শতাধিক মেডিকেল কলেজে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ নেই! ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন তৈরিতে লাগেনি ডিজিটালের ছোঁয়া
বিপ্লব বিশ্বাস: বর্তমান সরকারের আমলে স্বাস্থ্য সেক্টরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির ছোঁয়া লাগলেও সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের অধীনে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন তৈরি ও লেখার ক্ষেত্রে লাগেনি ডিজিটাইলাইজেশনের ছোঁয়া। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকরা এখনও বিজি প্রেসের ঢাউস সাইজের সরকারিভাবে সরবরাহকৃত ফরমে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন লেখছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে- যে ফরমে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন লেখা হয় তাতে অর্ধশত কলাম রয়েছে। ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে কর্মরতরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন লেখছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ফরেনসিক মেডিসিন বিশেষজ্ঞ বলেন, আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির আমলে (সরকারিভাবে সরবরাহকৃত ফরম নং ৫৩৭২) হাতে লেখা ফরমে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন তৈরিতে সময়ের অপব্যয় হচ্ছে। তারা বলেন, কম্পিউটারাইজ পদ্ধতিতে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন লেখার প্রচলন শুরু হলে সময়ের অপচয় রোধ করার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট সংরক্ষণে সুবিধা হতো।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের একজন ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, একটি স্পর্শকাতর ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন সঠিকভাবে পর্যালোচনা করে লেখতে একদিনও লেগে যায়। সেক্ষেত্রে প্রতিদিন তাদের কমপক্ষে তিন থেকে চারটি করে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করতে হয়। ফলে যতটুকু সময় দিয়ে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করা উচিৎ ততটুকু সময় তারা হাতে পান না বলে স্বীকার করেন তিনি। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যানুসারে বর্তমানে সরকারি ৩১টিসহ সারা দেশে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে শতাধিক মেডিকেল কলেজ রয়েছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে- এ শতাধিক প্রতিষ্ঠানে ফরেনসিক মেডিসিন বিষয়ক তথা ময়নাতদন্ত সম্পর্কে পাঠদানের জন্য উচ্চতর ডিগ্রিধারী ন্যূনতম সংখ্যক ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ নেই।
ঢামেক হাসপাতাল ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে বর্তমানে যিনি বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কমর্রত রয়েছেন তিনি একজন সহকারী অধ্যাপক। বছরখানেক আগেও তিনি লেকচারার ছিলেন। যেখানে দেশের সর্ববৃহৎ ও সুনামধন্য ঢামেক হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে একজন অধ্যাপক নেই, সেখানে সারা দেশের কী বেহালদশা তা সহজেই অনুমেয়।
অভিযোগ রয়েছে প্রশিক্ষিত ফরেনসিক মেডিসিন চিকিৎসকের অভাবে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন তৈরিতে প্রায়শই ভুলত্রুটি হচ্ছে। প্রতিবেদন নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হওয়ায় স্পর্শকাতর প্রায় সব মামলায় কবর থেকে লাশ উত্তোলন করে দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্ত করার প্রয়োজন হচ্ছে। সর্বশেষ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক দিয়াজ ইরফান চৌধুরীর লাশ তিন সপ্তাহ পর কবর থেকে উত্তোলন করে ময়নাতদন্ত করা হয়।
ঢামেক ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. হাবিবুজ্জামান চৌধুরীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রথাগতভাবে বিজি প্রেসের ছাপানো ফরমে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন লেখা হচ্ছে। ফরমের লেখা বাংলা হরফে ও ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকের হাতের লেখা অনেক সময় বিচারকদের বুঝতে সমস্যা হয়। তাই সময়ের প্রয়োজনে কম্পিউটারাইজড পদ্ধতিতে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করা প্রয়োজন বলে তিনি মন্তব্য করেন। সম্পাদনা: সুমন ইসলাম