অর্থনীতিতে নারী প্রবাসী শ্রমিকের অবদান বাড়ছে ২৬ বছরে বিদেশে গেছেন সাড়ে ৫ লাখ নারী
জাফর আহমদ: বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নারী প্রবাসী শ্রমিকের গুরুত্ব বেড়েছে। ১৯৯১ সালে ১৭৯ জন নারী শ্রমিক বিদেশে পাঠানোর মধ্যদিয়ে যাত্রা শুরু হয়েছিল। ২৬ বছর এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৯ হাজার শ্রমিক। ব্যুরো অব ম্যানপাওয়ার এমপ্লয়মেন্ট এন্ড ট্রেনিং (বিএমটিএ) সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯১ সাল থেকে ২০১৬ সালের ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট সাড়ে ৫ লাখ নারী শ্রমিক বিদেশে গেছে। সরকারি হিসাবে গত ৪০ বছরে দেশে রেমিটেন্স এসেছে প্রায় ১ লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা। বিপুল অংকের এই অর্থ পাঠিয়েছেন ১শ ৬১টি দেশে থাকা প্রায় ১ কোটি ৪ লাখ প্রবাসী। সর্বশেষ গত ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলতি বছরে বিদেশ গেছেন ৭ লাখ ২২ হাজার ১শ কর্মী। যার মধ্যে প্রায় ১ লাখ ৯ হাজার নারী। কেবল চট্টগ্রাম থেকেই এ বছর গেছেন প্রায় অর্ধলাখ শ্রমিক। তবে দিনে দিনে শ্রম অভিবাসীর সংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে তাদের কাজের ঝুঁকি আর প্রতারকের দৌরাত্ম্য। বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান ভিত্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রবাসী শ্রমিক। প্রবাসীদের পাঠানো অর্থে একদিকে যেমন দেশের অভ্যন্তরে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে। অন্যদিকে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার (রিজার্র্ভ) সঞ্চায়ন বেড়েছে। আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে এই সঞ্চায়ন বড় ভূমিকা ও বিদেশে বাংলাদেশে অর্থনৈতিক সক্ষমতার প্রমাণ করছে। ২০১৬ সালেই প্রসাসীরা ১ হাজার ৪৯৩ কোটি মার্নি ডলার পঠিয়েছে।
বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতিতে অভিবাসী নারী-পুরুষ উভয়ের অবদান রয়েছে। বিশেষ করে গত কয়েক বছরে জাতীয় অর্থনীতিতে পুরুষের তুলনায় নারী অভিবাসীদের অবদান বেশি। ২০১৪ সালে ৭৬ হাজার সাত জন নারী শ্রমিক বিদেশে গিয়েছে যা সে বছরের মোট প্রবাসী শ্রমিকের ১৮ শতাংশ। ২০১৪ সালে বাংলাদেশ থেকে মোট জনশক্তি রপ্তানি হয়েছে চার লাখ ২৫ হাজার ছয়শ ৮৪ জন যা থেকে মোট রেমিটেন্স এসেছে ১৪ হাজার নয়শ ৪২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। সে হিসেবে নারী শ্রমিকের আয় প্রায় দুই হাজার ছয়শ ৮৯ মার্কিন ডলার। এখনও আলাদাভাবে প্রবাসী নারীদের রেমিটেন্সের হিসেব রাখা হয় না। তবে যেহেতু প্রতিবছরই প্রবাসী নারী শ্রমিকের সংখ্যা বাড়ছে সেহেতু তাদের পাঠানো রেমিটেন্সের হিসাব আলাদাভাবে রাখা প্রয়োজন। নারী অভিবাসীরা সাধারণত হাউজকিপার (গৃহকর্মী), গার্মেন্টসকর্মী, বেবি সিটার, কেয়ার গিভার, ডে-কেয়ার কর্মী, নার্স ও বিউটিশিয়ান পেশায় বিদেশে যাচ্ছে। এ সব কাজের তুলনায় আরও দক্ষ পেশায় বিদেশে যেতে পারলে তাদের আয় আরও বাড়বে।
বর্তমানে বিশ্বের ১৬০টি দেশে প্রায় ৯৫ লাখ বাংলাদেশি শ্রমিক বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত। এদের মধ্যে নারী শ্রমিকদের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত ছয় বছরে নারীর বিদেশ গমনের হার প্রায় ছয় গুণ বেড়েছে। সরকারের জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মতে, ২০১৩ সালে যেখানে ৫৬ হাজার চারশ জন নারী কাজের উদ্দেশ্যে বিদেশে গেছে, সেখানে ২০১৪ সালে গেছে ৭৬ হাজার সাত জন। ২০১৫ সালে এ হার আরও বাড়ছে। বর্তমানে নারীদের সরকারিভাবে বিদেশে যাওয়ার খরচ তুলনামূলক কম হওয়ায় এটা সম্ভব হয়েছে; সরকার বিদেশে নারী শ্রমিক প্রেরণের ব্যাপারে অনেক বেশি আন্তরিক। নারী শ্রমিকরা বিদেশে যাওয়ার জন্য দেশের ১৪টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ নিতে পারছে। সম্পাদনা:শারমিন আজাদ