মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার পাঠ্যবইয়ে ঠিকভাবে যুক্ত করতে হবে
বিশিষ্ট নাগরিকরা এই দাবি
উম্মুল ওয়ারা সুইটি: স্বাধীনতার ৪৫ বছর পার হলেও এখনো পাঠ্যবইতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তার ঠিক জায়গাটি পায়নি। এরমধ্যে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার কাজ চলছে এবং শীর্ষ পর্যায়ের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে। তাই এখন সময় এসেছে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজসহ তাদের অপরাধের নথি পাঠ্য বইয়ে সংযুক্ত করা। এর পাশাপাশি দ্রুত মানবতাবিরোধী অপরাধীদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা এবং এসব সম্পদ মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ব্যয় করা। এবছরের অঙ্গীকার হোক দেশ থেকে মৌলবাদ নির্মূলে ঐক্যবদ্ধ হওয়া।
গতকাল বিজয় দিবস উপলক্ষে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বিশিষ্ট নাগরিকরা এই দাবি জানিয়ে আমাদের অর্থনীতিকে বলেন, স্কুল পর্যায় থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের কর্মকা- তুলে ধরার কথা বলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার পর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস উল্টে দেওয়ার ষড়যন্ত্রের কবলে পড়েছিলো তৎকালীন প্রজন্ম। তারা পাঠ্য বইতে ভুল ইতিহাস জেনেছিলো। বর্তমান সরকার আগেরবারই পাঠ্য বইতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস যুক্ত করলেও তা খুবই সীমিত। তাই এই সরকারের কাছে জোরালোভাবে এই দাবিটি তুলে ধরতে হবে ঐক্যবদ্ধভাবে।
ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবীর বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস স্কুল থেকেই শিশুর কানে গুঁজে দিতে হবে। সেই সঙ্গে দালাল দ-িত অপরাধীদের বিষয়ে নতুন প্রজন্মকে সজাগ করতে হবে। একটু উপরের ক্লাসগুলোতে বিচার প্রক্রিয়া সম্পর্কে অবহিত করতে হবে। কারণ বঙ্গবন্ধু হত্যার পর যে গ্যাপ তৈরি হয়েছে তারই খেসারত দিচ্ছে এখন জাতি। তাই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পর্কেও নতুন প্রজন্মকে জানাতে হবে। যাতে যে কোনো পরিস্থিতিতেই তরুণ প্রজন্ম বিভ্রান্ত না হয়।
ইতিহাসবিদ মুক্তিযোদ্ধা গবেষক মুনতাসির মামুন বলেন, এতোবার করে বলার পরও সরকার যুদ্ধাপরাধীদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার বিষয়ে ধীরগতি অবলম্বন করছে। মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকেরই বয়স ৭০ এর বেশি হয়ে গেছে। তাদের জন্য কিছু করতে হলে এখনই সময়। তাই নিজামী-মীর কাসেম আলী, সাকা চৌধুরীসহ এসব যুদ্ধাপরাধীর সম্পদ দ্রুত বাজেয়াপ্ত করে তা সুবিধাবঞ্চিত মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যানে ব্যয় করতে হবে। আর দেশ থেকে মৌলবাদী নিপাতে সরকারকে সিদ্ধান্তে আসতে হবে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ বলেন, এই বিচারের ইতিহাস নতুন প্রজন্মকে জানাতে হবে এবং এটি পাঠ্যবইয়ের মাধ্যমে জানানো সবচেয়ে বেশি সহজ উপায়। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস যেমন বীরত্বে ভরা, তেমনি আল বদর, আল শামস, রাজাকারের যে ভূমিকা তাও কম নয়। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো দেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া এই শক্তি কিভাবে স্বাধীন দেশের পতাকা নিয়ে ঘুরে বেড়ালো তাও জনগণ এবং আগামি প্রজন্মকে জানতে হবে। পাঠ্যবইতে যুক্ত হলে শিক্ষার্থীরা বাধ্যতামূলকভাবে এটি পড়বে এবং তাদের মধ্যে ধারণা জন্মাবে।
শহীদ সাংবাদিক শিব সাধন চক্রবর্তী ছোট ভাই ও মুক্তিযোদ্ধা তরুন তপন চক্রবর্তী বলেন, কিভাবে এই রাজাকার ও তাদের দোসররা বাঙালিদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে চিনিয়ে দিয়েছিলো। কার সন্তান মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছে, কার বাড়িতে সোনাদানা রয়েছে, তরুনী মেয়ে রয়েছে এবং কি নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে, নারী সম্ভ্রম হারিয়েছে-এই ইতিহাস আগামি প্রজন্মকে জানাতেই হবে। বিচার কাজ নিয়ে যে প্রশ্ন উঠেছে সেটি যেনো কোনোভাবেই প্রশ্রয় না পায় সেই জন্যই কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এটিকে সিলেবাসে অন্তর্ভূক্ত করা জরুরি বলেই আমরা দাবি করছি। সরকারকে বিষয়টি দ্রুত বিবেচনায় আনতে হবে।সম্পাদনা: সুমন ইসলাম