বিজয় দিবস বোনাস হতে পারে শ্রমজীবি শ্রেণির বহুমাত্রিক প্রাপ্তি
জাফর আহমদ: দৈনিক আমাদের অর্থনীতির সাংবাদিক ও কর্মচারিদের জন্য এবার মোট বেতনের ৫ শতাংশ হারে ‘বিজয় দিবস বোনাস’ চালু করেছে। যদিও এটা যৎসামান্য। তারপরও তা বৃহত্তর পরিসরে চালু করা গেলে বিজয় দিবসে শ্রমজীবি মানুষের আনন্দে মেতে ওঠা ও স্বাধীনতার চেতনায় উদ্দীপ্ত হওয়ার উপলক্ষ হবে। পত্রিকাটির সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খানের বক্তব্যও তাই। এই দিনটিতে স্বাধীন বাংলাদেশের মুক্তি পাগল মানুষ প্রথম মুক্ত আকাশ, বাতাস আর মাটির গন্ধ পেয়েছিল। এ বিজয় বাঙালীর শ্রেষ্ঠ অর্জন। এ জন্য এই দিনটিকে বরণ করার জন্য বোনাস একটি অত্যাবশ্যক উপকরণ হয়ে উঠতে পারে।
অফিস-আদালত ও শিল্প কারখানায় ‘বিজয় দিবস বোনাস’ চালু করতে পারলে এর বহুমাত্রিক উপকার আছে বলে মনে করেন শ্রমিক নেতৃবৃন্দ, অর্থনীতিবিদ ও গবেষকরা। তারা বলেন, যে চেতনায় মানুষ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে অকাতরে জীবন দিয়েছিল, সেই চেতনাকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে প্রবাহিত করতে এই বোনাস একটি শক্তিশালী উপকরণ হতে পারে। বাঙালীর মুক্তিযুদ্ধ ছিল নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণির শিক্ষিত তরুণ আর কলে-কারখানার শ্রমিক-মজুরের দ্বারা সংগঠিত যুদ্ধ। ১৭৫৭ সালে ইংরেজদের পাতানো যুদ্ধে পরাজয়ের পর বিদেশি শাসন ও শোষণে শোষিত এবং বঞ্চিত হয়েছে এখানকার মানুষ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এই শ্রেণিকে সেই পরাজয়ের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য ১৯৭১ সালে তৈরি করেছিলেন। তারা সাড়াও দিয়েছিল। কিন্তু এই শ্রেণিটি স্বাধীনতার শতভাগ সুফল ভোগ করতে পারেনি।
মুক্তিযুদ্ধ শুধু একটি যুদ্ধ না। একটি চেতনার নাম। তা হলো পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙ্গে মুক্তির আলোকে উজ্জীবিত হওয়া। বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের (টিইউসি) সাধারণ সম্পাদক ডাক্তার ওয়াজেদুল ইসলাম খান বলেন, ‘বিজয় দিবস বোনাস’ দিলে দিবসটির মাহাত্ম্য বেড়ে যায়। বিজয় দিবস ‘কেন এবং কি‘ বিষয়টি মানুষের কাছে পৌঁছবে নতুন ব্যঞ্জনায়। স্বাধীনতার চেতনাকে জাগরুক করতে ইংলিশ স্কুলগুলোও বিজয় দিবসে লাল-সবুজের পোশাক পরে স্কুলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। যদি কোনো প্রতিষ্ঠান তাদের শ্রমিক-কর্মচারিকে বিজয় দিবস বোনাস দেয় তা স্বরণীয় হয়ে থাকবে। শ্রমিকরাও এতে খুশি হবে।
বিজয় দিবস বোনাস চালু হলে তা প্রাসঙ্গিক ও উৎসাহ ব্যঞ্জক হবে মনে করেন শ্রমিক ও শিল্প সম্পর্কিত গবেষণা প্রতিষ্ঠান ব্ংালাদেশ ইনিস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিল্স) এর নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান আহমেদ। তিনি বলেন, স্বাধীনপূর্ব সব কারখানা ছিল পাকিস্তানের। এখন দেশের মানুষের। এটা স্বাধীনতার অবদান। এখন বিজয় দিবসের চেতনা শিক্ষিত মানুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। অফিসে, কল-কারখানায় বিজয় দিবস বোনাস চালু হলে শ্রমিক-কর্মচারিদের মধ্যে বিষয়টি ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হবে।
বিজয় দিবস বোনাস চালু হলে কল-কারখানায় কর্মচঞ্চল্যতা বাড়বে এবং শ্রমজীবি মানুষের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে সামনে এগিয়ে যাওয়ার তাগিদ বাড়বে। দেশপ্রেমের প্রত্যয়ে উদ্দীপ্ত হবে মনে করেন কবি ও প্রাবন্ধিক অধ্যাপক কামরুল ইসলাম।
বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সভাপতি ও টিইউসি সভাপতি প্রবীণ শ্রমিক নেতা শহিদুল্লাহ চৌধুরী বলেন, স্বাধীনতার যুদ্ধ করেছিল কৃষক শ্রমিকসহ সাধারণ মানুষ। কিন্তু স্বাধীনতার সুফল এ সব মানুষের কাছে পৌঁছেনি। ছিনিয়ে নিয়ে গেছে মধ্যবিত্ত শ্রেণি। তাই সর্বপ্রথম সংগ্রাম হবে হৃত স্বাধীনতার সুফল পুনরুদ্ধার করা। এ জন্য শুধু একটি বোনাস দিয়ে এ প্রাপ্তি শোধ করা যাবে না। কৃষক, শ্রমিক, মজুর সকলের অর্থনৈতিক মুক্তির প্রয়োজন। তবে কেউ যদি বোনাস দেয় এটা একটি ভাল খবর হবে।
বিজয় দিবস বোনাস চালু ও কার্যকর করা গেলে জাতীয় ভিত্তির বিবেচনায় ১৬ ডিসেম্বরকে শ্রমজীবি মানুষের কাছে নতুন করে চিহ্নিত করা যাবে বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর ইব্রাহিম খালেদ। তিনি বলেন, ঈদেও আনন্দ ভাগাভাগি ও বাড়তি খরচ মেটানোর জন্য প্রতিষ্ঠানের মালিক যেমন, তার শ্রমিক কর্মচারিদের বোনাস দেন। এটিও তেমন হবে। সম্পাদনা : আনিসুর রহমান তপন