খুনিয়াদীঘির নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ
আনোয়ার হোসেন জীবন, রানীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও) : বিজয়ের মাস ডিসেম্বর আসলেই ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলার হানাদারদের সেই লোমহর্ষক নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞের কথা স্মরণ করে শিউরে ওঠে এই উপজেলার মানুষ। বিভিন্ন এলাকা থেকে স্বাধীনতাকামী নিরীহ লোকজনকে ধরে এনে মুক্তিযোদ্ধাদের খবর জানতে ঐতিহাসিক খুনিয়া দীঘির পাড়ে একটি শিমুল গাছের সাথে হাতের তালুতে লোহার পেরেক গেঁথে ঝুলিয়ে রেখে রাইফেলের বাট ও বেয়োনেট দিয়ে অবর্ণনীয় নির্যাতন চালানোর পর দীঘির পাড়ে দাঁড় করে ব্রাশ ফায়ারে হত্যার হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকাররা লাশ ভাসিয়ে দিত দীঘির পানিতে। সেখানেই লাশগুলো পচে গলে পানির সাথে মিশে যেত। হাজার হাজার লাশ আর রক্তে দীঘির পানির রং সব সময়ই থাকতো লাল। খান সেনারা স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় এলাকার যুবতি ও সুন্দরী নারীদের পিতা-মাতা এবং স্বামীর উপস্থিতিতেই ধরে এনে ক্যাম্পে আটকে রেখে চালাতো পাশবিক নির্যাতন। এ কথা শুনলে গা শিউরে ওঠে।
৭১’র মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন হানাদার বাহিনীর নিষ্ঠুরতম নির্যাতনের বর্ণনা করেন ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল ডিগ্রি কলেজ অধ্য তাজুল ইসলাম। উপরোক্ত কথাগুলো বলতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ভাই নজরুল ইসলামের কথা স্মরণ করেন পাক সেনারা তাকে খুনিয়া দিঘীতে যেভাবে হত্যা করেছে। তিনি আরো বলেন- বিয়ের ছ’মাসের মাথায় এক নারীর স্বামীকে ধরে নিয়ে যায় পাক সেনারা। ক্যাম্পে আটকে রেখে রাতে তার ওপর বর্বর নির্যাতন চালায় ওরা। পরদিন সকাল বেলায় সলিম উদ্দীন নামক এক রাজাকার তার কাছে এসে জানায়, তিনি ক্যাম্পে গেলে তার স্বামীকে ছেড়ে দেয়া হবে। তার কোন তি হবে না। পতিভক্তি ঐ নারী স্বামীকে বাঁচাতে ছুটে যান ক্যাম্পে। সেখানে গিয়ে দেখেন, তার মত অনেক নারীকে আটকে রাখা হয়েছে। তাদের কাছে জানতে পারেন, সময়ে অসময়ে খান সেনারা তাদের ওপর ঝাঁপিড়ে চালায় নানা পাশবিক নির্যাতন। তার বেলাতেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। শত আকুতি মিনতি করেও তার কথা শুনেনি ওরা। ছেড়ে দেয়নি তার স্বামীকে। একাধারে ৪ রাত সেখানে বন্দী থেকে নানা নির্যাতন সহ্য করে কৌশলে সেখান থেকে পালিয়ে আসেন। তিনি পরে জানতে পারেন, তার স্বামীকে মেরে ফেলেছে ওরা। সম্পাদনা : তারেক