আচরণ বিধি দেখতে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ম্যাজিস্ট্রেট আছে, ম্যাজিস্ট্রেট নেই
হচ্ছে না লিখিত অভিযোগের সুরাহা
হাসান আরিফ, নারায়ণগঞ্জ থেকে ফিরে: নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন (এনসিসি) নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে ২৭টি ওয়ার্ডে ২৭ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে। এসব ম্যাজিস্ট্রেটদের প্রার্থীদের আচরণ বিধি আর সার্বিক পরিস্থিতি নজরদারি করার কথা রয়েছে। কিন্তু তাদেরকে এলাকাবাসী কদাচিতই দেখেছেন। এমন কি অনেক প্রার্থী তাদের দেখাই পাননি। যারা দেখেছেন তারাও হঠাৎ হঠাৎ দেখেছেন। এদিকে শতাধিক লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে রিটার্নিং অফিসার, জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে। এগুলোর কোনো সুরাহা হচ্ছে না।
এ বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. নুরুজ্জামান তালুকদার বলেছেন, নির্বাচনি মাঠে নিয়োগকৃত ম্যাজিস্ট্রেটরা আইন অনুযায়ী তাদের দায়িত্ব পালন করছেন। বিভিন্ন অভিযোগে অনেককে জরিমানাও করা হয়েছে। সব কিছু এক সঙ্গে করা সম্ভব না।
নাসিক নির্বাচনে মূলত তিন ধরনের অভিযোগগুলো পাওয়া যাচ্ছে। এগুলো হচ্ছে- নির্ধারিতের চেয়ে বড় আকারের পোস্টার ব্যবহার, দেয়ালে আঠা দিয়ে পোস্টার লাগানো ও রাস্তা বন্ধ করে পথসভা করা। তবে মারামারির মতো কিছু অভিযোগও পাওয়া যাচ্ছে। গত ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় ১২০ থেকে ৩০টি অভিযোগ জমা পড়েছে। এসব অভিযোগের তেমন কোনো সুরাহা হচ্ছে না।
এই বিষয়ে রিটার্নিং অফিসার মো. নুরুজ্জামান তালুকদার বলেন, অভিযোগ গ্রহণ করে আমলে নেওয়ার জন্য অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কার্যালয়ে পাঠানো হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত অভিযোগ জেলা পুলিশ সুপারের কাছেও পাঠানো হয়েছে। তারা নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নিচ্ছেন। তবে ঠিক কটি অভিযোগ আমলে নেওয়া হয়েছে তা তার জানা নেই বলে তিনি বলেন। আর আচরণবিধির যে সব লঙ্ঘন হচ্ছে তার জন্য বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তবে আমাদের কাজ কাউকে শাস্তি বা জেল দেওয়া নয়। আমাদের কাজ সবাইকে আচরণবিধির মধ্যে রেখে নির্বাচন সম্পন্ন করা।
নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার মঈনুল হক বলেন, ১১ নম্বর ওয়ার্ডে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর লোকজনের মারামারির ঘটনায় পাল্টাপাল্টি দুটি লিখিত অভিযোগ রিটার্নিং অফিসারের কাছ থেকে তাদের কাছে এসেছে। দুটি অভিযোগ তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তবে নির্বাচনের আগে তা শেষ হবে কিনা তা বলতে পারছে না তিনি।
গত ৫ ডিসেম্বর মেয়র, সংরক্ষিত নারী ও ওয়ার্ডের সাধারণ আসনে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ২০১ প্রার্থীর কাছে প্রতীক বণ্টন হয়। এরপর দিন থেকেই মূলত নারায়ণগঞ্জ মহানগরের ২৭ ওয়ার্ডে একজন করে ২৭ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতিদিন মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছেন। মোবাইল কোর্টের তৎপরতাও তেমন নেই বলে মনে করছেন প্রার্থী ও ভোটাররা। গত ৬ ডিসেম্বর থেকে নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে ৮ জনের কাছ থেকে সাড়ে ১৮ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। ৮ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী মহসিন ভুঁইয়া রুবেলকে বৈদ্যুতিক আলোকসজ্জাকরণের দায়ে ১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে ১০ নম্বর ওয়ার্ডে আতিকুজ্জামান পনির নামে এক ব্যক্তিকে ২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। নির্ধারিত পরিমাপের চেয়ে নির্বাচন ক্যাম্পের আকার বড় হওয়ায় ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী আবুল কাউছারের সমর্থক হাজি রইসুদ্দিনের কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। প্রতীকের আকার বড় হওয়ায় ও দেয়ালে পোস্টার লাগানোয় ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে ২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। দেয়ালে পোস্টার লাগানোয় একই ওয়ার্ডের আকীবকেও ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়। ৪ নম্বর ওয়ার্ডে মো. পারভেজ নামে এক ব্যক্তিকে ১ হাজার এবং ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে মো. রোমান ভুঁইয়াকে আরও ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আর ৭ নম্বর ওয়ার্ডে বৈদ্যুতিক খুঁটিতে পোস্টার লাগিয়ে মোবাইল কোর্টের কাছে ২ হাজার টাকা জরিমানা গুনতে হয়েছে মো. আলাউদ্দিন ভুঁইয়াকে। সম্পাদনা: সুমন ইসলাম