সিরিয়া নিয়ে ওবামার মূল্যায়ন : ‘আমি দুঃখিত’
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে আট বছর দায়িত্ব পালনের সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার কাছে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ছিল সিরিয়া সংকট। শুক্রবার চলতি বছরের শেষ সংবাদ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট হিসেবে সিরিয়া সংকটে নিজের নীতির পর্যালোচনার কথা খোদ ওবামাই তুলে ধরেছেন। ওবামা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে আলেপ্পোতে যে নৃশংসতা চলছে সে জন্য তার নৈতিক দায় রয়েছে।
ওবামা বলেন, ‘আলেপ্পোতে সিরিয়া সরকার, রাশিয়া ও ইরানের অনুগতরা যে নৃশংস অভিযান চালিয়েছে তাতে বিশ্ব আমাদের সঙ্গে এক হয়ে বিরোধিতা করছে। আমরা দেখেছি অবরোধ, দখল ও নিষ্পাপ বেসামরিক মানুষের ক্ষুধায় কাতর। ধারাবাহিকভাবে মানবিক সহায়তাকর্মী ও চিকিৎসাকর্মীরা হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছেন। পুরো এলাকা ধুলো ও বালিতে পরিণত হয়েছে। বেসামরিক নাগরিকদের হত্যার খবর প্রতিনিয়ত আসছে। আন্তর্জাতিক আইনের চরম লঙ্ঘন এগুলো।’ গার্ডিয়ান
দৃঢ়তার সঙ্গে ওবামা আরও যুক্ত করেন, ‘এই নৃশংসতার দায় একমাত্র আসাদ সরকারের এবং তার মিত্র রাশিয়া ও ইরানের। তাদের হাতে রক্ত লেগে আছে এবং নৃশংসতা তাদের হাতেই ঘটেছে।’
ওবামাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনের শেষ দিকে আলেপ্পোর নিষ্ঠুরতার জন্য ব্যক্তিগতভাবে নৈতিক দায়বোধ করেন কিনা। জবাবে ওবামা বলেন, ‘আমি নিজেকে সব সময় দায়ী ভাবি। যখন স্নাইপারের গুলিতে কোনো শিশুর মৃত্যু হয়, আমি দায়বোধ করি। যখন লাখ লাখ মানুষ নিজ বাড়ি থেকে উচ্ছেদ হয় তখনও দায়বোধ করি। দক্ষিণ সুদানে যেসব হত্যার ঘটনা ঘটছে অথচ খবরে আসছে না তার জন্যও আমার দায়বোধ রয়েছে।’
ওবামা বলে চলেন, ‘বিশ্বের অনেক জায়গাতেই ভয়াবহ ঘটনা ঘটছে এবং আমার কার্যালয় ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে সেগুলোর জন্য নিজেকে দায়ী মনে করি। প্রতিদিন সকালে নিজেকে জিজ্ঞেস করি, এমন কিছু কি আছে যাতে করে আমি জীবন বাঁচাতে পারব, পার্থক্য গড়তে পারব এবং যে শিশুদের যন্ত্রণা পাওয়ার কথা না তাদের রক্ষা করতে? এটা শুরু মাত্র। প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় এমন কোনো মুহূর্ত ছিল না যখন আমি দায়বোধ করিনি।’ কিন্তু এরপরও সামরিক কর্মকর্তা, ত্রাণ সংস্থা, কূটনীতি ও সমালোচকদের সপ্তাহব্যাপী বৈঠকেও কোনো সমাধানে আসতে ব্যর্থ হয়েছে বলে স্বীকার করেন ওবামা। তবু আন্তর্জাতিক আইনের সমর্থন ছাড়া সিরিয়ায় বিপুলসংখ্যক সেনা পাঠানোর ব্যগ্রতা কিংবা কংগ্রেসের সমর্থন ছিল না। বিশেষ করে ইরাক যুদ্ধের এক দশকে ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয় হওয়ার পর সিরিয়ায় সামরিক পরাশক্তি রাশিয়া ও ইরানের সঙ্গে সংঘাতে জড়ানোরও আশঙ্কা ছিল।
ওবামা বলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে আমাদের সম্পূর্ণভাবে সিরিয়ার নিয়ন্ত্রণ না নিলে আমাদের সমস্যায় পড়তে হবে। সবকিছুই ছিল প্ররোচক। কারণ আমরাও চেয়েছিলাম কিছু করতে এবং সঠিক বলেই মনে হয়েছিল। কিন্তু এত সহজে তা করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। আর এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট আমাকে সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে যা সর্বোত্তম মনে হয়েছে। আমি দুঃখিত।’ সম্পাদনা: ইমরুল শাহেদ