ফের বাংলাদেশে আসছেন অনুপ চেটিয়া!
মাছুম বিল্লাহ: আবারও বাংলাদেশে আসছেন উত্তর-পূর্ব ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী
সংগঠন
ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসামের (উলফা) জেনারেল সেক্রেটারি অনুপ চেটিয়া। আগামী এপ্রিলে বাংলাদেশ সফরে আসবেন বলে অনুপ চেটিয়া আমাদের অর্থনীতিকে নিশ্চিত করেছেন। সম্প্রতি গুয়াহাটিতে সাক্ষাতের সময় এ প্রতিনিধির কাছে বাংলাদেশ সফরের ইচ্ছার কথা জানান।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশকে আমি সেকেন্ড হোম বলে মনে করি। দীর্ঘ ২৮ বছর বাংলাদেশে কাটিয়েছি। বাংলাদেশের সঙ্গে একটি আত্মিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। ওখানকার (বাংলাদেশ) অনেক মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়েছে। জেলে থাকার সময়ও অনেক বন্দি ও কারা কর্মকর্তা ও কারারক্ষীদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক হয়েছে। তাদের সঙ্গে দেখা করার জন্য ঢাকায় যাব।’
দীর্ঘ ১৮ বছর বাংলাদেশের বিভিন্ন কারাগারে অবস্থানের পর গত বছর নভেম্বরে বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তির মাধ্যমে দেশে ফিরে ভারত সরকারের সঙ্গে উলফার আলোচনাপন্থি অংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন অনুপ চেটিয়া।
দুই শতকের বেশি সময় ধরে আসামের স্বাধীনতার দাবিতে সশস্ত্র তৎপরতা চালানো উলফার এই প্রভাবশালী নেতা গত বছর আসামে ফিরে ঘোষণা দিয়েছিলেন, আর সশস্ত্র সংগ্রাম নয়, ভারত সরকারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে গণতান্ত্রিক পথেই সমস্যার সমাধান চান তিনি।
১৯৬৭ সালে আসামের তিনসুকিয়ার জেরাই গাঁওতে গোলাপ বরুয়া ওরফে অনুপের জন্ম। ১৯৭৯ সালে, শিবসাগরে পরেশ বরুয়া, অরবিন্দ রাজখোয়া, ভীমকান্ত বুড়াগোঁহাইদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তিনি উলফার জন্ম দেন। হত্যা, অপহরণ, ডাকাতির বিভিন্ন অপরাধে অভিযুক্ত অনুপকে ১৯৯১ সালে প্রথমবার গ্রেফতার করেছিল আসাম পুলিশ। কিন্তু তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী হিতেশ্বর শইকিয়ার হস্তেেপ তিনি মুক্তি পান। ১৯৯২ সালে শান্তি আলোচনার ডাকে সাড়া দেওয়ার পরও বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন অনুপ চেটিয়া।
১৯৯৭ সালের ২১ ডিসেম্বর ঢাকায় গ্রেফতার হন তিনি। ভুয়া পাসপোর্ট নিয়ে দেশে ঢোকা, ১৬টি দেশের মুদ্রা বহন করা, বেআইনি অস্ত্র সঙ্গে রাখার তিনটি অভিযোগে আদালত তাকে সাতবছর কারাদ-ের আদেশ দেয়। ২০০৩ সালে অনুপ চেটিয়া হাইকোর্টে আবেদন জানান- ভারতে তার প্রাণের ভয় রয়েছে। তিনি বাংলাদেশের কারাগারেই থাকতে চান। হাইকোর্ট চেটিয়া নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকারকে নির্দেশ দেয়। কারাবাসের মেয়াদ ফুরোবার পরও সেই নির্দেশকে হাতিয়ার করে ২০০৫, ২০০৮ ও ২০১১ সালে রাজনৈতিক আশ্রয়ের মেয়াদ বাড়িয়ে নেন চেটিয়া। জাতিসংঘেও নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন পাঠান তিনি।
কিন্তু ২০১১-তে পরেশ বরুয়া বাদে সভাপতি অরবিন্দ রাজখোয়া, সহ-সভাপতি প্রদীপ গগৈ, সহ-সেনাধ্য রাজু বরুয়াসহ উলফার কেন্দ্রীয় কমিটির সব নেতাই ভারত সরকারের সঙ্গে শান্তি আলোচনা শুরু করেন। রাজখোয়ারা চেটিয়াকেও ভারতে ফেরার আহ্বান জানান। ভারত ও বাংলাদেশ সরকারের দীর্ঘ আলোচনার পরে গত বছরের ১১ নভেম্বর চেটিয়াকে ভারতের হাতে তুলে দেয় বাংলাদেশ। সম্পাদনা: সুমন ইসলাম