বিবেক জাগানো মদিনার চিঠি
হুমায়ুন আইয়ুব: খলিফা হজরত উমর (রা.) অর্ধপৃথিবীর রাষ্ট্রপ্রধান। তার শাসন আমলের কথা- ঈদের আগের দিন হজরত উমরের বিবি বললেন, ওগো অর্ধপৃথিবীর বাদশাহ, আমাদের জন্য ঈদের নতুন জামা-কাপড়ের প্রয়োজন নেই। কোলের বাচ্চাটি ঈদের নতুন কাপড়ের জন্য কাঁদছে। খলিফা বললেন, হে বিবি, নতুন কাপড় কেনার সামর্থ্য আমার নেই। নেই পয়সার জোগার। খলিফার বিবি বললেন, রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে আগামী মাসের পারিশ্রমিকটা অগ্রিম নেওয়ার ব্যবস্থা করা যায় কি না? কোষাগারের দায়িত্বে হজরত আবু ওবায়দা (রা.)। হজরত ওমরের পত্র পেলেন তিনি। পত্রে জানালেন, এক মাসের অগ্রিম বেতন প্রয়োজন। মুসলিম জাহানের খলিফা উমর। পয়সার অভাবে আমার কাছে পত্র লিখেছেন। কথাগুলো ভাবছেন আবু উবাইদা। কাঁদছেন আবু উবাইদা। চোখে পানি টলমল। হজরত আবু উবাইদা (রা.) পত্রবাহককে টাকা দেননি। দিয়েছেন হজরত উমর (রা.) কে বিবেক জাগানো চিঠি। হজরত আবু উবাইদা লিখলেন, ‘আমিরুল মুমিনিন! অগ্রিম বেতন বরাদ্দের জন্য দুটি বিষয়ে আপনাকে সিদ্ধান্ত দিতে হবে। প্রথমত আগামী মাস পর্যন্ত আপনি বেঁচে থাকবেন কিনা?
দ্বিতীয়ত, বেঁচে থাকলেও মুসলমানরা আপনাকে রাষ্ট্রের প্রধান বহাল রাখবে কিনা? চিঠি পেয়ে কেঁদেছেন হজরত উমর। চোখের পানিতে দাঁড়ি ভিজিয়েছেন। হাত তুলে দোয়া করলেন, ওগো আল্লাহ, আবু উবাইদার উপর দয়া কর, তাকে হায়াত দাও।
হজরত উমর (রা.)-এর আরও একটা গল্প বলি। তিনি খুব অসুস্থ। মাছ খাওয়ার খুব ইচ্ছা জেগেছে। মাছ পাওয়া যায়নি মদিনায়। বেশ পরে পাওয়া গেল। কিনলেন দেড় দেরহামের বিনিমিয়ে। রান্না শেষে একটি রুটি আর মাছ পরিবেশন করলেন হজরত উমরের সামনে। ঠিক তখনই ভিক্ষুক এসে হাজির হলেন, বাদশাহ উমরের দরবারে। অসুস্থ উমর বললেন, খাবারটা ফকিরকে দিয়ে দাও। খাদেম আরজ করলেন, ভিক্ষুক কে কিছু টাকা দিয়ে দিই। হজরত উমর অনড়। না, মাছ-রুটি তাকে দিয়ে দাও। খাদেম ভিক্ষুক থেকে কিনে এনে আবার পেশ করলেন, হজরত উমরের দস্তরখানে। উমর বললেন, টাকা ফেরত নিবে না, খাবারটাও তাকে দিয়ে দাও।
গল্প নয় সত্যি, মিথ্যে নয় এক রত্তি। একজন রাষ্ট্রপ্রধান হজরত উমরের সংসার। তার কাছে একজন ভিক্ষুকের নিরাপদ অধিকার। সভ্যতা, সংস্কৃতি ও আদর্শের জন্য মদিনার নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ও তাঁর অনুসারীরা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ উপমা। বন্ধু, প্রতিপক্ষ বা কাছের কেউ নয়, পথচারী একজন ভিক্ষুকও তার কাছে সম্মানের দাবি রাখে। রুটি টানাটানির সভ্যতা নয়। ত্যাগ ও ইনসাফের চিরকালীন উপমা হজরত উমর।