যেভাবে ট্রাম্প এখনো হারতে পারেন
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: নভেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বিজয়ী ঘোষণা করা হলেও বিষয়টি আনুষ্ঠানিক হতে ডিসেম্বরের ১৯ তারিখ পর্যন্ত অপো করতে হবে। এদিন যুক্তরাষ্ট্রের ইলেক্টোরাল কলেজের ৫৩৮ জন সদস্য বিভিন্ন রাজ্যে একত্রিত হবেন পরবর্তী প্রেসিডেন্টকে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচিত করার জন্য।
মার্কিন সংবিধান অনুযায়ী এ ইলেক্টোরাল কলেজের ভোটের তেমন কোনো প্রভাব নেই। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের েেত্র তারা ‘রাবার স্ট্যাম্পের’ মতো কাজ করেন। তবে এবার ইলেক্টোরাল কলেজের ভূমিকায় মনে হচ্ছে তারা প্রচলিত রীতির ব্যত্যয় ঘটাতে পারেন।
ইলেক্টোরাল কলেজের কোনো কোনো সদস্য এরইমধ্যে বলা শুরু করেছেন যে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের েেত্র তাদের ‘রাবার স্ট্যাম্প’ হওয়ার যে ভূমিকা সেখানে একটা পরিবর্তন আনতে হবে। এবং কিনটন শিবির এরইমধ্যে এ ধরনের চিন্তাধারাকে সমর্থনও করছে।
মার্কিন নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তেেপর বিষয়ে প্রমাণের জন্য ইলেক্টোরাল কলেজের ১০ জন সদস্য জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালকের কাছ থেকে একটি ব্রিফিং দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন। এ ইলেকটোরাল কলেজের সদস্যদের মধ্যে ৯ জন ডেমোক্রেট এবং একজন রিপাবলিকান।
কিনটন প্রচারণা শিবিরের প্রধান জন পোডেস্টা বলেছেন, এরইমধ্যে এ ধরনের উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়েছেন তারা।
মার্কিন সংবিধানে ইলেক্টোরাল কলেজ পদ্ধতি চালু করেছেন অ্যালেক্সান্ডার হ্যামিলটন। তিনি একসময় লিখেছিলেন, কোনো অযোগ্য কিংবা বিদেশি শক্তির দ্বারা প্রভাবিত ব্যক্তি যাতে প্রেসিডেন্ট হতে না পারেন সেজন্য মার্কিন সংবিধানে ইলেক্টোরাল কলেজ পদ্ধতি চালু করা হয়েছিল।
যে ১০ জন ইলেক্টোরাল কলেজ জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার কাছে ব্রিফিংয়ের জন্য অনুরোধ করেছেন, তাদের যুক্তি হচ্ছে রাশিয়ার হ্যাকাররা ডেমোক্রেটিক পার্টি এবং হিলারি কিনটনের প্রচারণার সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা টার্গেট করে তথ্য নিতে চেয়েছিলেন। এর উদ্দেশ্য ছিল ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সহায়তা করা। এ সংক্রান্ত প্রমাণ গোয়েন্দাদের কাছে আছে বলে তারা উল্লেখ করেন।
এত কিছুর পরও হিলারি কিনটন কিংবা মডারেট রিপাবলিকান হিসেবে পরিচিত ওহাইয়োর গভর্নরের পে যথেষ্ট সংখ্যক ইলেক্টোরাল কলেজ সমর্থন পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
যদিও টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের একজন রিপাবলিকান বলেছেন তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ভোট দেবেন না। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্পের আনুষ্ঠানিক বিজয় আটকে দিতে এ অঙ্গরাজ্যের আরও ৩৬ ইলেক্টোরাল কলেজকেও একই পদপে নিতে হবে। কিন্তু সেটা হবে বলে মনে হয় না।
কোনো কোনো বিশ্লেষক বলছেন, যিনি এ ধারণার প্রবর্তন করেছেন, তিনি কখনো ইচ্ছা পোষণ করেননি যে ইলেক্টোরাল কলেজের সদস্যরা তাদের বিবেচনা অনুযায়ী কাজ করবেন। যদি সেটা হতো তাহলে অতীতে ইলেক্টোরাল কলেজের সদস্যরা ভিন্নভাবে কাজ করতেন। কিন্তু তারা সেটা কখনো করেনি। তারা নিজেরা কখনো একত্রিত হয়নি এবং কোনো বিষয়ে আলোচনা বা বিতর্কও করেনি। তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের ২৯টি রাজ্যে এমন আইন আছে যে সাধারণ ভোটারদের ভোটে যে প্রার্থী বিজয়ী হবেন, ইলেক্টোরাল কলেজের সদস্যদেরও তাকে সমর্থন করতে হবে।
কিন্তু কলোরাডো অঙ্গরাজ্যে ডেমোক্রেটিক পার্টির দুজন সদস্য এ ধরনের আইনকে আদালতে চ্যালেঞ্জ করছেন। যদিও ডোনাল্ড ট্রাম্প শিবির সেটির বিরোধিতা করছে।
এত কিছুর পরও বাস্তবতা হচ্ছে, ট্রাম্প বেশ দুর্বল সমর্থন নিয়ে প্রেসিডেন্ট হিসেবে হোয়াইট হাউসে যাচ্ছেন। হিলারি কিনটনের চেয়ে তিনি ২৮ লাখ ভোট কম পেয়েছেন। এছাড়া তার ইলেক্টোরাল কলেজ প্রাপ্তির সংখ্যা ৫৬ শতাংশ। মার্কিন ইতিহাসে এ পর্যন্ত ৫৮টি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ইলেক্টোরাল কলেজ প্রাপ্তির বিবেচনায় ট্রাম্পের অবস্থান ৪৬তম। সেটিও ট্রাম্পের সমর্থনের একটি দুর্বল দিক। সূত্র: বিবিসি। সম্পাদনা: হাসিবুল ফারুক চৌধুরী