প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার সময় চেয়েছেন বিমানমন্ত্রী তিনটি রিপোর্টের সারসংক্ষেপ দিবেন জড়িতদের বিরুদ্ধে পরে মামলা
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী: প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী রাঙ্গা প্রভাতে যান্ত্রিক ত্রুটি মানুষের তৈরি। এ কারণে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশংকা ছিলো। তবে এটা দায়িত্বে অবহেলা নাকি নাশকতার ঘটনা ঘটানোর জন্য করা হয়েছিল তা তিনটি তদন্ত রিপোর্টের কোনোটিতে সুস্পস্ট করে বলা হয়নি। তবে আভাস দেওয়া হয়েছে। এই জন্য তিনটি রিপোর্টের ভিত্তিতে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। মামলায় আসামি করা হতে পারে ওই ঘটনায় ইতোমধ্যে যাদেরকে সাসপেন্ড করা হয়েছে তাদেরকে। এছাড়াও আরও বেশ কয়েকজন ওই ঘটনায় জড়িত ছিলেন বলে তদন্ত রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।
বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, আগের নয়জন ছাড়াও তদন্ত রিপোর্টে আরও কয়েকজনের জড়িত থাকার ব্যাপারে নাম এসেছে। তবে এখনও সাসপেন্ড করা হয়নি। দ্রুতই তাদেরকে সাসপেন্ড করা হতে পারে। বিমানমন্ত্রীর কাছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের তদন্ত কমিটির পূর্ণাঙ্গ তদন্ত রিপোর্ট, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের তদন্ত রিপোর্ট আর বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির রিপোর্ট জমা হয়েছে। তিনটি রিপোর্টের মধ্যে মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি ৪৫ পৃষ্ঠার একটি রিপোর্ট দিয়েছে। ওই রিপোর্টের সঙ্গে সংযুক্তি দিয়েছেন আরও ১৪০ পৃষ্ঠার। ওই সব ১৪০ পৃষ্ঠার মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন নথিপত্র। যা কিনা ঘটনাটি মনুষ্য তৈরি এর প্রমাণ রয়েছে।
বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, বিমানের রিপোর্টে সব বিষয় আসেনি। প্রথমে তারা ১১ পৃষ্ঠার একটি রিপোর্ট দিয়েছিলো। পরে আবার একটি পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট দিয়েছে। এছাড়া সিভিল এভিয়েশনের রিপোর্টে ঘটনার বিষয়গুলোই বেশি এসেছে। আর বিমান মন্ত্রণালয়ের রিপোর্টে দুর্ঘটনার মূল কারণ সহ বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়েছে।
বিমানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সূত্র জানায়, সোমবার কিংবা মঙ্গলবার মন্ত্রী বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করবেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে তিনটি রিপোর্টের সারসংক্ষেপ অবহিত করবেন। এছাড়াও তিনটি রিপোর্টের কপিও দিবেন। এই ব্যাপারে যে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন সেটাও জানাবেন। কাদেরকে আসামি করা হচ্ছে সেই বিষয়েও আলোচনা করবেন।
কবে নাগাদ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে এই ব্যাপারে জানতে চাইলে সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিমানমন্ত্রীর বৈঠকের পর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মন্ত্রী দেখা করার জন্য ইতোমধ্যে সময় চাওয়া হয়েছে। তিনি সময় দিলেই এই ব্যাপারে দ্রুত অগ্রগতি হবে। সোমবার মন্ত্রী পরিষদের বৈঠক ও মঙ্গলবার একনেকের বৈঠক রয়েছে। এর আগে পরেও প্রধানমন্ত্রী সময় দিলে মন্ত্রীর বৈঠক হতে পারে।
সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী উড়োজাহাজে কারিগরি ত্রুটির কারণে জড়িত থাকার অভিযোগে প্রথমে ছয়জন পরে আরও তিনজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে প্রধান প্রকৌশলীও রয়েছেন। এর বাইরেও আরও কয়েকজনের নাম এসেছে। ওই সব ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান তুহিন বলেন, তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মন্ত্রী এই ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের বলেছেন। তিনি বলেন, প্রত্যেকটি তদন্ত রিপোর্টে উঠে এসেছে এই দুর্ঘটনা মনুষ্য তৈরি। তবে তা অবহেলাজনিত নাকি নাশকতার ঘটনা ঘটানোর জন্য সেই ব্যাপারে স্পস্ট করে বলা হয়নি। তবে দুটি বিষয়ে আভাস দেওয়া হয়েছে। এই জন্য মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি দোষীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুপারিশ করেছে। সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আগে বরখাস্ত হওয়া নয়জনকেই মামলায় আসামি করা হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, মামলা হওয়ার আগে এই ব্যাপারে আমি বলতে চাই না। সোমবার থেকে মঙ্গলবারের মধ্যেই এই ব্যাপারে সব স্পষ্ট হয়ে যাবে।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স একটি কোম্পানি হিসাবে আট বছরের বেশি সময় ধরে কর্মকা- পরিচালনা করছে। এই কারণে বিমানের উপর মন্ত্রণালয়ের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। নিয়ন্ত্রণ না থাকার কারণে বিমান কর্তৃপক্ষকে মন্ত্রণালয় কোনো কিছু বলতে পারে না। সেই সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের কোনো নির্দেশও তারা মানে না। ২০০৭ সালে বিমানকে একটি পিএলসিতে রূপান্তরিত করা হয়। তা করা হলেও এরপর সেটাকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দেওয়ার পাশাপাশি যেসব ব্যবস্থা নেওয়া দরকার ছিলো তা হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী রাঙা প্রভাতে যান্ত্রিক ত্রুটির বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি তাদের রিপোর্টে বিষয়টি তুলে ধরেছে। সেই সঙ্গে কি কি সমস্যা হচ্ছে তাও বলেছে।
কমিটি সুপারিশ করেছে বিমানের যে লোকবল রয়েছে এর সব লোকবল এখনও পর্যন্ত কোম্পানি আইনে অনুমোদন নেই। এখন বিমানে কর্পোরেট আইন কিংবা কোম্পানি আইনি কোনোটিই পুরোপুরি বাস্তবায়িত হচ্ছে না। ফলে বিমানের আইনি কাঠামো নিয়ে জটিলতা রয়েছে। এই কারণে বিমানকে একটি আইনি কাঠামোর মধ্যে আনা দরকার। তা আনতে হলে এই ব্যাপারে আইন প্রণয়ন করতে হবে। আবার বিমানের উপর বেসামিরক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়েরও নিয়ন্ত্রণ আনা প্রয়োজন। সেই নিয়ন্ত্রণ আনার জন্য আইনে কিছু প্রয়োজনীয় সংশোধনীও আনতে হবে। সেটাও আনা প্রয়োজন। সেই সংশোধনী আনার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। সম্পাদনা: সুমন ইসলাম