রাজধানীতে গ্যাস সংকট খাবার না খেয়েই কাজে ছুটতে বাধ্য হচ্ছে নগরবাসী
মুনওয়ার আলম নির্ঝর: রাজধানীর উত্তরায় থাকেন আঞ্জি সুলতানা। তিনি একজন কর্মজীবী নারী। কিন্তু গ্যাস সংকটের কারণে বেশিরভাগ দিন সকালেই নাস্তা না করে অফিসে ছুটতে হয়। গ্যাস সংকট নিয়ে তিনি আমাদের অর্থনীতিকে বলেন, বেশিরভাগ সময় সকালের নাস্তা বানানোর সুযোগ পাই না, গ্যাস না থাকায়। ফলে বাইরে নাস্তা করতে হয়। প্রতিদিন বাইরে নাস্তা করাটা বেশ ব্যয়বহুল ও শরীরের জন্য ক্ষতিকর।
কতটুকু সময় গ্যাস পান এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সকাল ৮টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত আর সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত গ্যাস থাকে না। ফলে রাতের খাবার খেতেও অনেক দেরি হয়।
মোহম্মদপুরের জাকির হোসেন রোডের বাসিন্দা মৌসুমী আক্তার শোভা বলেন, দুপুর ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত খুব অল্প গ্যাস থাকে। তাতে কেবল ভাত রান্না করা যায়। আর রাতে ১০টার পর গ্যাস পাওয়া যায়। ফলে সময়মতো খাওয়া-দাওয়া করা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে আমাদের।
মূলত শীতের শুরু থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গ্যাস সংকট দেখা দেয়। কোনো কোনো এলাকায় সংকট এত বেশি যে গৃহিণীদের জন্য গ্যাসের বিকল্প ব্যবস্থা খুঁজতে হচ্ছে। প্রায় একমাস ধরে চলা এই সংকটে কেউ কেউ তুলনামূলক ব্যয়বহুল এলপিজি সিলিন্ডার বেছে নিচ্ছেন। তবে নিম্ন আয়ের অনেকেই রাজধানীতে ফিরিয়ে আনছেন সনাতনী মাটির চুলাও।
গ্যাসের এই তীব্র সংকট নিয়ে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির অপারেশন ডিরেক্টর এইচএম আলী আশরাফ আমাদের অর্থনীতিকে বলেন, এমনিতেই আমাদের গ্যাসের ঘাটতি আছে। এর উপর শীতের সময় চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। ফলে গ্যাস সংকটটাও তীব্র হয়। তবে আমরা আশা করছি জানুয়ারি থেকে এই সংকট অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।
পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা গেছে, তিতাস কূপ-১ ছাড়াও আরও কয়েকটি কূপ সংস্কারের কারণে সারা দেশে প্রতিদিন গড়ে ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস কম উৎপাদন হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বহুজাতিক কোম্পানি শেভরনের হাতে থাকা বিবিয়ানা গ্যাস ক্ষেত্রে সংস্কার কাজ চলছে। ফলে গ্যাস ক্ষেত্রের একাধিক কূপ কয়েক দিন ধরে বন্ধ।
তিতাস গ্যাস সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে প্রতিদিন গড়ে ২৬শ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন হচ্ছে। তিতাসের দৈনিক ঘাটতি ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে শীতকালীন বাড়তি চাহিদা ২৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। সব মিলে দৈনিক ঘাটতি দাঁড়াচ্ছে ৫৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস।
এদিকে রাজধানী ঘুরে দেখা গেছে পুরান ঢাকার বেশিরভাগ এলাকায় দিনের অধিকাংশ সময় গ্যাস থাকে না। অভিজাত এলাকা ধানম-িতেও গ্যাস সংকটে গৃহিণীদের সারা দিনের রান্না করতে হয় ভোররাতে। মোহাম্মদপুর, শেখেরটেক, শ্যামলী, আদাবর, মিরপুর, পল্লবী, কাজীপাড়া, সেনপাড়া, শিয়ালবাড়ি, রামপুরা, সিদ্ধেশ্বরী, বনশ্রী, বাড্ডা, তেজগাঁও, তেজকুনিপাড়া, মগবাজার, নাখালপাড়া, শেওড়াপাড়া, কল্যাণপুর, আজিমপুর, মালিবাগ, খিলগাঁও, কমলাপুর, গোলাপবাগ, গোপীবাগ, মানিকনগর, বসুন্ধরা ও উত্তরা, উত্তরখান, দক্ষিণখান, ওয়ারী ও পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকাসহ রাজধানীর অনেক জায়গায় গ্যাসের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। সম্পাদনা : হাসিবুল ফারুক চৌধুরী