সনদ বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ হারালেন এক দম্পতি
ডেস্ক রিপোর্ট: পাশের ঘরে যখন আগুন লাগল, তখন সন্তানকে নিয়ে বেরিয়ে এসেছিলেন তারা… কিন্তু সনদসহ দরকারি কাগজপত্র আনতে আবার ঢুকেছিলেন… তারপর আর বের হতে পারেননি এই দম্পতি, তাদের লাশ বের করে আনেন স্বজনরা।
রোববার ভোররাতে চট্টগ্রাম নগরীর বাকলিয়া থানার বলিরহাটের শাহাজীপাড়ায় প্রতিবেশীর ঘরে আগুন লাগার পর ধোঁয়ায় দমবন্ধ হয়ে নিজের ঘরে মারা যান সৈয়দ আহমেদ (৩০) ও তার স্ত্রী রীনা আক্তার (২৫)।
দুই বছরের শিশু সন্তান আদিয়াতকে নিয়ে ওই ঘরে থাকতেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন পরিচালিত মেমন মাতৃসদন হাসপাতালের হিসাব বিভাগের কর্মী সৈয়দ ও সরকারি সিটি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী রীনা। সৈয়দের ঘরের আশপাশে আরও কয়েকটি ঘরে তার ভাইরা থাকতেন। সৈয়দের বড় ভাই নূর হোসেনের ছেলের বিয়ের আয়োজন ঘিরে উৎসব চলছিল পরিবারে, এখন তাতে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
সৈয়দের বড় ভাই নূর হোসেন, মেজ ভাই মঞ্জুর আলমের পাশাপাশি তাদের প্রতিবেশী এছহাক, জাকির হোসেন, আনোয়ার, সেকান্দারের ঘরও পুড়েছে। মঞ্জুর আলম জানান, পাশের ঘরে যখন আগুন জ্বলছিল তখন ছেলেকে ঘরের বাইরে এনে এক স্বজনের হাতে দিয়েছিলেন রীনা। তারপর সবার সঙ্গে ছাদে গিয়ে পানিও ছুঁড়ছিলেন রীনা-সৈয়দ দুজনই। রীনা নিজের পরীক্ষার সনদ এবং স্বামীর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিতে পুনরায় বাসায় ঢোকে। সে ফিরে না আসায় ঢোকে সৈয়দ। আগুন পুরোপুরি নেভার পর ঘরের ভেতর খাটের ওপর দুজনকে নিথর অবস্থায় পাওয়া যায়।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ফাঁড়ি পুলিশের নায়েক মো. হামিদ জানান, সৈয়দ আহমেদ ও তার স্ত্রী রীনাকে ভোরের দিকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। ধোঁয়ায় দমবন্ধ হয়ে তাদের মৃত্যু হয়েছে।
সকালে অগ্নিকা-স্থলে বাবা-মা হারানো নাতি আদিয়াতকে কোলে নিয়ে বিলাপ করতে দেখা যায় সৈয়দের ষাটোর্ধ্ব মা নূর বানুকে। কোলে থাকা আদিয়াতও কাঁদছিল ‘মা মা’ বলে। স্বজনরা ব্যস্ত ছিল আদিয়াতের কান্না থামাতে।
দুই ভাই দুই বোনের সবার ছোট ছিল রীনা। তার বড় বোন পারুল বলেন, সাড়ে তিন বছর আগে বিয়ে হয় রীনার। আগামী জানুয়ারিতে ছিল তার মাস্টার্স পরীক্ষা। সেজন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। সৈয়দের ছোটভাই আকবর হোসেন বলেন, আগামী ২২ ডিসেম্বর আমাদের বড় ভাইয়ের ছেলের বিয়ে। এ উপলক্ষে কেনাকাটা হয়েছিল। আগুনে সব শেষ।
মাসুদ পারভেজ নামে স্থানীয় একজন বলেন, রাত ৩টার দিকে আনোয়ার হোসেনের বাসা থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। বাইরে থেকে চিৎকার শুনে দরজা খুলে বের হই। দেখি আনোয়ারের বাসার মাঝখান থেকে আগুনের ফুলকি বের হচ্ছে। সে আগুন দক্ষিণ দিকে ছড়িয়ে পড়ে।
ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা নজরুল জানান, শাহাজীপাড়ার ওই বাসায় ভোর পৌনে ৪টার দিকে আগুন লাগার খবর পান তারা। কালুরঘাট ও লামারবাজার ফায়ার স্টেশনের ৪টি গাড়ি গিয়ে সাড়ে ৪টার দিকে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনে। সূত্র : বিডিনিউজ। সম্পাদনা : হাসিবুল ফারুক চৌধুরী