বিজয় দিবসের শোভাযাত্রা সম্প্রদায়িকতা মুক্ত ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার আহ্বান
আনিসুর রহমান তপন: ‘ঐক্য গড়ো বাংলাদেশ, সাম্প্রদায়িকতার হবে শেষ’। এ দেশ রবীন্দ্রনাথের, এ দেশ কাজী নজরুলের, এ দেশ আমাদের সবার’। সাম্প্রদায়িকতামুক্ত এমন সেøøাগান নিয়ে গতকাল শুক্রবার সকালে বিজয় দিবসের শোভাযাত্রা শুরু করে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের কর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষ। মুক্তিযুদ্ধ বিজয়ের ৪৫তম বার্ষিকীর এই শোভাযাত্রাটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে শুরু হয়ে দোয়েল চত্বর, কদম ফোয়ারা, শাহবাগ হয়ে টিএসসিতে গিয়ে শেষ হয়। বিজয় বার্ষিকীর শোভাযাত্রার মাধ্যমে পুরো জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সাম্প্রদায়িকতাকে রুখে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট।
শোভাযাত্রার উদ্বোধন করে নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার বলেন, আজকের বিজয় রাজনৈতিক কিংবা ভৌগোলিক বিজয় নয়, এটি অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের, হিংসার বিরুদ্ধে অহিংসার, দুরবস্থার বিরুদ্ধে সুস্থ ও সুন্দরের বিজয়।
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দেশে সাম্প্রদায়িকতা মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এ বিষবাষ্প ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করতে হবে। স্বাধীনতার সকল স্মৃতিচিহ্ন ও গণকবর সংরক্ষণের তাগিদ দিয়ে রামেন্দু মজুমদার বলেন, সারাদেশে আজও স্বাধীনতার অনেক স্মৃতি ছড়িয়ে ছিঁটিয়ে আছে। কিছু চিহ্নিত করা হয়েছে আবার অনেকগুলো হয়নি। চিহ্নিত গণকবরগুলো যথাযথ সংরক্ষণের মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম জানতে পারে এদেশের জন্য কতটা মূল্য দিতে হয়েছে।
শোভাযাত্রা শেষে অনুষ্ঠিত এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে সংগঠনের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, পাকিস্তানের বদলে বাংলাদেশ নাম আর চাঁদ-তারার পরিবর্তে লাল সবুজ পতাকার জন্য শুধু ৩০ লাখ মানুষ জীবন দেয়নি। আমরা চেয়েছিলাম এমন একটি দেশ, যেখানে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল সম্প্রদায়ের মানুষ শান্তি ও সম্প্রীতির সঙ্গে বসবাস করবে। যে বাংলাদেশে প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত হবে, এ জন্যই বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে এদেশ স্বাধীন হয়েছিল। এজন্যই সংবিধানে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদকে মূলনীতি করা হয়েছিল।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সংবিধানের মূলনীতি থেকে দেশ সরে এলে বাংলাদেশ তার মূল আদর্শ ও লক্ষ্য থেকে সরে যায় বলেন গোলাম কুদ্দুছ। তিনি বলেন, এদেশকে পাকিস্তানি ভাবধারায় ফিরিয়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্র হয়েছিল। দীর্ঘ লড়াইয়ের পর আমরা আবার পথে ফিরেছি। সাম্প্রদায়িক শক্তি দেশকে পিছিয়ে দিতে এখনও ষড়যন্ত্র করছে জানিয়ে সভাপতি বলেন, এ বিষয়ে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। দেশের সব মানুষের মৌলিক অধিকার চাই উল্লেখ করে গোলাম কুদ্দুস বলেন, এ শোভাযাত্রার মূল উদ্দেশ্য একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তোলা।
জোটের সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ বলেন, আমাদের জাতীয় পরিচয় আমরা সবাই বাঙালি। স্বাধীনতার ৫০ বছরে আমাদের যে অর্জন তা আমাদের সবার। আমরা সব ধর্মের মানুষ মিলে একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই।
সাংস্কৃতিক অঙ্গনের প্রতিনিধিদের পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ ঢোল-বাদ্যের তালে তালে নেচে গেয়ে মুক্তিযুদ্ধের ৪৫তম বার্ষিকীর বিজয় দিবসের এই শোভাযাত্রায় অংশ নেন। সম্পাদনা: সুমন ইসলাম