শামীমে সন্দেহ আইভীর, ঐক্যবদ্ধ সাখাওয়াত
হাসান আরিফ, নারায়ণগঞ্জ থেকে ফিরে: নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন (এনসিসি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী নিজেকে নিরাপদ ভাবছেন না। তার বিরুদ্ধে বিশাল বাহিনী লাগানো রয়েছে বলে তিনি মনে করেন। তাই তিনি সাবধানে পা ফেলছেন। এদিক দিয়ে বিএনপি দলীয় প্রার্থী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান নিরাপদ আছেন। তাদের মধ্যে এই ধরনের কোনো বিভেদ নেই। সবাই মিলেই দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করে যাচ্ছেন। আইভীর নির্বাচনের সক্রিয় সদস্য রফিউর রাব্বি এ বিষয়ে বলেছেন, ওসমান পরিবার কখনই চায় না আইভী নির্বাচিত হউক। তাই এই পরিবার প্রকাশ্যে আইভীর পক্ষে থাকলেও বাস্তবতা হচ্ছে তারা তার বিরোধিতাই করবে।
গত বুধবার নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের এক অনুষ্ঠানে আইভী বলেছেন, একটি মহল নেপথ্যে থেকে সিটি নির্বাচন বানচাল করার চেষ্টা করছে। তাদের ব্যাপারে সাবধান ও সচেতন থাকতে হবে।
এই দিন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী আরও বলেন, তিনি কোনো সন্ত্রাসী লালন করেননি। তার কোনো বাহিনীও নেই। অসৎ ও অসত্যের মধ্যে কখনো যাননি। দলবাজি করেননি। উন্নয়নের স্বার্থে কখনো কাউকে জিজ্ঞেস করেননি আপনি কোন দলের? দলবাজি করেননি বলেই আওয়ামী লীগের তৃণমূল থেকে তার নাম দলের প্রার্থী হিসেবে কেন্দ্রে পাঠানো হয়নি।
উল্লেখ্য, নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক মহল মনে করে এই পুরো প্রক্রিয়ার সঙ্গেই শামীম ওসমান জড়িত। তাই আইভী এখনো তাকে বিশ্বাস করেন না।
এ বিষয়ে শামীম ওসমান বলেছেন, আইভী আমার ছোট বোন তাই সে ডাকুক আর নাই ডাকুক, আমাকে যতই অসম্মানিত করুক না কেন, নেত্রীর সম্মানে তার পক্ষেই কাজ করে যাব। আমাদের মধ্যে কোনো বিভেদ নাই। তিনি বলেন, নির্বাচনি প্রচারণা চালানোর জন্য তিনি তাকে নৌকার প্রতীকসহ দুইটা শাড়িও উপহার দিয়েছেন। ফলে তার দিক থেকে কোনো বিভেদ নাই। আইভী জয়ী হউক তিনি তাই চান। জানা গেছে, শামীম ওসমানের দেওয়া শাড়ি আইভী পরেননি।
আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন, আইভী এবং শামীম ওসমানের মধ্যকার দ্বন্দ্ব-বিবাদের ঘটনা বেশ পুরনো। নারায়ণগঞ্জের তৃণমূল আওয়ামী লীগের সুপারিশে না থাকার পরও নাসিক নির্বাচনে মেয়র পদে আইভীর দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর এই বিরোধ আবারও আলোচনায় আসে। এরপর দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বিবদমান নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে পরিস্থিতি বেশ স্বাভাবিক করে আনেন। সব শেষে আইভী এবং শামীম নারায়ণগঞ্জের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বৈঠকে আলোচিত দুই নেতাসহ স্থানীয় নেতারা নাসিক নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধভাবে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনি কর্মকা- পরিচালনার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। সেই থেকে শামীম ওসমানকে বেশ ইতিবাচক মনে হয়েছে।
বিএনপির দলীয় প্রার্থী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানের বিষয়ে নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামাল বলেছেন, তারা জেলা ও মহানগর বিএনপি ঐক্যবদ্ধভাবে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন। তাদের মূল লক্ষ্যই হচ্ছে নারায়ণয়গঞ্জে ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। আর ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হলেই তাদের দলীয় প্রার্থী বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটির মেয়র নির্বাচিত হবেন।
তিনি বলেন, মানুষ ভোট দিতে চায়, ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার পরিবেশ থাকলে সবাই ভোট দিবে। এখন সে পরিবেশ তৈরি করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। এই পরিবেশ তৈরি করার জন্য আমরা বার বার সেনা মোতায়েনের জন্য বলেছি। কিন্তু কমিশন তা শুনেনি। তাই আমাদের দলীয় নেতাকর্মীদের বলা হয়েছে ভোটাররা যাতে ভোটকেন্দ্রে যেতে পারে সে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য। এজন্য তারা এলাকায় এলাকায় ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার বার্তা পৌঁছে দিচ্ছে। আর ভোট শেষে ফলাফল না হওয়া পর্যন্ত নেতাকর্মীরা কেন্দ্রে অবস্থান করবে। যাতে ফলাফল পরিবর্তন না করতে পারে। তার মতে ভোটাররা ভোট দেওয়ার পরও সরকার দলীয়রা ফলাফল পালটে দিতে পারে।
তিনি বলেছেন, এখনো অবৈধ অস্ত্রগুলো জমা নেওয়া হয়নি। সেগুলো জমা নেওয়ার জন্য জোর দাবি জানিয়েছেন। আর প্রশাসন তাদেরকে স্বাভাবিক নিয়মে নির্বাচনি কাজ করতে সাহায্য করবে এবং কোনো নগ্ন দলীয়করণ করবে না বলে তিনি আশা করেন। সম্পাদনা: উম্মুল ওয়ারা সুইটি