থার্টিফার্স্ট নাইটকে ঘিরে আসছে ইয়াবা
ফরিদুল মোস্তফা খান, কক্সবাজার: প্রতিবছরের ন্যায় এবছরও ইয়াবা পাচারকারী সিন্ডিকেট থার্টিফাস্ট নাইটকে সামনে রেখে মরণ নেশা ইয়াবা পাচারে মরিয়া হয়ে উঠেছে। যদিও মিয়ানমারের আরকান রাজ্যের বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে মুসলিম রোহিঙ্গাদের উপর সেদেশের সেনাবাহিনী ও পুলিশের অত্যাচার নির্যাতন চলছে। এসময় সীমান্ত পেরিয়ে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গার প্রবেশ ঘটে বাংলাদেশে। বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা সীমান্তে বৃদ্ধি পেলেও থার্টিফাস্ট নাইটকে কেন্দ্র করে অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় টেকনাফ ও উখিয়ায় ইয়াবা পাচার বেড়েছে ব্যাপক আকারে। এখানকার গডফাদাররা সর্বদা ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে তাদের পাচার বাণিজ্যও বাড়িয়ে দিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গত নভেম্বর মাসে সীমান্তে রোহিঙ্গা প্রবেশ অস্থিরতার মাঝেও টেকনাফ ও উখিয়ার বিভিন্নস্থান থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান চালিয়ে ২০ লাখেরও বেশি ইয়াবা জব্দ করেছে। যা অতীতে খুব একটা দেখা যায়নি। এগুলো পাচারের সাথে জড়িত অন্তত অর্ধশতাধিক পাচারকারিকে আটক করেছে বিজিবি ও পুলিশ বাহিনী। জব্দকৃত ইয়াবা ট্যাবলেটের মূল্য প্রায় ৬০ কোটির টাকার মত। ইয়াবা পাচার কাজে ব্যবহৃত নোয়া মাইক্রোবাস নামি দামি ব্রান্ডের প্রাইভেট কার, সিএনজি অটোরিক্সা, টমটম মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহনও জব্দ তালিকায় রয়েছে। তবে ইয়াবা পাচারের গডফাদাররা বরাবরই ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাওয়ায় সাধারণ অভিভাবক ও সচেতন লোকজন উদ্বিগ্ন।
শুধুমাত্র উখিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৫০টি ইয়াবা সিন্ডিকেট তৎপর রয়েছে মরণঘাতী এ ইয়াবা ব্যবসায়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ম্যানেজের মাধ্যমে এসব সিন্ডিকেট বেপরোয়াভাবে প্রসাশনের নাকের ডগার উপর দিয়ে ইয়াবা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। মাঝে মধ্যে সোর্সের দেওয়া তথ্যের ভিক্তিতে গুটিকয়েক ইয়াবা উদ্ধারের ঘটনা ঘটলেও ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকে সিন্ডিকেটের গড়ফাদাররা। শুধুমাত্র ইয়াবা বাহককে আটকের মাধ্যমে স্থানীয় প্রশাসন তাদের দায়িত্ব শেষ করায় এর সাথে জড়িত গড়ফাদার বা সিন্ডিকেটের ব্যাপারে কোনো তথ্য উদ্ধার করা যাচ্ছে না বলে স্থানীয় সচেতন মহলের অভিযোগ।
সূত্রে জানা গেছে, উখিয়া সীমান্তের বালুখালী, শিয়াল্লাপাড়া, বেতবুনিয়া, দরগাবিল, ডেইলপাড়া ডিগিলিয়া, বরইতলী, রহমতের বিল, ধামনখালী সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন ইয়াবার চালান এসে সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রিত নির্ধারিত স্থানে জমা হয়। পরবর্তীতে সিন্ডিকেট সদস্যরা এসব ইয়াবা সড়ক পথে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন বড় বড় পাইকারী ব্যবসায়ীদের হাতে পৌঁছে দেয়।
এদিকে উপজেলার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ বহিরাগত ছোট ছোট ঝুপড়ি ঘরে কুতুপালং ক্যাম্প পুলিশের উপস্থিতিতে চলছে মাদক বেচাকেনা। এখানে মূলত বিদেশি মদ, হেরোইন, গাঁজা, ইয়াবা ও ফেনসিডিল বেচাকেনা হয়। সোনারপাড়া, কোটবাজার ও হ্নীলা থেকে বিকালের পর থেকে সারারাত কুতুপালং এলাকায় কয়েকশ মোটরসাইকেলে আসে উঠতি বয়সের যুবকরা। ১৫টি স্পটে দিন-রাতে সমানভাবে গাঁজা, হেরোইন, ইয়াবা ও মদ বিক্রি হয়।
এ ব্যাপারে উখিয়া টেকনাফের সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল) আবদুল মালেক মিয়া বলেন, পুলিশ সবসময় তৎপর রয়েছে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের গ্রেফতারে। কিন্তু সুনির্দিষ্ট তথ্য ছাড়া ইয়াবা আটক করা কঠিন। তবুও পুলিশের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
উখিয়া থানার ওসি মো. আবুল খায়ের বলেন, অনেকের সম্পর্কে অনেক কিছু শুনি ও জানতে পারি। কিন্তু এসব পাচারকারীদের মালামাল হাতেনাতে না পেলে কিছু করার থাকে না। টেকনাফ ২ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল আবু জার আল জাহিদ জানান,নভেম্বর মাসে বিজিবি সদস্যরা প্রায় ২০ লাখ পিস ইয়াবাসহ ২৫ জন পাচারকারীকে আটক করেছে।
কক্সবাজার ৩৪ বিজিবির অধিনায়ক লে.কর্নেল ইমরান উলাহ সরকার জানান, অনুপ্রবেশ প্রতিরোধের পাশাপাশি বিজিবি সদস্যরা ইয়াবা পাচার ঠেকাতে সীমান্তে দিন-রাত পরিশ্রম করছে।