সব কাজেই ইনসাফ থাকা চাই!
হুমায়ুন আইয়ুব : জুলুম নয় ইনসাফের জয় চিরকালীন। আজ যারা জুলুমবাজ, জুলুম করে আনন্দ-উৎসব করছেন কেয়ামতের মাঠে তারা মিজানের পাল্লায় আটকে যাবেন। পুলসিরাতের আগুনের পুলে কাটা পড়বেন স্ত্রীর সঙ্গে জুলুম করা স্বামী। চাকর-বাকরের সঙ্গে অবিচারী মালিকও মিজানের পাল্লায় আটকে যাবেন। বিচারক, শাসক, রাষ্ট্রপ্রধান থেকে দুই সন্তানকে দুধ পান করানো মাও অবিচার করলে হিসাব হবে কেয়ামতের মাঠে। দুই মোরগ যদি লড়াই করে পরস্পর জুলুম হয় তাদেরও জুলুমের শাস্তি দিবেন মহান আল্লাহ। পরীক্ষার খাতা দেখায় শিক্ষককের অবিচার, মাঠে গরু-ছাগলের ওপর রাখালের অবিচার, রোগির ওপর ডাক্তারের অবিচার, মুসল্লির ওপর ইমামের অবিচার, মক্কেলের ওপর উকিলের অবিচার সব কিছুর যথাযথ বিচার হবে আল্লাহর কঠোর আদালতে। খেলার মাঠের আম্পায়ার আর নির্বাচনি মাঠের কমিশনাররাও ন্যায়-ইনসাফের সূতিকাগার। বেইনসাফি হলে আজ মজা পেলেও দীর্ঘ সাজা অপেক্ষা করছে। ন্যায়-ইনসাফ ও আদর্শের মহান পতাকাবাহী হযরত মুহাম্মদ (সা.)। মায়ের কোল থেকে মৃত্যুর শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ইনসাফের জয়গান গেয়েছেন। শিখিয়েছেন ইনসাফের ব্যবহারিক জীবন। নবীজির দুধ মা হালিমা। দু’জন শিশু মা হালিমার স্তন থেকে দুধ পান করতেন। মহানবী ডান পাশের দুধ খেয়ে বাম পাশের স্তনটি রেখে দিতেন তার দুগ্ধভাইয়ের জন্য। হালিমা বলেন, ‘বিভিন্নভাবে কৌশল করেও শিশু মুহাম্মদকে উভয় স্তনের দুধ খাওয়াতে পারিনি।’
হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, একজন বাদির সঙ্গে ন্যায়-ইনসাফ আর হৃদ্যতার আচরণ করেছেন মুহাম্মদ (সা.)। রাবিয়া নামে একজন বাদি ঘুমিয়ে আছেন; তিনি প্রচ- গরমে ঘামছেন। আয়েশা (রা.) বলেন, আমি দেখি দু’জাহানের বাদশা, রাহমাতুলল্লিল আলামিন বাদিকে বাতাস করছেন। সাহাবি বলেন, কাবা পুনর্নির্মাণের সময় আমরা একটি করে পাথর উঠাচ্ছি, আর ইনসাফের পতাকাবাহী মহানবী (সা.) দুটি করে পাথর উঠাচ্ছেন। কোনো এক ভ্রমণে নবীজি সাহাবিদের রান্নার বিভিন্ন কাজ বন্টন করে দেন। কারও বকরি জবাই, গোশত বানানো, উট চড়ানো আর পানি আনার। নবীজি বনে গেলেন কাঠ আর লাকড়ি কুড়িয়ে আনতে। মহানবীর (সা.) শেষ জীবনেও অবারিত ছিল ইনসাফের উজ্জ্বলতম উপমা।
কারণ ইনসাফ ও ন্যায়বিচার ছাড়া সমাজে শান্তি সমৃদ্ধি ও উন্নতি আসে না। রক্তের বাঁধনে চিড় ধরে। অবিচার হলে সংসার ভাঙে। ভাঙে সমাজ ও রাষ্ট্র। সুবিচার না হলে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় থাকে না। নিরাপত্তাও হুমকির মুখোমুখি হয়। আল্লাহ তায়ালা বলেছেনÑ ‘আল্লাহই বিচার করেন সঠিকভাবে। (মুমিন: ২০)
কুরআন আরও বলে, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দেবেন আমানত তার হকদারকে প্রত্যর্পণ করতে। তোমরা যখন মানুষের মধ্যে বিচারকার্য পরিচালনা করবে তখন ন্যায়পরায়ণতার সঙ্গে বিচার করবে। আল্লাহ তোমাদের যে উপদেশ দেন তা কত উত্তম! আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা। (নিসা-৪:৫৮)। সম্পাদনা: সুমন ইসলাম