জিয়ার কবরে লাশ নেই ছবি দিয়ে প্রমাণ করুন : মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী
শারমিন আজাদ: জিয়াউর রহমানের কবরে কোনো লাশের অস্তিত্ব নেই। প্রমাণ করতে ডিএনএ টেস্ট এবং সে সময়কার তোলা ছবি দিয়ে প্রমাণ করার আহ্বান জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক। জাতির সামনে দাফনের ছবি প্রকাশ করে এবং ডিএনএ টেস্টের ফলাফল জানিয়ে এ ভুল বোঝাবুঝি নিশ্চিত করার কথা বলেছেন তিনি। তবে এ নিয়ে বিএনপি রাজনৈতিক সংকট তৈরি করতে পারে এমন আশংকার কথা জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, তবে এতে ইতিহাস বিকৃত হবে না।
মন্ত্রণালয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের নতুন তালিকা তৈরির বিষয়ে একাত্তর টেলিভিশন ও আমাদের অর্থনীতির সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে জিয়াউর রহমানের কবরে লাশের অস্তিত্ব নেই বলে মন্তব্য করেছেন মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক। তিনি জানান, সংসদ ভবন থেকে জিয়ার কবর সরানোর বিষয়ে স্পিকারের কাছে অনেক আগেই চিঠি দিয়েছেন তিনি। তবে জিয়াউর রহমানের হত্যার বিচারও করা দরকার বলে মনে করেন তিনি। এছাড়া সেখানে সবুর খান সহ মুক্তিযুদ্ধবিরোধী আরও ৮ জনের কবরও রয়েছে। মন্ত্রী জানিয়েছেন, সেসব কবরও সেখান থেকে সরানোর বিষয়ে উদ্যোগ নিয়েছে তার মন্ত্রণালয়। তবে কবর সরানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন স্পিকার। তিনি অবশ্য বলেন, অল্প সময়ের মধ্যেই এ বিষয়ের সমাধান হবে।
মুক্তিযোদ্ধাদের নতুন নামের তালিকা তৈরি করা হবে আগামী মাসের ৭,১৪,২১,২৮ এবং ফেব্রুয়ারি মাসের ৪ তারিখে। দিনগুলো শনিবার, ছুটির দিন দেখে ঠিক করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের যে তালিকা এর আগে হয়েছে সেটা বহাল রেখেই নতুন তালিকা করা হবে। এতে গত ১০ বছরে যাদের নাম রয়েছে, এমনকি অভিযুক্তদের নামও যাচাই বাছাই করা হবে। গেজেটে যেসব নাম রয়েছে সেসবও যাচাই করা হবে। উপজেলা পর্যায়ে ও থানায় থানায় মুক্তিযোদ্ধাদের সামনেই এ যাচাই প্রক্রিয়া চলবে। কারো বিরুদ্ধে যদি বলা হয় তিনি মুক্তিযোদ্ধা নন, তবে তাকে প্রমাণ করতে হবে তিনি কোথায় যুদ্ধ করেছেন, কার অধীনে ছিলেন, সহযোদ্ধা কারা ছিল, কোথায় ট্রেনিং নিয়েছেন…এসব তথ্যের ভিত্তিতেই তার বিরুদ্ধে করা অভিযোগ প্রমাণ করা হবে। যেসব মুক্তিযোদ্ধা মারা গেছেন, তাদের সহযোদ্ধারা বলবেন, তিনি কোথায় ট্রেনিং নিয়েছিলেন, কোথায় যুদ্ধ করেছেন। সেসব তথ্যের উপর নির্ভর করে ঠিক করা হবে তিনি আসলেই মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন কি-না। এ বিষয়ে আকম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ১৯৭১-এ মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন কি-না সেটাই বড় করে দেখা হবে, তিনি এখন কোন দল করছেন সেটা দেখা হবে না। তিনি বলেন, বিএনপির মধ্যেও অনেক মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন। আর তাই দল না দেখে, আসলেই মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন কি-না সেটাই যাচাই করা হবে নতুন তালিকায়। তালিকা থেকে নাম বাদ পড়লে দুই ধরনের আপিল করা যাবে। যারা ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা-এই অভিযোগে অভিযুক্ত তারাও আপিল করতে পারবে যথাযথ প্রমাণ দিয়ে। বিএনপির সময়ে অনেক ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার নাম ঢুকেছে বলেও জানিয়েছেন মন্ত্রী। সেসব নাম যাচাই-বাছাইয়ের পর বাদ পড়বে। নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অমান্য করে যারা সরাসরি গেজেটে নাম তুলেছেন তারাও যাচাই-বাছাইয়ের আওতায় আসবে। কিছু লোক মুক্তিযোদ্ধাদের সুযোগ সুবিধা পাওয়ার জন্য কিংবা গৌরবের অংশ হওয়ার জন্য ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট নিয়েছে। অনেকে সার্টিফিকেটও জাল করেছে। তবে এবছরের সার্টিফিকেট জাল করার সুযোগ কম বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী। নতুন সার্টিফিকেটে ৮ ধরনের বারকোড থাকবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী। ১৩ বছরের নিচে যারা মুক্তিযোদ্ধা কিংবা মুক্তিযোদ্ধাদের নানা ধরনের সহায়তা করেছেন তাদের সহযোগী হিসেবে স্বীকৃতি দেবে মন্ত্রণালয়।
মুক্তিযোদ্ধাদের নতুন তালিকার পর যুদ্ধাপরাধী, রাজাকার,আল বদর, আল শামস এরও তালিকা করবে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। যারা যুদ্ধাপরাধী তাদের ক্ষেত্রেও কোন দল করছে তা দেখা হবে না বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী। এতে কোনো রাজনৈতিক সংকট তৈরি হবে না বলে মনে করছেন তিনি।
এছাড়া ভারতীয় যে ১৮৬৮ জন সিপাহী মুক্তিযুদ্ধ করেছেন তাদের সম্মাননা দেওয়াসহ ৫ লাখ রুপি করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে এ সম্মাননা দেওয়া হবে। সম্পাদনা : আনিসুর রহমান তপন