পাকিস্তানি আমলারা বর্ণবাদী ছিল : পাকিস্তান ডিফেন্স ফোরাম
অনির্বাণ বডুয়া: বাংলাদেশের বিজয়ের ৪৫তম বার্ষিকীতে পরাজিত পক্ষ পাকিস্তানের ডিফেন্সের ওয়েবসাইটের পাকিস্তান ডিফেন্স ফোরামে একটি পোস্ট করা হয়। ‘দ্য ডে উই লস্ট ইস্ট পাকিস্তান’ শিরোনামের পোস্টটিতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ‘উভয় পক্ষের’ কয়েক মিলিয়ন মানুষ মারা গেছেন বলে উল্লেখ করা হয়। এবং সমালোচনা হয় ওই সময়ে দেশটির সাংবাদিকতা নিয়েও। পোস্টে বলা হয়Ñ ওই সময়ে কী ঘটেছিল তা এখনো জানে না পাকিস্তানের জনগণ। সেই সঙ্গে একটি দুনিয়া নিউজ নামে একটি প্রতিবেদনের ভিডিওজুড়ে দেওয়া হয়েছে পোস্টটির সঙ্গে যেটি ১৯৭১ সালের উপর একটি প্রতিবেদন।
পোস্টে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে ‘ভারতের ষড়যন্ত্র’ বলে উল্লেখ করা হলেও বলা হয় এটি পাকিস্তানের ব্যর্থতা ছিল। দেশটি যে আজও ব্যর্থ রাষ্ট্র তা বলার জন্যই এই ঘটনার উল্লেখ করা হয়। ২০১৪ সালে পাকিস্তানের পেশাওয়ারে অবস্থিত আর্মি পাবলিক স্কুলে (এপিএস) তালেবানদের হামলায় ১৪১ জন শিশু মারা যায়। ঘটনাটির উল্লেখ করে পোস্টে বলা হয় ‘আমরা (পাকিস্তান) এখনো ইতিহাস থেকে কিছুই শিখিনি’।
পোস্টে ১৯৭১ সালের পাকিস্তানি ব্যুরোক্রেটদের বর্ণবাদী বলা হয়। পোস্টের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া ভিডিওতেও স্বীকার করা হয় বাংলাদেশের (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) প্রতি পাকিস্তানের (তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তান) বৈষম্য ছিল। বাংলাদেশের জনসংখ্যা বেশি হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশের প্রতি বাজেট ছিল স্বল্প। ভিডিওতে প্রতিবেদক বলেন, মুক্তিযুদ্ধে পরাজয় নিয়েও মারাত্মকভাবে অন্ধকারে রাখা হয় পাকিস্তানের জনগণকে। আত্মসমর্পণের দিনেও দেশটির পত্রিকায় বিশাল বিশাল শিরোনাম ছাপা হয় ‘এখনো যুদ্ধ শেষ হয়নি’ এমন শিরোনামে।
তবে ভিডিও প্রতিবেদন ও পোস্টে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে প্রচলিত মিথ্যাচার করতেও ভোলেনি পাকিস্তান সেনাবাহিনী। একদিকে তারা পরাজয়কে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জন্য অবমাননাকর বলছে। অপরদিকে তারা পরাজয়ের জন্য ভারতকে দায়ী করছে। মুক্তিবাহিনীর তরফ থেকে প্রথম পাকিস্তানপন্থি মানুষদের হত্যা করা হয়েছে বলেও মিথ্যাচার করা হয়। যদিও ইতিহাসের প্রতিষ্ঠিত সত্য ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি বাহিনী বাংলাদেশের নিরীহ নিরস্ত্র মানুষের উপর হত্যাযজ্ঞ চালায়।
ভিডিও প্রতিবেদনে বলা হয়, মাতৃভাষা আন্দোলনের পর থেকেই বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে অসন্তোষ বাড়তে থাকে। এরপর একের পর এক সামরিক শাসন বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে ব্যবধানকে তীব্র করে। যদিও এর মধ্যেও পাকিস্তানিসুলভ কথা বলতেও ছাড়েনি প্রতিবেদক। মাহীন ওসমানী নামে ওই প্রতিবেদক বলেন, ভারতই নাকি বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে বিদ্বেষের বীজ বপন করে। সাড়ে ৯ মিনিটের ওই প্রতিবেদনের শেষাংশে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নানান প্রকারের মিথ্যাচার করা হয়। প্রতিবেদনে দেখা যায়Ñ অপারেশন সার্চলাইট নিয়ে একজন সামরিক কর্মকর্তা অপরজনের উপর দোষ দিচ্ছে।
এদিকে একই দিনে পাকিস্তান ডিফেন্সের ফেসবুক পাতা থেকে একটি পোস্ট করা হয় যা পুরোপুরিভাবেই মিথ্যাচার ও অপপ্রচার দিয়ে ঠাসা। যেটি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে সোস্যাল মিডিয়ায়। এমন পোস্টকে প্রোপাগা-া বলেই আখ্যা দিয়েছে বাংলাদেশের অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টরা। সেই সঙ্গে দাবি উঠেছে পাকিস্তানের সঙ্গে সব কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করারও।
রাজেশ পল নামে একজন লিখেছেন, ‘আমাদের বিজয় দিবসে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম নিয়ে পাকিস্তান ডিফেন্স পেজের নির্লজ্জ মিথ্যাচার আর আক্রমণাত্মক প্রপাগা-া অনেকেই দেখেছেন।’
ফেসবুক পেজ থেকে শেয়ার করা ভিডিওতে স্পষ্টভাবে নিজামী ও সাঈদীর নাম উল্লেখ করা হয়ছে। যেটি আসলে তারা যে প্রকৃতই পাকিস্তানের দোসর ছিল তার প্রমাণ করে বলে মনে করেন ফেসবুকাররা।
শেরিফ আল শায়ার নামে একজন লিখেছেন, ‘পাকিস্তান ডিফেন্স নামে এক ফেসবুক গ্রুপে একটা ভিডিও আপলোড হয়েছে। এসব… শেয়ার করে ভিউ বাড়ানোর দরকার মনে করছি না। তবে এই ভিডিওর মাধ্যমে তারা আবার প্রমাণ করল গোলাম আযম-নিজামীরা তাদেরই লোক ছিল।’ এফএ। সম্পাদনা: হাসিবুল ফারুক চৌধুরী