দিয়াজের ‘খোয়া যাওয়া’ সনদ মিলল চবি ছাত্রাবাসের ডাইনিংয়ে
ডেস্ক রিপোর্ট: চট্টগ্রামের ছাত্রলীগ নেতা দিয়াজ ইরফান চৌধুরীর লাশের দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের পরদিনই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ছাত্রাবাসের ডাইনিংয়ের পাশে মিলল তার স্নাতক আর তার বাবার মুক্তিযোদ্ধা সনদ। পরিবারের দাবি, গত ২০ নভেম্বর রাতে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার বাসা থেকে দিয়াজের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধারের সময় থেকেই ওই দুটি সনদ আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না।
এর আগে গত ৩১ অক্টোবর রাতে দিয়াজের বাসায় ভাঙচুরের সময় অন্যান্য জিনিসপত্রের সঙ্গে এসব সনদও ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিল এবং পরে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সভাপতি আলমগীর টিপুর অনুসারীরা সার্টিফিকেট দুটি ফিরিয়ে দিয়েছিল বলে দাবি দিয়াজের পরিবারের।
গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ আমানত হলের ডাইনিংয়ের পাশে খোলা জায়গায় ঝাড়ু দেওয়ার সময় সনদ দুটি খুঁজে পান কর্মচারীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আলী আজগর চৌধুরী বলেন, সনদ দুটি দেখে মনে হচ্ছে এগুলো কেউ তাৎক্ষণিকভাবে ফেলে গেছে। কারণ যদি রাতে ফেলত তাহলে এগুলো ভেজা থাকত। সনদগুলো এখন আমাদের কাছে আছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দিয়াজের বোন আইনজীবী জুবাইদা সারওয়ার চৌধুরী বলেন, এখন সনদ পাওয়ার মানে হচ্ছে এগুলো খুনিরা নিয়ে গিয়েছিল। এখন ফেলে গেছে। বিষয়টি আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সিআইডিকে জানিয়েছি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি দিয়াজ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক ছিলেন। ক্যাম্পাসে নতুন কলা ভবন ও শেখ হাসিনা হলের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজের ৯৫ কোটি টাকার দরপত্র নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আলমগীর টিপুর সঙ্গে তার বিরোধ চলছিল মৃত্যুর আড়াই মাস আগে থেকে। সেই বিরোধ, চাঁদা দাবিসহ নানা কারণে ‘ষড়যন্ত্র’ করে দিয়াজকে ‘হত্যার পর লাশ ঘরে ঝুলিয়ে’ রাখা হয় বলে দাবি তার পরিবারের।
জুবাইদা জানান, গত ৩১ অক্টোবর ক্যাম্পাসের দুই নম্বর গেট এলাকায় দিয়াজের বাসাসহ ছাত্রলীগের চার নেতাকর্মীর বাসায় হামলা ও লুটপাট চালানো হয়। সেদিন আমার মায়ের স্বর্ণালঙ্কার, দিয়াজের ল্যাপটপ আর সনদপত্রগুলো নিয়ে যায় আলমগীর টিপুর অনুসারীরা। লুটপাটের পর তারা মেয়রের সঙ্গে দেখা করে অভিযোগ করেন। তাদের সামনেই মেয়র ফোন করে টিপুকে জিনিসপত্র ফিরিয়ে দিতে বলেন।
জুবাইদা বলেন, ১০ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার ছোট ভাই মিরাজ ইরফান চৌধুরীর সাক্ষাৎকার ছিল। সেখানে আমাদের বাবা ছরওয়ার কামালের মুক্তিযোদ্ধা সনদ প্রয়োজন ছিল। মেয়র বলে দেওয়ার পর টিপু ফোনে দিয়াজের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানায়, এক ছোট ভাই সার্টিফিকেটগুলো দিয়ে যাবে। এরপর দিয়াজ তার কাছে পাঁচ হাজার টাকা চেয়ে বলেছিলেন, সার্টিফিকেট ফিরিয়ে দিতে পাঁচ হাজার টাকা দাবি করেছে টিপুর অনুসারীরা। তিনি টাকা দিলে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইমতিয়াজ অভি ৮ নভেম্বর সার্টিফিকেটগুলো ফিরিয়ে দিয়ে যান। মিরাজ ঢাকায় সাক্ষাৎকার দিয়ে ফেরার পর বাবার মুক্তিযোদ্ধা সনদ দিয়াজের কাছেই ছিল। ও মৃত্যুর দিন থেকে আর সেসব সনদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তিনি বলেন, ১৮ নভেম্বর আমি দিয়াজের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, বাসা থেকে নিয়ে যাওয়া মায়ের স্বর্ণালঙ্কার আর ল্যাপটপ কখন ফেরত পাওয়া যাবে। দিয়াজ বলেছিল ২০ নভেম্বর ওরা ল্যাপটপ ফেরত দেবে বলেছে। তারপরই গয়নার বিষয়ে কথা বলবে। প্রসঙ্গত, দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্তের পর রোববার গভীর রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন কবরস্থানে দিয়াজের লাশ আবার দাফন করা হয়েছে।