সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সেতুবন্ধনে ছিলেন শাকিল
দেলওয়ার হোসাইন: প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ও কবি প্রয়াত মাহবুবুল হক শাকিল ছিলেন শিল্প ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের মানুষদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সেতুবন্ধন। দেশের শিল্প ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের যে কোনো মানুষ বিপদে পড়লে মাহবুবুল হক শাকিল তা প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিতে নিয়ে আসতেন। তার এই অকাল প্রয়াণে নেমে আসে শোকের ছায়া। প্রিয় মুখ মাহবুবুল হক শাকিলের এই অসময়ে চলে যাওয়া যেন কেউ মেনে নিতে পারছিলেন না।
গতকাল রোববার শাকিলের প্রয়াণের স্মারণ সভায় এই করুণ সুর বেজে ছিল। বাংলা একাডেমির সহযোগিতায় একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ হলে বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি এ সভার আয়োজন করে। এতে সভাপতিত্ব করেন ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। অনুষ্ঠান সঞ্চালন করেন বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সহ-সভাপতি ও অন্যপ্রকাশের প্রধান নির্বাহী মাজহারুল ইসলাম। মাহবুবুল হক শাকিলের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে স্মরণসভায় দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
স্মরণ সভায় বক্তব্য রাখেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি মো. সামাদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ফখরুল আলম, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ, বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মফিদুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম, আবৃত্তি শিল্পী জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, কথাশিল্পী আনিসুল হক, কবিতা পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাবিবুল্লাহ সিরাজী, প্রধানমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব সাইফুজ্জামান শিখর, বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ওসমান গণি।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, দেশের শিল্প ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের যে কোনো মানুষ বিপদে পড়লে মাহবুবুল হক শাকিল তা প্রধানমন্ত্রীর চোখে নিয়ে আসতেন। যেখানেই বই মেলার খবর পেতেন সেখানেই ছুটে যেতেন। সব সময় তিনি দেশের শিল্প-সংস্কৃতি নিয়ে ভাবতেন। রাজনৈতিক আলোচনা না করে তিনি সাংস্কৃতিক আলোচনা করতেন। তিনি শুধু ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের অনুপ্রাণিত ও সাহস জোগাননি, তিনি দেশের তরুণ সমাজের মধ্যে অনুপ্রাণিত ও সাহস জুগিয়েছেন। দেশের অসংখ্য মানুষের বিপদে পাশে দাঁড়িয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শাকিলের ড্রাফট পছন্দ করতেন। প্রধানমন্ত্রী যা ভাবতেন তিনি তাই লেখতেন। তার মৃত্যুতে দেশের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে।
বক্তারা বলেন, শাকিলকে যারা পেয়েছেন তারা আপ্লুত হয়েছেন। হঠাৎ করে আলো নিভিয়ে ধূমকেতুর মতো চলে গেলেন তিনি। বাংলা সাহিত্যে একজন নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু তিনি সবাইকে কাঁদিয়ে চলে গেলেন। শাকিল খুবই অভিমানী ছিলেন, তাই তিনি অভিমান করে ৪৮ বছর বয়সেই চলে গেলেন। হাজার তরুণ শাকিলকে ভালবাসতেন। শাকিলকে জানতে হলে তার কবিতা ও গল্পগুলো পড়তে হবে। শাকিলের সবচেয়ে বড় অবলম্বন ছিল তার কন্যা, তার কন্যাই তার শূন্যতা পূরণ করবেন।
বক্তারা আরও বলেন, আমরা মনে করেছিলাম শাকিল যখন বাংলা একাডেমি পুরস্কার পাবে, সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবে তখন তার সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দু-চার মিনিট কথা বলব। কিন্তু তার মৃত্যুর কথা স্মরণ করে কথা বলতে খুবই কষ্ট হচ্ছে।
শাকিলের স্মরণে বিশিষ্ট আবৃত্তি শিল্পীরা কয়েকটি কবিতা আবৃত্তি করে মুগ্ধ করেন সকলকে। আগামী ২০ ডিসেম্বর শাকিলের লেখা কবিতার আবৃত্তি এ্যালবাম প্রকাশ করা হবে। শাকিলের লেখা কবিতাগুলো নিয়ে আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি অমর একুশে বই মেলায় তার তৃতীয় বই প্রকাশ হবে। বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি শাকিলকে নিয়ে স্মারকগ্রন্থ প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছে। এজন্য তার বন্ধু-বান্ধব শুভাকাক্সক্ষীদের কাছে তাকে নিয়ে লেখা আহ্বান করেছে।
উল্লেখ্য, গত ৬ ডিসেম্বর মাহবুবুল হক শাকিল ৪৮ বছর বয়সে গুলশানের সামদাদো রেস্তোরাঁয় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। শাকিল ১৯৬৮ সালে ময়মনসিংহে জন্মগ্রহণ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারী (মিডিয়া) ও উপ-প্রেস সচিবের দায়িত্ব পালন করেন ছাত্রলীগের এক সময়ের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিনিয়র সহ-সভাপতি এই ছাত্রনেতা। ২০১৪ সালের জানুয়ারির নির্বাচনের পর টানা দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে বিশেষ সহকারী হিসেবে সঙ্গে রাখেন। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী হিসেবে কাজ করলেও শাকিল একজন কবি হিসেবেও পরিচিত ছিলেন। সম্পাদনা: উম্মুল ওয়ারা সুইটি