে উদ্বিগ্নতা প্রকাশ করে। বানা বেঁচে আছে তো! দুদিন পর বানা নিজের একাউন্ট থেকে জানায় তারা ভালো আছে। বাড়ি ছেড়ে তারা এখন একটা নিরাপদ আশ্রয়ে পালিয়ে এসেছে। বানার প্রচারণার জন্য ইতোমধ্যে বিদ্রোহী বাহিনী ও আইএসও তাদের বাড়িটিকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করে রেখেছে। অনেকে তাদের মেরে ফেলার হুমকিও দিয়েছে টুইটারে। ফাতেমাহ আলাবেদ জানান, তারা কোনো পক্ষেই নেই। তারা সাধারণ জনগণ। তারা শুধু এই যুদ্ধের হাত থেকে মুক্তি চান।
বানারা তিন ভাইবোন। তার ছোট দুটো ভাই মুহাম্মদ আর নূরের বয়স এখন যথাক্রমে ৫ আর ৩। বানা তার টুইটারে লিখেছে, ‘যুদ্ধ বন্ধ করো। আমরা খেলতে পারছি না। ঘর থেকে বের হতে পারছি না। বোমার শব্দে আমার ছোই ভাই নূর এখনো কথা বলতে শিখতে পারছে না।’
সিএনএন, বিবিসি, উইকিপিডিয়া, ইউটিউব অবলম্বনে। সম্পাদনা: পরাগ মাঝি