যুদ্ধের ৪৫ বছর পরও তালিকাতে নাম আসেনি সুযোগ-সুবিধা নয় মুক্তিযুদ্ধের স্বীকৃতি চান জাহাঙ্গীর আলম
নিজস্ব প্রতিবেদক: স্বাধীনতার ৪৫ বছর পার হলেও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সরকারি স্বীকৃতি পাননি নরসিংদীর মো. জাহাঙ্গীর আলম তিতু মিয়া (৬৪)। ২০১১ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকাতেও তাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। পরে বিভিন্নভাবে তালিকাতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার চেষ্টা করেও কোনো লাভ হয়নি। তবে মৃত্যুর আগে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতিটুকু চেয়েছেন এই বীর মুক্তিযোদ্ধা।
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় নরসিংদীতে পাকবাহিনীরা বিমান থেকে বোমা নিক্ষেপ করে, ওই হামলাতে আমাদের এলাকার অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং হতাহতের ঘটনা ঘটে, যা দেখে আমরা বেশ কয়েকজন মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। এরপর ১৯৭১ সালে ভারতের পালাটানা ট্রেনিং ক্যাম্পে মেজর শফিউল্লার নেতৃত্বে ২১ দিন ট্রেনিং নিয়ে ভারতের বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধ করি। তবে বাংলাদেশের ভিতরে ১৯৭১ সালে অক্টোবরে যুদ্ধ করি।
দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ শেষে বিজয়ী হয়ে নিজ কর্মে মনোনিবেশ করেন জাহাঙ্গীর আলম। সার্টিফিকেটের পিছনে ছুটেননি তিনি। তাই আজও স্বীকৃতি মেলেনি। মুক্তিযুদ্ধ শেষ হলেও নরসিংদী জেলা সদরের কাজিরকান্দী গ্রামের মো. চাঁন মিয়া ফকিরের ছেলে মো. জাহাঙ্গীর আলম তিতু মিয়ার জীবনযুদ্ধ শেষ হয়নি। জীবিকার যুদ্ধ আজও চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। যুদ্ধ শেষে জাহাঙ্গীর আলম বরিশালে ১৯৭৩ সালে সাইক্লোন সেন্টারে চাকরিরত হন। সেখান থেকে ১৯৭৪ সালে ঢাকায় গণপূর্ত বিভাগের সহকারী কার্যকরী হিসেবে যোগদান করেন। চাকরির এক সময় বরিশাল থেকে ঢাকায় আসার পথে লঞ্চ দুর্ঘটনায় মুক্তিযুদ্ধের সব কাগজপত্র হারিয়ে ফেলেন জাহাঙ্গীর আলম। তারপর হারিয়ে যাওয়া কাগজপত্র তোলার চেষ্টা করেও কোনো কাজ হয়নি। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার পরও মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম উঠেনি জাহাঙ্গীর আলমের। জীবনের শেষ বেলায় এসে তার চাওয়া সুযোগ-সুবিধা নয়, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া।
জাহাঙ্গীর আলমের অভিযোগ, ‘দেশ স্বাধীনের ৪৫ বছর পেরিয়ে গেলেও স্বীকৃতি পাইনি। এখনো তালিকাভুক্ত করা হয়নি আমার নাম। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে (জামুকা) দীর্ঘদিন ঘোরাঘুরি করে ফিরতে হয়েছে খালি হাতে।’ তিনি বলেন, ‘৩নং সেক্টর কমান্ডার কে. এম শহিদুল্লাহর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ করি। আলোকবালি ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধকালীন সেকশন কমান্ডার মো. খোরশেদ আলম তদন্ত করে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সুপারিশ করেছেন। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।’
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘১৯৭১ সালে ৩নং সেক্টরের অধীনে ভারতের পালাটানা ট্রেনিং ক্যাম্পে প্রাইমারি ট্রেনিং গ্রহণ করি। যুদ্ধের শুরুর দিকে অসহনীয় কষ্ট সহ্য করে প্রশিক্ষণ নেই। প্রশিক্ষণ শেষে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধ করি।’ তিনি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর অনলাইনে আবেদনের সুযোগ দেয়। অনলাইনে আবেদনের সুযোগ পাওয়ার পরপরই আমি আবেদন করি। কিন্তু আবেদন করার পর এখন পর্যন্ত কোনো উত্তর পাইনি। ২০১৪ সালের ১৫ অক্টোবর জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) বরাবর একটি লিখিত আবেদন করেন জাহাঙ্গীর আলম। মন্ত্রণালয় ওই আবেদনটি পর দিন ১৬ অক্টোবর গ্রহণ করে, যার ডিজি নম্বর-১৯০৮৩৪। কিন্তু দুই বছরের বেশি সময় পার হলেও এ ব্যাপারে কোনো অগ্রগতি হয়নি। সম্পাদনা: সুমন ইসলাম