জাফর আহমদ: বাংলাদেশ ব্যাংক তার নিজস্ব কর্মকর্তাদের ব্যাংক রেটে ঋণ দেয়। আর ওই ঋণ থেকে যে সুদ পায় তার মোট সুদ বাংলাদেশ ব্যাংকের মোট কর্মকর্তাদের ৬০ শতাংশ বেতন নির্বাহ করে। তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রের।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসাবে বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারের ব্যাংক, অন্যান্য ব্যাংকের বাণিজ্যিক ব্যাংক, আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও অর্থের চলন-নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসাবে কাজ করে। বাংলাদেশ ব্যাংক নাগরিককে সরাসরি ঋণ দিতে পারে না। অর্থ দ্বারা নাগরিকের সমান ও সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়। তবে প্রতিষ্ঠান হিসাবে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো তার নিজস্ব কর্মকর্তাদের ঋণ দিয়ে থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংককে যে সুদ হারে ঋণ দিয়ে থাকে তাকে ব্যাংক রেট বলে। নিজস্ব কর্মকর্তাদেরও মাঝেও ব্যাংক রেটে ঋণ বিতরণ করে থাকে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪-১৫ অর্থবছর পর্যন্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে ঋণ বিতরণ করা ছিল ১ হাজার ৪৬২ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এ টাকা থেকে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৫৩ কোটি ৫৮ লাখ ২৩ হাজার ২৩৮ টাকা। যা মোট বেতনের ৬০ শতাংশ। একই বছরে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দিতে হয়েছিল ৮৯ কোটি ২৮ লাখ ৭৪ হাজার ১৬৭ টাকা। পরের বছর এ পরিমাণ কিছুটা কমে যায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী যোগদান করার নির্দিষ্ট সময় পর এ ঋণের জন্য আবেদন করতে পারেন। জমি, ফাট, গাড়ি বা ইলেকট্রনিক সামগ্রী কেনার জন্য এ সব ঋণ দেওয়া হয়। এ ঋণের পরিমাণ নির্ভর করে ঋণের বিপরীতে প্রতিমাসে দেওয়া নির্দিষ্ট পরিমাণ কিস্তি ও প্রভিডেন্ট ফান্ড থেকে পরিশোধ করা যায় এ পরিমাণ টাকা। ঋণ নিয়ে জমি, ফাট, গাড়ি বা ইলেকট্রনিক সামগ্রী কেনার পর ঋণের বিপরীতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে মর্টগেজ হিসাবে রাখতে হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন সময় সর্বনিম্ন সুদ হারে পুনঅর্থায়ন তহবিল গঠন করে সম্ভাবনাময় খাতে বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে ঋণ বিতরণ করে থাকে। রপ্তানি উন্নয়ন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, পরিবেশ সম্মত উপায়ে ইট তৈরি, গাভী পালন, আইটি ও কৃষি খাতে বিতরণ ইত্যাদি এসব ঋণ বিতরণ করে থাকে। অর্থনীতির বৃহত্তর স্বার্থে বাংলাদেশ ব্যাংক এ তহবিল গঠন করে থাকে। যথেষ্ট অলস অর্থ পড়ে থাকার কারণে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে এ ধরনের অর্থ সংগ্রহ করে বিতরণ করা কমিয়ে দিয়েছে। পাশাপাশি এ ঋণ পুরোপুরি ফেরত আসার নিশ্চয়তা থাকে না। এদিকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো তাদের নিজস্ব তহবিল বাজার সুদ হারে ঋণ বিতরণ করছে। এর ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকের আয়ের পরিধি সংকুচিত হয়ে পড়েছে। এখন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুনাফা করার বিশ্বস্থ খাত হয়ে পড়েছে নিজস্ব কর্মচারীরা। সম্পাদনা: সুমন ইসলাম