গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করা জরুরি : বিএনপি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিচালনায় সংলাপের কোনো বিকল্প নেই : রাষ্ট্রপতি
রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপ খালেদা জিয়ার
নাশরাত অর্শিয়ানা চৌধুরী ও শাহানুজ্জামান টিটু: রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে সংলাপ করেছে বিএনপি। এই সংলাপ ফলপ্রসূ হবে বলে বিএনপি মনে করছে। এই জন্য রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপ তাদের মধ্যে আশা জাগিয়েছে। আগামী মাসের মধ্যেই তিনি এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবেন বলেও বিএনপি মনে করছে। রোববার বিকালে নির্বাচন কমিশন গঠন বিষয়ে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। এই সংলাপে বিএনপির প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তার সঙ্গে বিএনপির ১০ সদস্যের স্থায়ী কমিটির সদস্যরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রপতির এই সময়ে পরণে ছিলেন সাদা শার্ট, লাল টাই ও স্যুট। আর বেগম খালেদা জিয়া অফ হোয়াইট কালারের শাড়ির সঙ্গে ম্যাচ করে চাদর গায়ে জড়ান।
সংলাপের পর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনায় আমরা খুশি এবং আশাবাদী। আমাদের আশা, অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে এখন রাষ্ট্রপতি বাছাই কমিটির পদ্ধতি নির্বাচন করবেন। আমরা আশাবাদী তিনি আগামী মাসের মধ্যেই এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবেন।
বিএনপির সূত্র জানায়, বিএনপি চেয়ারপারসন আনুষ্ঠানিকভাবে লিখিত প্রস্তাব দেওয়ায় রাষ্ট্রপতি বেগম খালেদা জিয়াকে ধন্যবাদ জানান। বিএনপির তরফ থেকে রাষ্ট্রপতির কাছে তাদের কথাগুলো তুলে ধরেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা রাষ্ট্রপতির কাছে আমাদের কথাগুলো তুলে ধরেছি। তিনি বিষয়টি দেখবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। বঙ্গভবনের দরবার হলে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বঙ্গভবনে সংলাপের পর বিএনপির প্রতিনিধি দলকে নিয়ে রাষ্ট্রপতি চা পর্বে যোগ দেন। এই সময় গুড়ের সন্দেশসহ বিভিন্ন খাবার দিয়ে তাদেরকে আপ্যায়ন করা হয়। বিএনপির সঙ্গে রাষ্ট্রপতির সংলাপ নিয়ে ব্যাপক কৌতূহল ছিলো মানুষের মধ্যে। বেশ কয়েকটি টেলিভিশন বঙ্গভবনে বৈঠকের বিষয়টি সরাসরি সম্প্রচার করে। বিএনপি চেয়ারপারসন বঙ্গভবনে যাওয়ার সময়ে বিএনপির নেতা-কর্মীরা রাস্তার পাশে অনেকেই অবস্থান নেয়।
সূত্র জানায়, বিএনপি রাষ্ট্রপতির কাছে সব রাজনৈতিক দলের মতৈক্যের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠনের ওপর গুরুত্বারোপ করে। বিএনপি মনে করছে, বর্তমান রাজনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণ অভিভাবক হিসেবে রাষ্ট্রপতির উদ্যোগ ফলপ্রসূ হবে ।
কয়েকদিন আগে বিএনপিকে চিঠি দিয়ে রাষ্ট্রপতির কার্যালয় থেকে বৈঠকে বসার জন্য সময় দেওয়া হয়। এবং বিএনপির প্রতিনিধি দলের নাম চাওয়া হয়। বিএনপি রাষ্ট্রপতির সঙ্গে পূর্ব নির্ধারিত সময় অনুযায়ী বৈঠক করে খালেদা জিয়ার নির্বাচন কমিশন পুনর্ঠনের জন্য বাছাই প্রক্রিয়া, কেমন ব্যক্তিদের কমিশনার করা হবে এবং নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য কি কি করা দরকার সেই সব বিষয়ে আলোচনার জন্য সংলাপে বসে। সেখানে এই সব বিষয় তুলে ধরেছে বিএনপি।
সংলাপ শেষে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপির প্রতিনিধি দল বিকাল সাড়ে চার কিছু আগে বঙ্গভবনের ফটকে পৌঁছায়। ঠিক সাড়ে চারটার কিছু সময় আগে বিএনপির প্রতিনিধি দল বঙ্গভবনে প্রবেশ করে। দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে নীতি নির্ধারণী পর্ষদ স্থায়ী কমিটির ১০ জন সদস্য সেখানে যান। রাষ্ট্রপতি, বিএনপির সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টা বৈঠক করেন।
বিএনপির মহাসচিব জানান, নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে খালেদা জিয়া যে প্রস্তাব উপস্থাপন করেছিলেন এবং রাষ্ট্রপতির কাছে ওই প্রস্তাবের কপি এর আগে পাঠানো হয়েছিলো। রোববার রাষ্ট্রপতির কাছে সেগুলোই মূলত উপস্থাপন করা হয়। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপ অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ ও উষ্ণতম পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে গঠনমূলক ও সুন্দর প্রস্তাব উত্থাপন করায় রাষ্ট্রপতি খালেদা জিয়াকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। সংলাপে রাষ্ট্রপতি বলেন, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিচালনায় সংলাপের কোনো বিকল্প নেই।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সংলাপে সব রাজনৈতিক দলের মতৈক্যের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠনের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। এ বিষয়ে কোনো আইন তৈরি হয়নি। এ কারণে সব রাজনৈতিক দলের মতৈক্যের কোনো বিকল্প নেই। রাষ্ট্রপতিকে আমরা বাছাই কমিটি গঠন, নির্বাচন কমিশন গঠন ও আরপিও সংশোধনের বিষয়ে জানিয়েছি। বাছাই কমিটির সদস্য মন্নোনয়নের পদ্ধতিও জানানো হয়েছে। এখন রাষ্ট্রপতি এই পদ্ধতি পরীক্ষা করবেন।
বিএনপির মহাসচিব আরও বলেছেন, রাষ্ট্রপতি আজকেই (রোববার) প্রথম বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় বসলেন। রাষ্ট্রপতি বিএনপিকে আগে সংলাপে ডাকার ব্যাপারেও জানিয়েছে। বিএনপিকে রাষ্ট্রপতি এ বিষয়ে বলেছেন, যেহেতু আপনারাই প্রথম আলোচনার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন, তাই আপনাদের (বিএনপি) প্রথমেই ডেকেছি। রাষ্ট্রপতি বিএনপিকে বলেছেন, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করা জরুরি। আশা করি, সবাই এতে থাকবেন।
রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন সাংবাদিকদের সামনে বৈঠকের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে বলেন, আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে বিএনপির প্রতিনিধি দল আলোচনায় অংশ নিতে আসায় রাষ্ট্রপতি শুরুতেই তাদের ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর নির্বাচন পরিচালনার জন্য নির্বাচন কমিশনের ভূমিকাই মুখ্য। একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন ও সার্চ কমিটি গঠনের ব্যাপারে বিএনপি যেসসব প্রস্তাব পেশ করেছে সেগুলো সহায়ক হবে। সম্পাদনা: বিশ্বজিৎ দত্ত