নানামুখি সমস্যায় ধসের মুখে রাবার শিল্প
হামিদুর রহমান: নানামুখি সমস্যায় জর্জরিত রাবার শিল্প। রাবারের উৎপাদন খরচ বেশি, বিত্রিুর দাম কম। বিদেশি রাবারে বাজার সয়লাব। অনেকেই উৎসাহ হারাচ্ছে রাবার চাষ করা থেকে। ফলে একের পর বন্ধ হচ্ছে রাবার বাগান।
বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নোয়ন বুরে্যর তথ্যে মতে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরের (জুলাই-নভেম্বর) এর লক্ষ্যেমাত্রা ছিল ১১.২০ শতাংশ, অর্জিত হয়েছে ৭.২৬ শতাংশ। এ সময়ের লক্ষ্যমাত্রার থেকে কম হয়েছে ৩৫.১৭ শতাংশ। যা গত বছর রপ্তানির ১৯.২৪ শতাংশ কম। এ বিষয়ে বাংলাদেশ রাবার উন্নয়ন কর্পোরেশনের মহা-ব্যবস্থাপক মো. মোয়াজ্জেম হোসেন আমাদের অর্থনীতিকে বলেন, আমাদের স্টক অনেক, রাবারও ভালো কিন্তু বিত্রিু নেই। মুক্তবাজার হওয়ার ফলে বাংলাদেশে রাবারের মূল্য নিচে নেমেছে। পাশাপাশি ভ্যাট বসানোয় এর প্রভাব পড়েছে রাবার বিক্রির উপর।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমান দেশে যে পরিমাণ রাবার উৎপাদন হয় তা দিয়ে দেশের চাহিদার প্রায় ৭০ ভাগ মেটানো সম্ভব হলেও বিদেশ থেকে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি রাবার আমদানি করা হচ্ছে। অন্যদিকে রাবার আমদানিতে নামমাত্র শুল্ক বসানো এবং রাবার বিক্রির সময় শতকরা ১৫ শতাংশ ভ্যাট চাপিয়ে দেওয়াও দেশের রাবার শিল্প বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ। রাবার আমদানিতে নামমাত্র শুল্ক হওয়ার কারণে দেশের বাজার দরের চেয়ে কম দামে ভিয়েতনাম থেকে রাবার আমদানি করছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে বেসরকারি বাগানগুলোও বন্ধ হয়ে যাবে। এদিকে গত কয়েক বছর ধরে রাবার শিল্পে বিপর্যয় নেমে আসায় কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ রাবার গার্ডেন উনার অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি জেনারেল কাউসার আমাদের অর্থনীতিকে বলেন, উম্মুক্ত বাজারের কারণেই রাবারের এমন মন্দা অবস্থা। শ্রমিকদের বেতন বেশি, কাজ করে ৪ ঘণ্টা, সুযোগ-সুবিধাও বেশি। এদিকে রাবারের দাম কম। লোকশান গুণতে হচ্ছে রাবার বাগান মালিকদের। এর ফলে অনেক বাগান বন্ধ হয়ে গেছে। রাবার চাষের জন্য বাংলাদেশ উপযোগী উল্লেখ করে তিনি বলেন, রাবার রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব। অথচ এই শিল্পকে ভালোভাবে দেখাশুনা করছে না। রাবার বোর্ডের নিজস্ব ল্যাব নেই। ফলে সঠিক মান নির্ণয় হচ্ছে না কোয়ালিটি বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে। কিছু দিন আগে রাবার উন্নয়ন কর্পোরেশনের ২০০ টন রাবার পোর্টে আটকা পড়েছে। বাংলাদেশ রাবার মালিক সমিতির সাবেক মহাসচিব এটিএম জাফরুল আলম বলেন, রাবার চাষে সরকারি কোনো পৃষ্ঠপোষকতা নেই। প্রতিকেজি রাবার উৎপাদন করতে খরচ হয় প্রায় ১৫০ টাকা। আর বর্তমানে রাবার বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা থেকে ১০০ টাকা। ফলে লাভের পরিবর্তে লোকসান গুণতে হচ্ছে বেশি। আগে যেখানে ৫ টন রাবার উৎপাদন করতাম এখন সেখানে উৎপাদন করছি ১ টন। রাবারের মূল্য না থাকায় এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বাগানগুলো দেখাশোনা করার জন্য কিছু উৎপাদন করা হচ্ছে।
সূত্রগুলো জানায়, ঋণের ক্ষেত্রেও রয়েছে প্রতিবন্ধকতা। অন্যান্য খাতের মতো এখানেই ১২ শতাংশ হারে সুদ দিতে হয়। রাবারের উৎপাদনে যেতে সময় লাগে ১০ থেকে ১২ বছর। এই দীর্ঘ সময় ঋণের সুদ দেওয়া সম্ভব হয় না। কোনো কোনো বাগান মালিক এই ঋণ নিয়ে দেউলিয়া হয়ে গেছে। রাবার বাগান মালিকদের দাবি রাবারকে কৃষি পণ্য হিসেবে ঘোষণা করে কম সুদে বিশেষ ব্যবস্থায় ঋণ দেওয়া হোক। সম্পাদনা: জাফর আহমদ